সিএইচটি কমিশনের বিজিবি-বাঙ্গালী বিদ্বেষী ৭ দফা সুপারিশ

08.07.2014-CHT Comision Report News Pic

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :

পাহাড়ীদের জায়গাজমি বেদখল করা থেকে রাষ্ট্রীয় সংস্থা, প্রাইভেট কোম্পানী এবং যাবতীয় ভুমিদস্যুদের কর্মকান্ড প্রতিরোধের জন্য সরকারকে সংঘবদ্ধভাবে চাপ দেয়া এবং বিজিবি সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থার বর্তমান এবং ভবিষৎ ভুমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে জনমত যাচাই করাসহ ৭ দফা সুপারিশমালা পেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন (সিএইচটি কমিশন)।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন (সিএইচটি কমিশন) স্থানীয় বাঙ্গালীদের প্রতিরোধের মুখে পার্বতাঞ্চল সফর শেষে মঙ্গলবার বিকালে ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এ ৭টি সুপারিশ দফা সুপারিশমালা তুলে ধরা হয় কমিশনের পক্ষ থেকে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন (সিএইচটি কমিশন) উপস্তিাপিত সুপারিশমালার মধ্যে রয়েছে যেখানে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে ভুমি হুকুমদখল করা একান্তই অপরিহার্য সেখানে যতটুকু প্রয়োজন তার বেশী জায়গা যেন না নেয়া হয়। পাহাড়ী বাঙ্গালি নির্বিশেষে যাঁদের ভুমি অধিগ্রহণ করা হবে তাঁদেরকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে যথাযথ ক্ষতিপরণ এবং বিকল্প জমি প্রদান সহ পর্ণাঙ্গ পুণর্বাসনের ব্যবস্থা করা। ভুমি অধিগ্রহণের সময় সকল উচ্ছেদকৃত পরিবারকে ক্ষতিপরণ ও পুনর্বাসনের বিবেচনায় আনতে হবে বিশেষ করে সেসব পাহাড়িদের সরকারী কবুলিয়ৎ বা কাগজপত্র নেই, যদিও তাদের প্রথাগত ভুমি অধিকার আছে। ভুমি হুকুম দখলের সময় যেসব স্থানীয় অধিবাসীদের প্রতিরোধ দমন করার জন মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করার জন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। পাহাড়ি ও বাঙ্গালীর মধ্যে সংঘাত ও জাতিগত সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করার সকল অপচেষ্টা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিহত করার ব্যবস্থা নেয়া।

এদিকে সিএইচটি কমিশন উপস্থাপিত সুপারিশমালায় সরকার-বিজিবি-বাঙ্গালী বিদ্বেষী মনোভাবের বহির্প্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করছেন পাহাড়ের সচেতন মহল। তারা সিএইচটি কমিশনকে ‘বিতর্কিত’ ও ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ আখ্যা দিয়ে এসব সুপারিশকে মনগড়া, একপেশে দাবী করে অভিলম্বে এসব অযৌক্তিক সুপারিশমালা প্রত্যাহেরর আহবান জানিয়ে বলেন, দিনের পর দিন যখন বাঙ্গালীরা খুন,গুম, অপহরণ আর চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে তখন এ কমিশন কোথায় থাকে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের অরক্ষিত সীমান্ত সুরক্ষায় দীঘিনালার বাবুছড়া এলাকায় বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন-বিজিবি‘র একটি ব্যাটালিয়ন স্থাপনের জন্য ১৯৯১ সালে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। চলতি বছরের ২২ মে বাবুছড়া বিজিবি ব্যাটালিয়নের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আনুষ্ঠানিকভাবে বাবুছড়াতেই পালন করা হয়। এরপর থেকে বিজিবির সদর দপ্তরের ভুমি নিজেদের দাবী করে বিবিজি‘র সদর দপ্তর স্থাপনে বিরোধীতা করে আসছে স্থানীয় পাহাড়ীরা। এরই ধারাবাহিকতায় ইউপিডিএফ‘র মদদে ১০ জুন সন্ধ্যায় কয়েকশ সংঘবদ্ধ পাহাড়ি নারী-পুরুষ দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে নির্মাণাধীন বাবুছড়া ৫১, বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন-বিজিবি‘র সদর দফতরে হামলা চালায়। এতে ছয় বিজিবি ও এক পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২২ জন আহত হন।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের (সিএইচটি) একটি প্রতিনিধি দল গত ৩ জুলাই থেকে ৬ দিনের সফরে পার্বত্য চট্টগ্রাম আসে। দীঘিনালা ও খাগড়াছড়িতে বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ বিক্ষোভের মুখেই তারা খাগড়াছড়ির বাবুছড়া বিজিবি সদর দপ্তর এলাকা ও দুইটিলার বিরোধপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেন। এ কর্মকান্ডে কমিশনের পাঁচজন সদস্য পার্বত্য তিন জেলা সফরে অংশ নেন। কমিশনের কো-চেয়ারম্যান ও তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, খুশী কবির, ড. স্বপন আদনান, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন। প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে ছিলেন সিএইচটি কমিশনের সমন্বয়কারী হানা শামস এবং গবেষণা অফিসার ইলিরা দেওয়ান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন