মিয়ানমার সীমান্তে ইয়াবা পাচারকারীদের দৌরাত্ম বেড়েছে: প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক

ইয়াবা

ওমর ফারুক হিরু
সাম্প্রতিক সময়ে আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। তারা তোয়াক্কা করছেনা কাউকে। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা অপ্রতিরোধ্য গতিতে পাচার করছে এই মারণনঘাতি মাদক। যারাই তাদের পাচার কাজে বাধা দিতে যাচ্ছে তাদের উপরই হামলে পড়ছে সীমান্তের এই সংঘবদ্ধ পাচারকারীর দল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী হয়েও অনেকে দিব্বি এলাকায় দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। এমনকি সংবাদকর্মীদের উপরও হামলা চালাতে দ্বিধা করছেনা তারা।

প্রতিবেশি দেশ মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচারে সীমান্তের প্রভাবশালী গোষ্ঠী এসব সংঘবদ্ধ পাচারকারীদের সহযোগিতা দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের ছত্রছায়ায় এসব পাচারকারীদের অপকর্ম চললেও প্রশাসনের তৎপরতা ঝিমিয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সহযোগী এখন আইনশৃংখলা বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা। ফলে তারা কোন কিছুই পরোয়া করছে না। এমনটাই বলছেন সমাজের সচেতন লোকজন।

তারা বলছেন, কিছুদিন আগের পত্র-পত্রিকায় দেখা যেত ১-২’শ অথবা ১-২ হাজার ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনা ঘটত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে হাজার এবং লাখে’র উপরে ইয়াবার চালান উদ্ধার হচ্ছে। এছাড়া গত ১২ মে’ শুক্রবারে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে টেকনাফের নাজির পাড়ায় ইয়াবা সম্রাট খ্যাত ভূট্টো বাহিনীর হামলায় আহত হয়েছে কক্সবাজারের ৫ জন সংবাদকর্মী। হামলার শিকার সংবাদকর্মীরা হচ্ছেন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলাম লিপু, সময় টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি সুজা উদ্দিন রুবেল, ৭১ টেলিভিশনের ক্যামরা পারসন বাবু, সময় টেলিভিশনের ক্যামরা পারসন ফরাজ ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসন শরিফ।

হতভাগ্য এসব সংবাদকর্মীদের উপর পরিকল্পিত হামলার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকাও ছিল অত্যন্ত রহস্যজনক। ঘটনার পরপরই পুলিশকে জানানো হলেও থানার পার্শ্ববর্তী এলাকা হয়েও কোন ধরনের সহযোগিতা করা হয়নি। এমনকি সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হয়ে সংবাদকমীরা রাস্তার উপর পড়ে ছটফট করলেও তাদেরকে উদ্ধারের জন্য যায়নি পুলিশ। এছাড়া ঘটনার দুই দিন পরেও টেকনাফ থানা কোন ধরনের ব্যবস্থাও গ্রহণ করেনি।

টেকনাফ সীমান্তে সংবাদকর্মীদের উপর ইয়াবা পাচারকারীদের পরিকল্পিত হামলার ব্যাপারে, কক্সবাজারের দৈনিক আপনকণ্ঠের সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আলহাজ মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইয়াবা পাচার ও জব্দের ঘটনা শুনলে অবাক লাগে। কারন যে পরিমান ইয়াবা প্রশাসনের হাতে জব্দ হচ্ছে বলে শুনছি কিজানি আরো কত পরিমান ইয়াবা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এটি দেশ ও জাতির জন্য খুবই দুঃখ্যজনক। তিনি আরো বলেন, জাতির বিবেক সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনাটি খুবই ন্যাক্কারজনক। এ হামলার পিছনে নিশ্চয় কোন প্রভাবশালীর ইন্ধন রয়েছে। নয়ত এভাবে হতে পারে না।
মাদকদ্রব্য নিরাময় কেন্দ্রে’র (নোঙ্গর) পরিচালক দিদারুল আলম রাশেদ এ প্রসঙ্গে জানান, এসব বেপরোয়া ইয়াবা ব্যবসায়ীদের পিছনে নিশ্চয় কোন প্রভাবশালী মহলের ইন্ধন রয়েছে। যারা আর্থিক বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করছে-তারা এতই বেপরুয়া যে, সাংবাদিকদের গায়ে হাত উঠাতেও বিন্দুমাত্র ভয় পাচ্ছেনা। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, ইয়াবার বিরুদ্ধে পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট তবে আরো জোরদার হতে হবে ইয়াবা ব্যবসা বন্ধে।

কক্সবজারের কৃতি সন্তান ব্যারিস্টার আবুল আলা ছিদ্দিকী বলেন, পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র মিয়ানমার হয়ে সীমান্ত এলাকা টেকনাফ দিয়ে সারা দেশে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে। এতে শুধু যুব সমাজ ধ্বংস হচ্ছে না পাশাপাশি পুরো দেশ’ই পুঙ্গ হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে নিশ্চয় কোথাও না কোথাও অবহেলা রয়েছে। প্রশাসন চাইলে সবই পারে। তাই প্রশাসনের যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। যাতে করে সমূলে ধ্বংস হয় ইয়াবা ব্যবসা।

ইয়াবা পাচার প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেষ্ঠ্য সাংবাদিক এবং দৈনিক কালের কণ্ঠের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার তোফায়েল আহমদ জানান, ইয়াবা পাচার বন্ধে মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের আরো দেশপ্রেম নিয়ে কর্তব্য কাজে নিয়োজিত থাকতে হবে। সেই সাথে সরকারকেও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে-যাতে ক্ষমতাসীন দলের কোন সদস্যও জাতিকে ধ্বংস করার এমন পাচারকাজে লিপ্ত হতে না পারে। তিনি টেকনাফ থানার কতিপয় দূর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে বলেন, ইয়াবা পাচারকারীদের কোনভাবেই লোক দেখানো শায়েস্তা নয় বরং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন