ক্যাপ্টেন তানভীরের মৃত্যু শোক সইতে পারলেন না তার দাদা
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসে নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন তানভীর ইসলাম শান্ত’র গ্রামের বাড়িতে বেড়েছে শোকের মাতাম। নাতীর শোকে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেলেন দাদা আজিজ মোল্লা (৭৫)।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে যখন তানভীরের দাফনের প্রস্তুতি চলছিল তা শুনেই বাউফল উপজেলার কালীশুরী ইউনিয়নের সিংহেরা কাঠী গ্রামের বাড়িতে বসে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন দাদা আজিজ মোল্লা।
তানভিরের ছোট চাচী ঝর্না বেগম জানান, তানভীরের মৃত্যু সংবাদ শোনার পর থেকেই অস্থির হয়ে ওঠেন তিনি। তানভিরের মৃত্যুর খবর শুনে অনেকেই গ্রামের বাড়িতে আসছেন। তাদের সবার সাথে বারবার তানভীরের স্মৃতিবিজড়িত নানা কথা বলে কাঁদছিলেন তিনি।
বুধবার বিকেলে সংবাদ সংগ্রহের জন্য ক্যাপ্টেন তানভীরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা হয় তার সাথে। সেই সময়ে তিনি ঘরের সামনে বারান্দায় একা আপন মনে বসা ছিলেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তানভীরের স্মৃতিবিজড়িত নানা কথা বলে বারবার কান্না করছিলেন তিনি। আর বিছানার পাশে তানভীরের বিয়ের কার্ড খুঁজছিলেন।
তানভীরের চাচা মো. আবদুর রব রাকিব জানান, শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে সিংহেরাকাঠি গ্রামে তানভীরের তৈরি মসজিদে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হবে।এদিকে পিতা আর পুত্রকে হারিয়ে পুরোপুরি নির্বাক ইঞ্জিনিয়ার মো. ছালাম মোল্লা।
পটুয়াখালী জেলার বাউফলের ছেলে ক্যাপ্টেন তানভীর সালাম শান্তের জন্ম ১৯৯০ সালের ৩০ মার্চ। তার পিতার নাম আবদুস সালাম, মাতা লুৎফুন্নাহার। ১৫ জুলাই ২০০৯ সালে যোগদান করেন বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে। ৬৪তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের মাধ্যমে ২২ জুন ২০১১ সালে কমিশন লাভ করেন তিনি। পরে ক্যাপ্টেন পদমর্যাদায় পদোন্নতি পান। চাকুরী সূত্রে তুরস্ক, সুইডেন, ফ্রান্স, ইতালী ও জার্মানী ভ্রমণ করেছেন। বিয়ে করেন ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর। স্ত্রীর নাম নাজিয়া তাহসিন। তানভীর ও তার স্ত্রী দুজনেই অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন বলে জানা যায়।
তানভীরের ভাবী সোনিয়া জানান, তানভীর ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে পাশ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কমিশনার পদে চাকরি নেন।
তার ফেসবুকের কাভার ফটোতে আছে পবিত্র কুরআনের সুরা হাশরের একটি আয়াতের অনুবাদ। যেখানে লেখা আছে, ‘যদি আমি এই কোরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি দেখতে যে, পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহ তা আলার ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্য বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে’।
এদিকে নিহতের ওই পরিবারের স্বজনদের চলছে এখন শোকের মাতম। মৃত্যুর খবর পেয়েই রাজধানীর উদ্দেশ্যে চলে যান বাবা ছালাম মোল্লা ও মা বাবলী বেগম। ক্যাপ্টেন তানভির এক ভাই এক বোন। তানভীরের এমন আকষ্মিক মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে তানভীরের পুরো পরিবার। তানভীরের চাচা মোজাম্মেল মোল্লা বলেন, পরিবারের একমাত্র গর্বের ধন তানভীরকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে পড়েছে সবাই।