হযরত আলী (রা.), আলীর পাহাড়, ও আলীর সুড়ঙ্গের রহস্যময় ইতিহাস

fec-image

ষোড়শ শতকের আলীকদম। সুপ্রাচীন কালের এই আলীকদম জনপদ নিয়ে অনেক কিংবদন্তি ও ইতিহাস আছে। বর্তমানে বান্দরবান জেলার একটি উপজেলা আলীকদম। মধ্যযুগেই এই আলীকদম জনপদে গড়ে উঠেছিল মানুষের পদচারণা! অন্তত ইতিহাস তাই বলে।

আলীকদম উপজেলা সদরের অতি কাছে আলীর পাহাড় ও আলীর সুড়ঙ্গ রয়েছে। এই পাহাড় ও সুড়ঙ্গকে নিয়ে রয়েছে নানান কিংবদন্তি, রূপকথা, উপকথা এবং জনশ্রুতি। এরমধ্যে বেশী জনশ্রুতি রয়েছে হযরত আলী (রা.) নাকি আলীকদম এসেছিলেন! এটি যে নিছক অত্যুক্তি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যার সাথে সত্যের কোন বালাই নেই।ইদানীং এ মাত্রায় যুক্ত হয়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রচার ও প্রসার। সারাদেশ থেকে প্রতিনিয়ত পর্যটকরা আলী সুড়ঙ্গ ট্রেকিং-এ আসেন। তাঁদের বেশীরভাগ আলীর পাহাড় কিংবা আলীর সুড়ঙ্গের প্রকৃত ইতিহাসের সাথে পরিচিত নন।

ফলে স্থানীয় জনশ্রুতি আর গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসান অনেকে। আলীর সুড়ঙ্গ নিয়ে ইউটিউব ও ফেসবুকে বেশকিছু ভিডিও দেখা যায়। যাতে ঘুরে ফিরে কথিত প্রসঙ্গের অবতারণা ঘটানো হয়েছে। ইসলামের চতুর্থ খলিফা ছিলেন হযরত আলী (রা.)। তিনি কোনসময়ই ভারতীয় উপমহাদেশে আসেননি। গবেষক ও ইসলামের ইতিহাস রচয়িতাদের লেখায় এটা নিশ্চিত।

আলীর পাহাড় ও আলীর সুড়ঙ্গ নিয়ে সামান্য আলোকপাত করবো। পাশাপাশি ভারতীয় উপমহাদেশে কিভাবে আরব বণিকদের আগমণ এবং মহানবী (সা.) এর আমলেই এ জনপদে ইসলামের প্রচার হয়েছিল তার একটি চিত্র তুলে ধরবো।

তৈনখাল মাতামুহুরী নদীর একটি উপনদী। অনিন্দ্য সুন্দর এ উপনদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ। তৈনখালের দক্ষিণ পাড়ে এবং মাতামুহুরীর পূর্ব পাশ ঘেঁষে একটি পাহাড় আছে। যেটির নাম ‘আলীর পাহাড়’।
‘আলীর পাহাড়’ নামকরণের ইতিহাস রহস্যাবৃত। এ নিয়ে গঠনমূলক কোন অনুসন্ধান এ পর্যন্ত হয়নি। আলীকদম সদরে মাতামুহুরী ব্রিজ থেকে পূর্বদিকে তাকালে যে পাহাড়টি দেখা যায়, সেটিই মূলত: ‘আলীর পাহাড়’।

এ নামটি নানান কারণে কৌতুহলোদ্দীপক। দুর্গম অরণ্যে কীভাবে একটি মুসলিম ঐতিহ্যবাহী নামে পাহাড়ের নামকরণ হলো? সুদীর্ঘকাল ধরে নামটিই বা অবিকৃত থাকলো কি করে? নামকরণের সাথে এই পাহাড়ের রহস্য লুকিয়ে আছে আরো একটি কারণে। সেটি হচ্ছে আলীর পাহাড়ে রয়েছে কয়েকটি রহস্যজনক গুহা!
পরিসংখ্যন বিভাগ গুহাগুলোকে ‘ঐতিহাসিক গুহা’ বলে নথিভূক্ত করেছে। ‘আলীর গুহা কিংবা সুড়ঙ্গ’ নামে এটি বর্তমানে সারাদেশে পরিচিতি পেয়েছে।

‘আলীকদম’ আর ‘আলীর পাহাড়’ দু’টো নাম সম্পূরক। আলীকদম নামকরণ নিয়ে মোগল আমলের ইতিহাসের নিরিখে নানান তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। সে সূত্রে বলা যায়, ‘আলীকদম’ ও ‘আলীর পাহাড়’ নামকরণটি মুসলিম ঐতিহ্যবাহী। আলীর পাহাড়ে হরিণ ঝিরি নামক একটি খাদে পরপর তিনটি সুড়ঙ্গ রয়েছে। অনেকে মতে, সুড়ঙ্গ চারটি। তবে আমি তিনটিতে গিয়েছি। এ গুহাগুলো দেখতে মনে হয় কৃত্রিমভাবে খোদাই করা। সুড়ঙ্গগুলোর বিস্তৃতি একসময় বহুদূর পর্যন্ত ছিল। আমি ২০০১ সালে প্রথম যখন আলীর সুড়ঙ্গ অভিযান করি তখন তিনটি সুড়ঙ্গের অস্তিত্বের কথা জানতে পারি।

ঐ সময় একজন রোহিঙ্গা যুবক আমাদের অভিযান টীমে ছিলো। যুবকটি ছিল সাহসী। সে টর্চ লাইট নিয়ে একাই দ্বিতীয় সুডঙ্গের ডানপাশের সুড়ঙ্গে ঢুকে যায়। সেখানে সে প্রায় ঘন্টাখানেক অবস্থান নেয়! যুবকটির আসতে দেরী হতে দেখে আমরা সবাই সন্ত্রস্ত।উল্লেখ্য, দ্বিতীয় সুড়ঙ্গের ডান দিকের সুড়ঙ্গপথটি এখন মাটি চাপায় বন্ধ হয়ে আছে। আমরা প্রথম সড়ঙ্গটি পরিদর্শন শেষে দ্বিতীয় সুড়ঙ্গে রশির সাহায্যে দ্বিতীয় সুড়ঙ্গে উঠি। বর্তমানে দ্বিতীয় সুড়ঙ্গে লোহার মই স্থাপন করা হয়েছে।আমাদের দ্বিতীয় সুড়ঙ্গ অভিযানটি ছিল ভয়ংকর রকমের অভিজ্ঞতা। গা ছমছম পরিবেশ। দু’দশকের ব্যবধানে এখন আলীর সুড়ঙ্গে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ‘আলীর সুড়ঙ্গ অভিযান’ নিয়ে আলাদা পর্বে আলোচনা করা হবে।

এখানে চীনা পরিব্রাজক হিয়োয়েন সাঙ্গের একটি মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, নদীনাব্য জলাভ‚মির এ দেশে প্রাকৃতিক নিদর্শনগুলো সহজেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আলীর সুড়ঙ্গের ক্ষেত্রে এ কথা শতভাগ সত্য হতে পারে।কারণ দু’দশক আগে সুড়ঙ্গগুলোর যে কাঠামো দেখেছি বর্তমানে তার পরিবর্তন হয়েছে। যেমনটি ঘটেছে দ্বিতীয় সুড়ঙ্গপথের ডানদিকের সুড়ঙ্গে। সেটি এখন মাটি চাপায় বন্ধ।

স্থানীয় লোকদের ধারণা আলীর পাহাড়ের সুড়ঙ্গগুলো প্রাচীন কোন লোক বা সামন্তের আত্মগোপন কিংবা আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুতকৃত কৃত্রিম গুহা। কারণ গুহার মুখগুলো সুন্দরভাবে কাটা হয়েছে। প্রাকৃতিক গুহার ক্ষেত্রে সচরাচর যেমনটি হয়না।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষক ও লেখক আতিকুর রহমানের মতে, এ প্রত্যন্ত দুর্গম অঞ্চলে কি করে আলীর পাহাড় নামকরণ হলো? এ নামটি অবিকৃত থাকলোই বা কি করে? এর সাথে সঙ্গতিশীল নাম হলো আলীকদম। যদিও মঘী উচ্চারণে এটি বিকৃত হয়ে আলেহক্যডং হয়েছে। আলীর পাহাড় মঘী ভাষায় আলেহডং হয়েছে। আরকানী ভাষায় অনেক পাহাড়ের নামের শেষে দং, ডং, বা তং উপসর্গটি ব্যবহৃত হয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, সুবেহ বাংলার সুবেদার শাহ সুজার অনুসারীরা ১৬৬১ খ্রিস্টাব্দে কেন কীভাবে রামু থেকে দুর্গম অরণ্যপথ পাড়ি দিয়ে আলীকদম ঢুকে পড়েছিল! তার একটি ধারাবাহিক তাৎপর্য ও ঐতিহাসিক বিবরণ আছে। এ গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে নামকরণ প্রসঙ্গের আলোচনায় যা বিধৃত আছে। পরে আরো বিশদ আলোচনা করা হবে।

এ জনপদে আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা। আলীকদম নামকরণ প্রসঙ্গের অবতারণা হলেই অনেকে বলেন, হযরত আলী রা. নাকি আলীকদম এসেছিলেন! সে কারণেই আলীকদম নামকরণ হয়েছে। এটি অন্তত আমার বিগত তিন দশক ধরেই শোনে আসা একটি জনশ্রুতি!

প্রাচীন বাংলার এ জনপদে কিভাবে ইসলাম ধর্মের বিস্তার ঘটেছিল তা এখানে প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় বর্ণনা করবো।হিজরি প্রথম শতকের শেষ প্রায়। ৯৬ হিজরী ৭১২ খ্রিস্টাব্দ। চলছে উমাইয়া শাসনামল। সে সময় মুসলিম সেনাপতি মুহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে সিন্ধু অঞ্চলে ইসলামের বিজয় নিশ্চিত হয়।এরপর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিকভাবে ইসলামের প্রতিষ্ঠা শুরু। ভারতীয় উপমহাদেশে এভাবেই ইসলামের বিজয় নিশান উড়েছিল।

ইতিহাস এও বলে, প্রাচীন বাংলায় দু’শ্রেণির মুসলমান এসেছিলেন। এরমধ্যে একশ্রেণির মুসলমান এসেছেন বিজয়ীর বেশে দেশজয়ের অভিযানে। তাঁদের বিজয়ের ফলে প্রাচীন বাংলা তথা ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা লাভ হয়।সে কারণে বলা যায়, ৭১২ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সিন্ধু প্রদেশে সর্বপ্রথম মুহাম্মাদ বিন কাসিমের আগমণ ইসলামের বিরাট রাজনৈতিক বিজয়।

অপরদিকে, কিছু মুসলমান এসেছিলেন নিছক ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে। এই ধর্মপ্রচারকদের একটি দল এসেছিলেন পবিত্র মক্কায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার সমসাময়িককালে। অর্থাৎ খোদ রাসূলুল্লাহ সা.-এর জীবদ্দশাতেই। এ দলটির মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বিশেষত আরাকান অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছিল।বলা বাহুল্য, একসময় পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চল আরাকান রাজ্যের অধীনে ছিলো। সুতরাং আলীকদম-সহ পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম আরাকানের অধীনেই ছিলো।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ওফাত পরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদীনের আমল এবং আরও পরে কতিপয় ওলী দরবেশ ফকীহ শুধুমাত্র ইসলামের দাওয়াত ও তবলীগের জন্যে পৃথিবীর আনাছে-কানাছে ছড়িয়ে পড়েন।
সুফি-সাধকদের একটি দল এ উপমহাদেশে আগমণ করেছিলেন। তাঁরা দ্বীন প্রচারের কাজে সারা জীবন অতিবাহিত করে এখানেই ইন্তেকাল করেন। সে কারণে সারাদেশের আনাছে-কানাছে বহু অলী-বুজুর্গের দরগা ও কবর আছে।

এ ধারাবাহিকতায় সুপ্রাচীনকালে ‘আলী’ নামের কোন সাধকের এ অরণ্য জনপদে আগমণকে অস্বীকার করা যায় না। তবে যুক্তিসিদ্ধ প্রমাণ কিংবা অনুসন্ধান ছাড়া এটাকে পুরোপুরি স্বীকারও করা যায় না।
স্মর্তব্য যে, সুবেহ বাংলার সুবেদার শাহ সুজা আরাকান রাজার হাতে স্বপরিবারে খুন হন। তিনি ছিলেন দিল্লীর স¤্রাট আওরঙজেবের আপন ভাই। আরাকান রাজার হাতে ভ্রাতৃহত্যার খবর পেয়ে আওরঙজেব আপন মামা শায়েস্তা খাঁকে বাংলার সুবেদার নিয়োগ দেন। একই সাথে ভ্রাতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে নির্দেশ প্রদান করেন।

এরপর ১৬৬৬ সালে ২৭ জানুয়ারি শায়েস্তা খাঁর প্রধান সেনাপতি বুজুর্গ উমেদ খাঁ আরাকান অভিযান করে চট্রগাম দখলে নেন। চট্টগ্রাম ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল মোগল অধিকারে আসার আগে পর্যন্ত এটি ছিল আরাকান রাজ্যের অংশ।

আরাকান রাজ্যের অধীন প্রাচীন ‘আলীকদম অঞ্চল’টি খোদা বখশ খাঁ নামের একজন সামন্তের শাসিত ছিল বলে ১৫৫০ সালে জোয়াও জে বারোজের অংকিত প্রাচীন বাংলার মানচিত্রে দেখা যায়।
এ মানচিত্রে আলীকদম অঞ্চলকে ‘লোভাস ডোকাম’ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। যা আলীকদমের পর্তুগীজ ভাষ্য বলে মনে করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষক ও কলামিস্ট আতিকুর রহমান।

ইতিহাসে পরিদৃষ্ট হয়, খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর পূর্ব থেকে আরব বণিকরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যিক পথে ভারত, বার্মা ও চীনের ক্যান্টন বন্দরে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।
ইয়েমেন ও হাজরা মাউতের আরব বণিকদের নৌবাণিজ্য বেশ অভিজ্ঞ ছিলেন। তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতার সুবাদে আরবের কুরাইশরাও নৌবাণিজ্যে আগ্রহী হয়ে পড়ে।

সে সূত্রেই মহানবী (সা:) এর আগমণের আগেই তারা ভারতীয় উপমহাদেশ, বার্মা, কম্বোডিয়া ও চীনের ক্যান্টন পর্যন্ত বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্থাপন করেন।
ইসলামের আবির্ভাবের পর বাণিজ্যিক কারণে মুসলমানরা এসব অঞ্চলে বাণিজ্যিক এবং ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে সফর করেন।

এখানে আমাদের প্রাসঙ্গিক আলোচ্য বিষয় আলীর পাহাড় ও হযরত আলী। রাসুলুল্লাহ সা. এর জীবদ্দশায় কিংবা পরে হযরত আলী রা. এই উপমহাদেশে আসেননি। এটা নিশ্চিত। ইতিহাস তাই বলে।
ইসলামী ইতিহাস ও বিভিন্ন গবেষকের রচনায় দেখা যায়, সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. ছিলেন রাসুলুল্লাহ সা. এর একজন সাহাবী। তিনি মহানবী সা.-এর নবুওয়তের সপ্তম বছরে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের বাণী নিয়ে ধর্মপ্রচার করেন।

এ যাত্রায় হযরত আলী রা. কোনসময়ই ভারতীয় উপমহাদেশে আসেননি। এ বিষয়ে কোন গবেষকের লেখায় তথ্যও পাওয়া যায়নি।

সাহাবী সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাসুলুল্লাহ সা. এর জীবদ্দশায় হযরত কায়স ইবনে হুযায়ফা (রা), হযরত ওরওয়াহ ইবনে আসাসা রা. এবং হযরত আবু কায়স ইবনে হারেস রা.-কে সঙ্গে নিয়ে একটি সমুদ্র জাহাজে করে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন।

তাঁদের এ সফরের লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যিক পথে ইসলামের সুমহান বাণী পৌঁছে দেয়া। আবু ওয়াক্কাস রা. এর নেতৃত্বাধীন সাহাবাদের ছোট কাফেলা জাহাজের মাধ্যমে প্রথমত ভারতের মালাবারে এসে উপস্থিত হন। তাঁরা সেখানকার রাজা চেরুমল পেরুমলসহ বহুসংখ্যক লোককে ইসলামে দীক্ষিত করান।
জানা যায়, আবু ওয়াক্কাস (রা.) এরপর জাহাজে করে চট্টগ্রামে এসে যাত্রা বিরতি করেন।

৬১৭ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম থেকে রওয়ানা দিয়ে ৬২৬ খ্রিস্টাব্দে চীনের ক্যান্টন বন্দরে গিয়ে উপস্থিত হন। দীর্ঘ ৯ বছরে তারা পথিমধ্যে বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোতে ইসলাম প্রচার করেন।

চীনের কোয়াংটা শহরে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন কাদেসিয়া যুদ্ধের বিজয়ী সেনাপতি হযরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাসের পিতা আবু ওয়াক্কাস মালিক ইবনে ওয়াইব। এরই অদূরে তাঁর মাজার এখনো বিদ্যমান। এ আলোচনা দীর্ঘ। এ প্রসঙ্গের দীর্ঘ আলোচনা এ গ্রন্থে প্রাসঙ্গিক নয় বিধায় ক্ষান্ত হলাম।
পরিশেষে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, আলীর পাহাড় ও আলীর সুড়ঙ্গ মুসলিম ঐতিহ্যবাহী নামকরণ বটে। তবে এর সাথে ইসলামের চুতর্থ খলিফা হযরত আলী রা. এর কোন সম্পর্ক নেই।
সুতরাং এ ধরণের একটি জনশ্রুতিকে বর্তমান যুগে ইতিহাস, বাস্তবতা ও যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাই না করে অনাধিকাল চর্চা করা যায় না। আলীর পাহাড় ও আলীর সুড়ঙ্গ নিয়ে নানান কিংবদন্তি ও রূপকথা নিয়ে আলাদা পর্বে আলোচনা করবো।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন