“দ্রুত অনুদান না পেলে এই বছরেই অনিবার্যভাবে খাদ্য সহায়তার পরিমাণে এমন আরও কাটছাঁট হতে পারে”

রোহিঙ্গাদের বরাদ্দকৃত খাদ্য সহায়তার পরিমাণ কমাচ্ছে ডব্লিউএফপি

fec-image

মানবিক সহায়তা দানকারী সংস্থাগুলোর সমবেত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ৪৫ শতাংশ রোহিঙ্গা পরিবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার খেতে পারে না, যার ফলে ক্যাম্পগুলোতে ব্যাপকভাবে অপুষ্টি লক্ষণীয়।

প্রথমবারের মতো ডব্লিউএফপি রোহিঙ্গা সংকটের প্রায় ছয় বছরের মাথায় বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের জন্য দেওয়া জীবন রক্ষাকারী সহায়তার পরিমাণ কমিয়ে আনতে বাধ্য হচ্ছে।

আগামী ১ মার্চ থেকে অনুদানের পরিমাণে ১২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার কম থাকার কারণে জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে (ডব্লিউএফপি) প্রত্যেক রোহিঙ্গার জন্য দেওয়া খাদ্য সহায়তা ভাউচারের পরিমাণ ১২ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ১০ মার্কিন ডলারে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সম্প্রতি জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ডব্লিউএফপির কক্সবাজার কার্যালয়ের কমিউনিকেশন অ্যাসিসট্যান্স অতনু শর্মা মন্টুর দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্কালপেল্লি বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও মানবিক সহায়তা দানকারী গোষ্ঠীর জন্য এটি একটি বড় ধরনের বিপর্যয়। অন্যান্য অতি জরুরি সেবাগুলো সংকুচিত হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য সহায়তায় এই পরিবর্তনের (এমনকি তা মাত্র ২ ডলার সমপরিমাণ হলেও) প্রভাব হবে মারাত্মক।’

ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ খুবই সীমিত, ঝুঁকির মুখে থাকা অন্যান্য জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে যা তেমনটি নয়। এই জনগোষ্ঠী তাদের খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি প্রয়োজন মেটাতে মানবিক সহায়তার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।

২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুরা পালিয়ে আসা শুরু করার সময় থেকে দাতাগোষ্ঠী ও অংশীদার সংস্থাগুলোর সহায়তায় তাদের জন্য খাদ্য ও পুষ্টিসহ অন্যান্য অতি জরুরি সহায়তা দিয়ে আসছে ডব্লিউএফপি।

বর্তমানে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যেককেই ভাউচারের মাধ্যমে প্রতিমাসে ১২ মার্কিন ডলার সমমূল্যের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, যা ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে অবস্থিত ডব্লিউএফপির আউটলেট থেকে ৪০টিরও বেশি শুকনা ও তরতাজা খাবার বেছে নিতে পারে।

মানবিক সহায়তা দানকারী সংস্থাগুলোর সমবেত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ৪৫ শতাংশ রোহিঙ্গা পরিবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার খেতে পারে না, যার ফলে ক্যাম্পগুলোতে ব্যাপকভাবে অপুষ্টি লক্ষণীয়।

শিশুদের ক্ষেত্রে গ্লোবাল একিউট ম্যালনিউট্রিশনের হার ১২ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত তথ্য অনুযায়ী ১৫ শতাংশের কম হলেও এই হারকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে ধরা হয়। প্রায় ৪০ শতাংশের মতো শিশুর সঠিক শারীরিক বিকাশ ও বৃদ্ধি হয় না, আর গর্ভবতী ও সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন—এমন নারীদের ৪০ শতাংশই রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। আর এই সবই খাদ্য সহায়তার পরিমাণে কমানোর আগেকার অবস্থা।

দ্রুত অনুদান না পেলে এই বছরেই অনিবার্যভাবে খাদ্য সহায়তার পরিমাণে এমন আরও কাটছাঁট হতে পারে।

স্কালপেল্লি বলেন, ‘প্রতিবার খাদ্য সহায়তা হ্রাসের সঙ্গে অনিবার্যভাবে অপুষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পরিবারগুলো অধিকতরভাবে বিপজ্জনক পথ বেছে নিতে থাকবে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এর সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়বে নারী, কিশোরী ও শিশুদের ওপর। গুরুত্বপূর্ণ যে মানবিক সহায়তার ওপর তারা নির্ভরশীল, তা অক্ষুণ্ন রাখতে আমাদের অবশ্যই সাধ্যের সবটুকু করে যেতে হবে।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন