সাভারের ধ্বংসস্তূপে খালেদা জিয়া

হত্যাকাণ্ডর জন্য সরকার দায়ী- মওদুদ

 575416_408346085930829_249789931_n

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল  : সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ধসে পড়া ভবন রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ পরির্দশন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে তিনি সেখানে পৌঁছান।  তিনি সেখানে উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।

বেগম জিয়া সাভারের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে এনাম মেডিকেল হাসপাতালে ভবন ধসের ঘটনায় চিকিৎসাধীন আহতদের সঙ্গে দেখা করে তাদের খোঁজখবর নেন।

এ সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আ স ম হান্নান শাহ, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আবদুল আউয়াল মিন্টু, এডভোকেট আহমেদ আজম খান, আবদুল মান্নান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সহদফতর সম্পাদক শামিমুর রহমান শামীম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা ও ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল।

এদিকে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে মৃত্যুকূপে ঠেলে দিয়ে এতগুলো মানুষ হত্যা করেছে দাবি করে বলেছেন, ‘সাভারের ভবন ধস নিছক কোনো দুর্ঘটনা ছিল না, এটা হত্যাকাণ্ড, এটাকে একটা গণহত্যা বলা যেতে পারে। তিনি নিহত ও যারা পঙ্গু হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে এক সপ্তাহের মধ্যে ২০ লাখ করে টাকা দেওয়ার দাবি করেন।

তিনি বলেন, এতবড় একটি দালান তৈরিতে যে ধরনের নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়, তা মানা হয়নি। এজন্য ভবনের মালিক যুবলীগ নেতা সোহেল রানা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মুরাদ জং দায়ী।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাভারের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে রাত ৮টায় গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা কিছুক্ষণ আগে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সাভারের ভবন ধসের এলাকা ঘুরে দেখে এসেছি। সেখানে কি ধরনের ক্ষতি হয়েছে তা নিজের চোখে না দেখলে বলে বোঝানো যায় না। এটা নিছক কোনো দুর্ঘটনা ছিল না, এটা হত্যাকাণ্ড, এটাকে একটা গণহত্যা বলা যেতে পারে। তিনি বলেন, এতবড় একটি দালান তৈরিতে যে ধরনের নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয় তা মানা হয়নি। এজন্য ভবনের মালিক যুবলীগ নেতা সোহেল রানা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মুরাদ জং দায়ী।’

তিনি বলেন, বিএনপির তরফ থেকে আমরা জাতীয় শোকে অংশ নিয়েছি। এই বিপর্যয়ের সময় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের পাশে আমরা থাকবো। তাদের জন্য যা কিছু করা দরকার করবো। 

এক প্রশ্নের জবাবে মওদুদ আহমদ বলেন, সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা এই কাজে পারদর্শী। কিন্তু তাদের কেন নিয়োজিত করা হয়নি তা বলতে পারছি না। 

মওদুদ আহমদ বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যের মদদে এই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন সব সময় তাদের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। যার কারণে এই হত্যাযজ্ঞ ঘটেছে। ৫ দিন আগে থেকেই কারখানা বন্ধ ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বেতন দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ওইদিন লোক জড়ো করা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, হরতাল ভঙ্গ করার জন্য রাজনৈতিকভাবে এই ভবনটি ব্যবহার করা হচ্ছিল।

তিনি বলেন, জমিটা একটা সংখ্যালঘু পরিবারের জমি। সোহেল রানা বর্তমান সংসদ সদস্যের মদদে সয়েল টেস্ট না করে ভবনটি করেছেন।

মওদুদ আহমদ বলেন, এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে ২৩৩ জন, কিন্তু আমাদের মতে মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি। এখনো প্রায় দেড় হাজার মানুষ ভবনের বিভিন্ন স্থানে আটকে আছে।

সেনাবাহিনীকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরো প্রশিক্ষিত বাহিনী এই উদ্ধার কাজ করতে পারতো। সত্যিকারে যারা এই কাজ করে তাদের নিয়োজিত করা হয়নি। এখানে উদ্ধার কাজ যে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলছে তার কোনো নিদর্শন আমরা পাইনি।

তিনি বলেন, এই ভবন ধস ও এতগুলো প্রাণ চলে যাওয়ার জন্য সরকারকে দায়ী করতে হবে। আমরা তাদেরই দায়ী করছি।

মওদুদ আহমদ বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেভাবে বলেছেন যে, মৌলবাদী বিএনপিরা স্তম্ভ ধরে নাড়াচাড়ার কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে। তার এই কথার কোনো সত্যতা নেই। তার এই বক্তব্য নিয়ে এর বেশি কিছু বলতে চাই না। তিনি বলেন, এখন বলছে স্তম্ভ নাড়াচাড়া করার জন্য এরপর হয়তো বলবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য ভবন ধস হয়েছে। এখন আমরা হাঁচি দিলেও বলবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য হাঁচি দিচ্ছি। এরকম হালকা হয়ে গেছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আসম হান্নান শাহ, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল মান্নান, ড. ওসমান ফারুক, আবদুল আউয়াল মিন্টু, রুহুল আলম চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল খান সোহেল, খায়রুল কবির খোকন, জাফরুল হাসান, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শিরিন সুলতানা, আবদুল গফুর ভূঁইয়া, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রহমান, আমিরুজ্জামান খান শিমুল প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন