পুলিশের ছুটি বাতিল ও থানাগুলোকে কুইক রেসপন্স টিম গঠনের নির্দেশ

fec-image

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিটের সদস্যদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আগামী ২২ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা বহাল থাকবে। এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে দেশের প্রতিটি থানায় কুইক রেসপন্স টিম গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ সদর দফতরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন্স) আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আসলে ছুটি বাতিল করা হয়নি। যেহেতু জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত বড় একটি অনুষ্ঠান, তাই নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সদস্যদের ছুটি নেওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তবে কারও জরুরি বিষয় থাকলে সেখানে ভিন্নতা থাকবে।’ পুলিশ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কোনও হুমকি কিংবা আশঙ্কার খবর নেই। তারপরও নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রত্যেক থানায় একটি করে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করার বিষয়ে আইজি স্যারের নির্দেশনা রয়েছে। আমরা সার্বিক বিষয়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছি।’

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (হেডকোয়ার্টার্স) মিয়া মাসুদ করিমের সই করা একটি নির্দেশনায় বলা হয়েছে-‘আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে নির্বাচনকালীন ফোর্স মোতায়েন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত সব পুলিশ বা নন-পুলিশ সদস্যরা আগামী ২২ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কর্মস্থলে হাজির থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’

এদিকে সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরের অপারেশন্স শাখা থেকে প্রাক-নির্বাচনি সার্বিক আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত পৃথক আরেক নির্দেশনায় নির্বাচনি অপরাধ দমন, কিংবা তাৎক্ষণিক উদ্ভূত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিটি থানায় কুইক রেসপন্স ফোর্স বা বিশেষ টিম গঠন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের অপারেশন্স শাখার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী অতিরিক্ত ডিআইজি নাসিয়ান ওয়াজেদের সই করা ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে—‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নিরাপত্তা ঝুঁকি পর্যালোচনা করে নিরাপত্তা পরিকল্পনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিটি থানা এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্ট্যাটিক, মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন রাখা ও সার্বক্ষণিক স্ট্যান্ডবাই ফোর্স প্রস্তুত রাখতে হবে। নির্বাচনে সম্ভাব্য বিঘ্ন সৃষ্টিকারী ও অবৈধ অস্ত্রধারী গ্রেফতার, মুলতবি গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল, পলাতক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার অভিযান জোরদার করতে হবে।’

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ‘প্রতিটি থানা এলাকায় কৌশলগত স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন ও পুলিশের টহল জোরদার করা, কৌশলগত স্থানে মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশ এবং র‌্যাবের মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত করা, নির্বাচনপূর্ব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বা বহিরাগত প্রভাবশালী এবং অবৈধ প্রভাব বিস্তারকারীদের দমনের লক্ষ্যে—তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে গোয়েন্দাগিরিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও সংগঠন কর্তৃক নির্বাচনি প্রচার ও সভা-সমাবেশে প্রতিদ্বন্দ্বী দল বা প্রার্থী কর্তৃক হামলা, সহিংসতা প্রতিরোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, নির্বাচন কমিশন থেকে জারিকৃত পরিপত্র, নির্দেশনা এবং প্রাসঙ্গিক আইন, বিধিমালা ও বিধি অনুযায়ী মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সাবেক মন্ত্রী, শীর্ষস্থানীয় নেতা ও আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

নির্দেশনায় বলা হয়, ‘বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থান (বিদেশি নাগরিকদের বসবাসের এলাকা, কূটনৈতিক স্থাপনা ও কেবিআই), জনসমাগমের (সিনেমা হল, বিপণি বিতান, আবাসিক হোটেল বা রেস্টুরেন্ট, বিভিন্ন টার্মিনাল) স্থানে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডরোধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা, মেট্রোপলিটন এলাকা ও এর আশপাশের বস্তি, মেস, হোটেলসহ সন্ত্রাসীদের সম্ভাব্য অবস্থানগুলোতে তল্লাশি ও অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা, মহাসড়কে ও মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ঊর্ধ্বতন বা দায়িত্বশীল অফিসারের নেতৃত্বে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক সন্দেহভাজন যানবাহনে তল্লাশি ও অভিযান পরিচালনা করা, রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি ও মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনাপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, যেসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আগের নজির রয়েছে, সেসব এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করে আগাম পরিস্থিতি পর্যালোচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় সতর্কতা এবং নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, সালফার এবং বিস্ফোরক দ্রব্যাদির চিহ্নিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে বোমা বা বিস্ফোরক প্রস্তুতের জন্য সালফারের ব্যবহার রোধকল্পে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

পুলিশ সদর দফতরের অপারেশন্স শাখার নির্দেশনায় বলা আরও হয়েছে, ‘পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক দল, গ্রুপ, জঙ্গি সংগঠন বা গোষ্ঠী কর্তৃক সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি রোধকল্পে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, পার্বত্য এলাকা, চরাঞ্চল, হাওর অঞ্চল, দ্বীপাঞ্চলসহ দুর্গম ও যোগাযোগ কষ্টসাধ্য—এমন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা, শিল্পাঞ্চলের বিশেষ করে গার্মেন্টস অধ্যুষিত শিল্প এলাকার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি রোধে প্রয়োজনীয় কর্মকৌশল এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নৌপথে লঞ্চ-নৌযান চলাচল, মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ সব ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে নিরাপত্তা ও নিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ট্রেন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং রেলপথে সব ধরনের নাশকতা (ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, রেললাইনে অগ্নিসংযোগ, স্লিপারের ক্ষতিসাধন, রেললাইন উপড়ে ফেলা, ফিশপ্লেট খুলে ফেলা) রোধকল্পে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন