রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বন্ধু রাষ্ট্রের সহযোগিতা দরকার

fec-image

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বন্ধু রাষ্ট্রের সহযোগিতা দরকার। না হলে মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশ সংকটে পড়বে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মাদক, অস্ত্র চোরাচালানসহ সীমান্তে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে।

বুধবার (২০ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। ‘রোহিঙ্গা ও নার্কো টেরোরিজম’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে ডিপ্লোমেটস পাবলিকেশন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদক বলতে ইয়াবা বাংলাদেশে তৈরি হয় না। কিন্তু এর চোরাচালান হচ্ছে বাংলাদেশে। ইয়াবা তৈরি হচ্ছে মিয়ানমারে। অথচ এর ভিকটিম বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের বাহক ও চোরাচালানকারী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মাদকের হাব হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গা এলাকাকে। কক্সবাজার এলাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেবার পর ২০১৭ সাল থেকে কিভাবে কি পরিমাণ মাদকের চোরাচালান বেড়েছে তার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি।

‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে নানা আঙ্গিকে বাড়তি চাপ ও ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশ। এরইমধ্যে মাদক চোরাচালান, মানবপাচার, সীমান্ত নিরাপত্তা। মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের ভার বহন করতে গিয়ে এই চাপ নিতে হচ্ছে। কোনো ধরনের মাদক উৎপাদন না করেও বাংলাদেশ এর ভুক্তভোগী। তাই দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা চান তিনি।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সীমান্তে মাদক চোরাচালান ও অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। রোহিঙ্গা এলাকায় বেড়েছে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের সংখ্যাও। সিনথেটিক ড্রাগস আসছে সীমান্ত দিয়ে। যেখানে বাহক হিসেবে কাজ করছে রোহিঙ্গারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে অস্ত্র চোরাচালান। চোরাচালান ও মানবপাচারের ঘটনা ঘটছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো থেকে। পুলিশ ছাড়াও সেখানে নিয়োজিত আনসার, বিজিবি, এপিবিএন ও সেনাবাহিনী অপরাধ দমন ও অপরাধীদের ধরতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের ফলে রোহিঙ্গা মানবপাচারের ঘটনা কমবে উল্লেখ করে সচিব বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রায় ৫০ শতাংশই শিশু। যাদের মধ্যে অনেকে সন্ত্রাসবাদ, মাদক চোরাচালানে জড়াচ্ছে। মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে ম্যাকানিজমে ঘাটতি আছে। আসিয়ানকে কার্যকর করা যেতে পারে। আসিয়ানে রোহিঙ্গা সমস্যা তুলে ধরতে হবে।

মিয়ানমারই রোহিঙ্গা ক্রাইসিস তৈরি করেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তাদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছিল এর সমাধান করা। আমরা প্রত্যাশা করবো মিয়ানমার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে।

এখন আর আগের মতো নাফ নদী দিয়ে মিয়ানমার থেকে মাদকের চোরাচালান হচ্ছে না, কমে গেছে। কিন্তু আসছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির মতো দুর্গম সীমান্ত দিয়ে অস্ত্রসহ ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের। সেখানে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবার চালান আসছে বাংলাদেশে।

কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম বান্দরবান সীমান্তে বিজিবি কোস্ট গার্ডের মতো বাহিনী থাকতেও কি করে রোহিঙ্গাদের ইয়াবা কারবারে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি দুর্গম এলাকা। সেখানে এক কিলোমিটার দুর্গম পথ পাড়ি দিতে ৬ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। সেখানে বিজিবিসহ অন্যান্য বর্ডার ফোর্সের সদস্যদের এক ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পে যেতে সময় লাগে৷ এই সুযোগে কারবারিরা চলে আসে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইয়াবা তৈরি হয় না, রোহিঙ্গারাও ইয়াবা তৈরি করে না। কিন্তু ইয়াবা আসে সীমান্ত দিয়ে। এর ভিকটিম হচ্ছে বাংলাদেশ। তাই আমরা সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে আমরা নিজেকে বিজিবিকে হেলিকপ্টার দিয়েছি।

অনুষ্ঠানে কিনোট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। এ সময় ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন, সৌদি অ্যাম্বাসেডর, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখওয়াত হোসেন, আর্ম ফোর্সেস ডিভিশনের সাবেক প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল (অব) মাহফুজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন