শিক্ষক ও ছাত্রদের দিয়ে পরের জমি দখল করেন মাদরাসা পরিচালক

fec-image

কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার অন্যতম ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পোকখালী এমদাদিয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসার বর্তমান পরিচালক মৌলভী আজিজুদ্দিন ও তাঁর নিকটাত্মীয়রা হয়ে উঠেছেন ‘ভূমিদস্যু’। মৌলভী আজিজুদ্দিন, তাঁর ভাই আশরফ আলী, ভগ্নিপতি নুরুল কাদের ও খালু নুরুল আমিন মিলে একটি চক্র ‘মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের লাঠিয়াল’ হিসেবে ব্যবহার করে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতের আঁধারে প্রতিবেশী মরহুম হাফেজ ছৈয়দ নূরের মালিকানাধীন ১২ শতক জমি জবরদখল করতে গভীর রাতে আরসিসি পিলার ও নেট ব্যবহার করে ঘেরা দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন। বর্তমানেও লাঠি-সোটা নিয়ে মাদ্রাসার ছাত্রদের প্রস্তুত করে রেখেছেন ওই চক্র।

সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এমনটাই অভিযোগ তুলেছেন মরহুম হাফেজ ছৈয়দ নূরের ছেলে হাফেজ মুদ্দাচ্ছির। পরিবারের একমাত্র সম্বল ১২ শতক জমিটি উদ্ধারে সরকারের আইনশৃংখলা বাহিনীর সহায়তা কামনা করেছেন তিনি।

একই সাথে তিনি আদালতের আদেশ অমান্যকারি মৌলভী আজিজুদ্দিন, ভাই আশরফ আলী, ভগ্নিপতি নুরুল কাদের ও খালু নুরুল আমিন গংকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন হাফেজ মুদ্দাচ্ছির।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে হাফেজ মুদ্দাচ্ছির দাবি করেন, তার বাবা হাফেজ ছৈয়দ নূরের রেখে যাওয়া পোকখালী মৌজার ৫০১ নাম্বার খতিয়ানের বিএস ৫২৮৪ দাগের ১২ শতক জমির উপর লোলুপদৃষ্টি পড়ে ওই ‘ভূমিদস্যূ’ চক্রটির। তারা জমিটি আত্মসাত করতে ছলে, বলে, কৌশলে দখল করার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিল।

তার মতে, মৌলভী আজিজুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন চক্রটি ওই জমিটি তাদের ছেড়ে দেয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। অন্যথায় তাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়ে যাচ্ছিলেন চক্রটি।

হাফেজ মুদ্দাচ্ছির বলেন, আমরা বিষয়টি সামাজিক ভাবে বসে উভয়পক্ষের কাগজপত্র দেখে মিমাংসা করার অনেকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওই চক্রটি আমার বাবার খতিয়ান থেকে জমি কেনার কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। বরং তারা ‘গায়ের জোরে’ আমাদের জমিটি দখলে নিতে তৎপর ছিল।

তিনি জানান, বিষয়টি ঈদগাঁও থানা ও অতিরিক্ত ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালত পর্যন্ত পৌঁছায়। আদালত বিষয় তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সদর উপজেলার সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশনা দেন। একই সাথে বিরোধীয় জমিতে আইনশৃংখলা বজায় রাখার জন্য ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।

তথ্যমতে, সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ঈদগাঁও ভূমি অফিসের মাধ্যমে উভয়পক্ষকে আদালতের নির্দেশনা উভয়পক্ষকে অবগত করান। গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিকালে ঈদগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীমুল ইসলাম নোটিশ দিতে পোকখালী মাদ্রাসায় যান। কিন্তু নোটিশ গ্রহণ না করতে পুলিশের সাক্ষাত না করে মৌলভী আজিজুদ্দিন গং পালিয়ে যান। পরে ২০ ফেব্রুয়ারি এসআই শামীমুল ইসলাম আবারও পোকখালীতে যান এবং ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিবাদী আশরফ আলীর কাছে নোটিশ জারি করেন। তিনি ওই জমিতে কোন ধরণের স্থাপনা নির্মাণ না করতে মৌখিক ভাবে নির্দেশনা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, ওই নোটিশ পাওয়ার পর এদিনই গভীর রাত ২টার দিকে মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের ব্যবহার করে মৌলভী আজিজুদ্দিন গং আরসিসি পিলার ও নেট ব্যবহার করে জমিটি ঘিরে ফেলে। বিষয়টি রাতেই দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই শামীমুল ইসলামকে জানানো হয়।

হাফেজ মুদ্দাচ্ছির আক্ষেপ করে বলেন, ভূমিদস্যু চক্রটি আমাদের পরিবারের একমাত্র সম্পদটি আত্মসাত করে সর্বনাশ করে ফেলেছে। আইনের আশ্রয় নিতে গিয়ে উল্টো আমরাই ক্ষতিগ্রস্থ হলাম। ‘ভূমিদস্যু সন্ত্রাসি’ মৌলভী আজিজুদ্দিন গং’র কাছে আইন, প্রশাসন, পুলিশ সবই যেন অসহায়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মরহুম হাফেজ ছৈয়দ নূরের স্ত্রী মাজেদা বেগম, ছেলে ইফতেখার মাহমুদ তালহা ও মেয়ে জামাতা মাওলানা খালেদ সাঈফী।

প্রসঙ্গত, পোকখালী এমদাদিয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন মাওলানা মোকতার আহমদ। তাঁর মৃত্যুর আগে ছেলে মৌলভী আজিজুদ্দিনকে ওই মাদ্রাসার পরিচালক নিযুক্ত করে যান। মৌলভী আজিজুদ্দিন মাদ্রাসাটির পরিচালক হওয়ার পর থেকে মরহুম হাফেজ ছৈয়দ নূরের জমিটি জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন