টেকনাফে ঘূর্ণিঝড় 'সিত্রাং' এর প্রভাব

সেন্টমার্টিনে ভেসে আসলো বিশাল ট্রলার, ১৩টি ফিশিং বোট ডুবি

fec-image

টেকনাফে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে সাগরের উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়েছে। উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েছে জোয়ারের পানি। সারাদিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির বইছে হালকা-মাঝারি বাতাস। সতর্কতা জানিয়ে প্রশাসন ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিও এর পক্ষ হতে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলায় ৬নং বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে এখনো উপজেলার কোথাও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের ছেড়া দ্বীপে বিশালাকার একটি জাহাজ ভেসে এসেছে। সকাল ৭ টা থেকে বাতাসের গতিবেগ বেড়েই চলেছে। এতে বড় বড় গাছের ডাল ভেঙ্গে পথিমধ্যে পড়ায় স্থানীয় সিপিপি সদস্যরা সরিয়ে লোকজন চলাচলের ব্যবস্থা করে যাচ্ছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, বিদেশি জাহাজ ভেসে আসার খবরটি ইতোমধ্যে প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে একটি বিদেশি বলগেট জাহাজ সেন্টমার্টিনে ভেসে এসেছে বলে খবর পেয়েছি। তবে এটি কোন দেশ থেকে এসেছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কোস্ট গার্ডের টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লে. কমান্ডার আশিক আহমেদ জানান ” সোমবার আনুমানিক দুপুর পৌনে ১২ টার সময় একটি বড় ধরনের BARGE. MR 3322 কল সাইন SC4562B ঘূর্ণিঝড় “সিত্রাং” এর কবলে পরে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে সমুদ্র হতে ভাসতে ভাসতে ছেড়া দ্বীপের চড়ে পাথরের সাথে আটকে যায়। উক্ত BARGE এ কোন লোকজন নেই বলে জানা যায় এবং BARGE এর মালিকানা সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।”

টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলমসহ উপজেলা প্রশাসনের একটি টিম টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়া, দক্ষিণ পাড়া, মাঝের পাড়া ও উপকূলী বেড়িবাঁধ এলাকা পরিদর্শন করে সকলকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

এছাড়া সেন্টমার্টিনে ঘাটে বেঁধে রাখা আবদুস সালাম, আবদুল্লাহ, মো. নুর, আইয়ুব, আবদুল হক মেম্বারের মালিকানাধীন ১৩টি সার্ভিস বোট ও ফিশিং বোট ডুবে গেছে। বোটগুলো নোঙ্গর করা ছিলে। ফলে কোন মাঝি মাল্লা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এর মধ্যে নোঙ্গর ছিঁড়ে ৭টি বোট কূলে ভেসে এসে ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙ্গে গেছে।

অপরদিকে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতিমূলক সভা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরফানুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম। উপস্থিত ছিলেন সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অফিসার. দেশি-বিদেশি এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিগণ ও সুশীল সমাজ।

বক্তব্য রাখেন, টেকনাফ উপজেলা সিপিপি অফিসার আবদুল মতিন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুবীর কুমার দত্ত, উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা সহ এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিগণ। এসময় ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতিমূলক স্ব-স্ব অবস্থান থেকে সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।

তাছাড়াও সকালে সাড়ে নয়টার দিকে শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরেজমিনে দেখা যায়, এনজিওর পক্ষ থেকে বার্তা জানিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। উঠানো হয়েছে বিপদ সংকেতের পতাকা। পাহাড়ের ঢালে অস্থানরত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হচ্ছে।

সূত্রে জানা যায়, পূর্ব-মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্যবঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ উত্তর উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পূর্ব-মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় (অক্ষাংশ: ১৭.৮° উত্তর, দ্রাঘিমাংশ: ৮৮.৮° পূর্ব) অবস্থান করছে। এটি আজ সকাল ০৬ টায় (২৪ অক্টোবর, ২০২২) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩৫ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কি.মি. দক্ষিণ দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘণীভূত ও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল ২৫ অক্টোবর ভোররাত সকাল নাগাদ খেপুপাড়ার নিকট দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।

মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ০৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ০৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত (পুনঃ) ০৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরসমূহকে ০৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ০৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত (পুনঃ) ০৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদীবন্দরসমূহকে ০৩ (তিন) নম্বর নৌ-বিপদ সংকেত (পুনঃ) ০৩ (তিন) নম্বর নৌ-বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৫০-৬০ কি.মি. বেগে দমকা বা ঝাড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে, সেইসাথে ভারি (৪৪-৮৮ মি.মি.) থেকে অতিভারি (≥ ৮৯ মি.মি.) বর্ষণ হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ০৫-০৮ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ট্রলার, ডুবি, ফিশিং বোট
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন