মেরিন ড্রাইভ সড়কে চাঞ্চল্যকর টমটম চালক রুবেল হত্যার আসামি আটক

fec-image

টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কে চাঞ্চল্যকর টমটম চালক রুবেল মার্ডার মামলার আসামি মাস্টার মাইন্ড হাদিসুর রহমান সাগরকে গ্রেফতার করেছে মডেল থানা পুলিশ। হত্যার কথা স্বীকার করে সে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো উসমান গনি ৭ মে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় অজ্ঞাত ব্যক্তিগণের পরস্পর যোগসাজশে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে টমটম চালক রুবেলকে হত্যা করে। হত্যার পর লাশ ঘটনাস্থলে রেখে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সংবাদ পেয়ে টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে মর্গে প্রেরণ করে।

এরপর হতে ওই হত্যাকাণ্ডের রহস্য ও জড়িতদের আটকের মিশন শুরু করে পুলিশ। দীর্ঘ ৩০ দিন অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডটির মূল রহস্য উদ্‌ঘাটনসহ চাঞ্চল্যকর টমটম চালক রুবেল হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান মাস্টার মাইন্ড হাদিসুর রহমান সাগর (২২)কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

ওসি আরও জানান, ঘটনার দিন টমটম চালক রুবেলকে শাপলা চত্বর থেকে মূল আসামি হাদিসুর রহমান সোহাগ নেশা করার জন্য মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে মিঠাপানির ছড়া এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে উভয়েই মাদকদ্রব্য (গাঁজা) সেবন করে। রুবেল অতিরিক্ত নেশাগ্রস্ত হলে তার সাথে থাকা হাদিসুর রহমান সাগর ছুরিকাঘাতে টমটম চালক রুবেলকে হত্যা করে লাশ রেখে পালিয়ে যায়।

যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত : হত্যাকাণ্ডটি ছিল অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর। ভিকটিম টমটম চালক রুবেল এবং মূল আসামি হাদিসুর রহমান সাগর পরস্পর বন্ধু। ঘটনার দিন ইফতারের পর দুই বন্ধু মাদকদ্রব্য (গাঁজা) সেবন করার জন্য মেরিন ড্রাইভে যায়। মেরিন ড্রাইভে অবস্থিত পেট্রোল পাম্প এর সামনে টমটমটি দাঁড় করিয়ে সমুদ্রের বিচে নামে। সেখানে উভয়ে মাদকদ্রব্য (গাঁজা) সেবন করে। তারা সেখানে প্রায়ই ৩০ মিনিট ছিল। পরে তারা সিএনজি পাম্পের সামনে এসে মূল আসামি হাদিসুর রহমান সাগর টমটম এর ড্রাইভিং সিটে বসে এবং ভিকটিম রুবেল ড্রাইভার এর পাশের সিটে বসে। তারা মিঠা পানির ছড়ার দিকে যায়। ভিকটিম রুবেল অটো চালাতে চাইলে আসামি তাকে বাধা দেয় এবং বলে “তুই বেশি নেশাগ্রস্ত, আমি টমটম চালাই”। এই নিয়ে দুইজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। ধস্তাধস্তির সময় ভিকটিম রুবেলের নিকট থাকা গাঁজা কাটার ছুরিটি হাদিসুর রহমান সাগর নিয়ে নেয় এবং রুবেলের গলায় ঢুকিয়ে দিয়ে অটো থেকে লাফ দিয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। অটো এবং ভিকটিম রুবেল অটোসহ রাস্তার খাদে পড়ে যায়।এরপর ভিকটিম রুবেল গলা থেকে চুরিটি বের করে হাদিসুর রহমান সাগরকে মারতে গেলে হাদিসুর রহমান সাগর ছুরিটি কেড়ে নিয়ে ভিকটিম রুবেল এর মাথার পিছনে আঘাত করে। রুবেল মাটিতে পড়ে গেলে হাদিসুর রহমান সাগর পালিয়ে যায়।

হত্যাকাণ্ডের এমন বর্ণনা দিয়ে আটক হাদিসুর রহমান জড়িত মর্মে বিজ্ঞ আদালতে তার দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

এই তথ্যের ভিত্তিতে পরে তার ফেলে যাওয়া তার ব্যবহৃত পায়ের স্যান্ডেলসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করেন। উল্লিখিত স্যান্ডেল স্থানীয় সোর্সের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর পরিচয় শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মূল আসামিকে কক্সবাজার সদর মডেল থানাধীন পিএমখালী থেকে গ্রেফতার করা হয়।

উল্লেখ্য, এই হত্যাকাণ্ডটি ছিল ক্লেশ। টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) উসমান গনি বিষয়টি তার চৌকস পুলিশ টিম দ্বারা আন্তরিকভাবে তদন্ত করে হত্যাকারী হাদিসুর রহমান’কে আটক করতে সক্ষম হয়।

আরো উল্লেখ্য যে, গত ৩ মার্চ অপর টমটম চালক মোস্তাক মিয়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করে জড়িত ৬ জনকে আটক করতে সক্ষম হয় মডেল থানা পুলিশ। দ্রুত সময়ে দুই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন ও জড়িতদের আটক করতে পারায় ওসির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন টেকনাফ বাসী।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আটক, আসামি, হত্যা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন