শ্বশুরবাড়ি গিয়ে খুন হলেন টেকনাফের ব্যবসায়ী

fec-image

কুমিল্লায় ছুরিকাঘাত করে কক্সবাজারের টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড নাজির পাড়া এলাকার মো. মুছা আলী (৪০) নামের এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার অন্তর্গত বাগুর বাস স্টেশনের উত্তর পাশে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মো. মুছা আলী চার সন্তানের জনক টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়ন ৮নং ওয়ার্ড উত্তর নাজির পাড়া এলাকার মৃত মাজেদ আলীর পুত্র। সে দেবিদ্বার উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের তুলাগাঁও গ্রামে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন।

কুমিল্লায় থাকা নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী নাজিয়া আক্তারের বরাত দিয়ে দেবিদ্বার থানা পুলিশ গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছে, তাঁর স্বামী মুছা আলী বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পরিচিত একজনের মোবাইলে ফোন পেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হন। এরপর রাত ৯টার দিকে ভিকটিমের মোবাইল থেকে তার স্ত্রীর মোবাইলে ফোন করে এক ব্যক্তি জানান, তার স্বামীকে অপহরণ করা হয়েছে। টাকা দিলে ১০ মিনিট পর ছেড়ে দেয়া হবে। এ কথা বলে অপহরণকারীরা একটি বিকাশ নম্বর দেয়। ওই নম্বরে ৩০ হাজার টাকাও পাঠানো হয়। অবশেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা মুছা আলী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে বলে খবর পায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘটনাস্থলের স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছে, বুধবার রাত ৯টার দিকে কয়েকজন যুবক মুছা আলীকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এরপর তার শোর চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে নিহতের স্ত্রী রাজিয়া আক্তার জানান, কক্সবাজারের-উখিয়া জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন একটি দোকান আছে তাঁর। সে ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে কাপড়, জুতা ও কসমেটিকস ক্রয় করে উক্ত দোকানে বিক্রি করতেন। বুধবার রাতে সোহেল নামের পরিচিত এক ব্যক্তির ফোন পেয়ে বাসা থেকে বের হয়। সোহেল নামের উক্ত ব্যক্তিও তার সহযোগীরা তার স্বামীকে অপহরণ করেছে বলে প্রথমে ১০ লাখ টাকা চেয়েছিল। পরে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তাদের দেওয়া একটি বিকাশ নম্বরে ৩০ হাজার টাকা পাঠায়। তবে তাদের চাহিদা মত মুক্তিপণ না পাওয়ার কারণে তার স্বামীকে হত্যা করেছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ নয়ন মিয়া গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন, নিহত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। নিহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ৩টি মাদক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। গত রবিবারও কুমিল্লার আদালতে একটি মাদক মামলার হাজিরা ছিল।

সংঘটিত ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীরা নিহত মুছা আলীর পূর্ব পরিচিত ছিল। হত্যাকাণ্ডের নৈপথ্যে মাদক কিংবা আর্থিক বিরোধ থাকতে পারে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

এদিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড নাজির পাড়ার বাসিন্দা নিহত যুবক মুছা আলীর প্রথম স্ত্রী চার সন্তানের জননী আজিদা বেগম জানান, দীর্ঘ ১৪ বছর আগে মুছা আলীর সঙ্গে তার বিবাহ হয়। তাদের ঘরে বর্তমানে দুটি মেয়ে ও দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। ব্যবসার কাজে তার স্বামী কুমিল্লায় আসা যাওয়া করতো। কাজের ফাঁকে তার স্বামী কুমিল্লা দেবিদ্বার এলাকায় আরেকটি বিয়ে করে।

তার দাবি, টাকার জন্য তার স্বামীকে সুকৌশলে আটকে রেখে হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসলে ঘটনার আসল রহস্য বের হয়ে আসবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, খুন, টেকনাফ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন