লক্ষ্মীছড়িতে গুচ্ছ গ্রামবাসীর সঞ্চয় আমানত ভেঙ্গে ফেলার পাঁয়তারা

মোবারক হোসেন, লক্ষ্মীছড়ি:

খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি গুচ্ছগ্রামবাসীর একমাত্র সঞ্চয় সমিতি আবারো ভেঙ্গে ফেলার পাঁয়তারা চলছে বলে জানা গেছে। প্রায় বছর আগে এই সঞ্চয় সমিতি ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগ নিলেও জেলা প্রশাসকের নানা শর্তের কারণে তারা সফল হতে পারে নি। আবারো শুরু হয়েছে এই সমিতি ভেঙ্গে ফেলার  প্রক্রিয়া।

সম্প্রতি লক্ষ্মীছড়ি গুচ্ছ গ্রামে রেশন কার্ডধারিদের নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মোট রেশন কার্ডধারির মধ্যে তিন ভাগের এক অংশ লোকের উপস্থিতির মধ্যে অধিকাংশরাই এই মুহুর্তে সঞ্চয় সমিতি ভাঙতে নারাজ। সমিতিটি ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোক্তারা বলেন ভিন্ন কথা। বিকল্প সমিতি প্রতিষ্ঠা করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন। কিন্ত সাধারণ মানুষের অভিমত জনপ্রতি যে অর্থ জমা হয়েছে তা যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো না যায় তাহলে ক্ষতির সম্মুখিন হওয়ার আশংকা করছেন অনেকেই। যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে গুচ্ছগ্রামবাসীর এই সঞ্চয় আমানত জমা হচ্ছে তা আলোর মুখ দেখার আগেই অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে যাবে।

জানা যায়, খাগড়াছড়ি জেলার ৮টি উপজেলায় ৮৪টি গুচ্ছ গ্রামের ২৬হাজার ২০জন রেশন কার্ডধারী রয়েছে। তার মধ্যে লক্ষ্মীছড়ি গুচ্ছ গ্রামে রয়েছে ১’শ ৩৬টি রেশন কার্ড। সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে প্রতিটি রেশন কার্ডধারী তাদের রেশন উত্তোলনের সময় ৫০টাকা হারে স্বেচ্ছায় সঞ্চয় আমানত হিসেবে জমা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এখনো পর্যন্ত ধারাবহিকভাবে জমা করে আসছে রেশন কার্ডধারীরা। একটি সঞ্চয় জমার পাশ বই দেখে জানা গেছে ওই কার্ডধারীর সঞ্চয় জমা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫হাজার টাকা। উক্ত হিসেব মতে পুরো জেলায় এ পর্যন্ত সঞ্চয়ের পরিমাণ প্রায় ১৩কোটি টাকা। এছাড়াও ব্যাংকের লভ্যাংশ তো রয়েছে। তৎকালীন জেলা প্রশাসকের পরামর্শ ও নিদের্শনায় প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প চেয়ারম্যানের যৌথ স্বাক্ষরে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। রেশন বিতরণের সময় প্রকল্প চেয়ারম্যানগন উক্ত টাকা উত্তোলন করে যথারীতি ব্যাংকে জমা করে আসছে।

তবে কোথাও কোথাও প্রকল্প চেয়ারম্যানরা অনিয়ম করলেও প্রশাসনের কঠর নজরদারিতে এ অনিয়ম দুর করা সম্ভব হয়েছে। প্রায় বছর আগে সমিতিটি ভাঙ্গার জন্য কেউ কেউ তোড় জোড় শুরু করলেও বেশি দুর এগুতে পারেনি। গুচ্ছ গ্রামবাসীর একমাত্র সঞ্চয় সমিতিটি আবারো ভেঙ্গে ফেলার পাঁয়তারা চলছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে জেলা প্রশাসকের বরাবরে সমিতিটি ভাঙ্গার জন্য আবেদনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন কোন কোন প্রকল্প চেয়ারম্যান।

সাধারণ গুচ্ছগ্রামবাসীদের চোখে ধুলো দিয়ে এক শ্রেণীর মাতাব্বররা এই সমিতিটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য অতি উৎসাহী বলে জানা গেছে। তবে অভাব অনটনে থাকা গুচ্ছগ্রাম বাসীর কেউ কেউ অবশ্য  না বুঝে আবেদনে স্বাক্ষর করছেন। কার ইঙ্গিতে প্রায় ২৬হাজার রেশন কার্ডধারীর সঞ্চয় আমানত সমিতিটি ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে এই প্রশ্ন সচেতন মহলের। আর সমিতি ভেঙ্গে ফেলা হলে সঠিক ভাবে বিতরণ হবে কিনা, যার সঞ্চয় তার পকেটে যাবে কিনা এই নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

অনেকের মতে, পার্বত্য এলাকায় গুচ্ছগ্রামবাসীর এটি একটি সম্পদ, যে কোন দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে এটি উন্নয়ন মুখী কাজে লাগতে পারে। ৮৬সালের দিকে বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে গুচ্ছগ্রামে আসা বসতি স্থাপনকারি সহায় সম্বলহীন মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ কোন কারণ ছাড়াই এই মুর্হুতে ফেঙ্গে ফেলা কতটুকু সমূচীন হবে তা নিয়ে ভেবে দেখা দরকার।   

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন