দীঘিনালা ভাসবে বৈসাবী উৎসবে
পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট: :
নানা ঘটন-অঘটনের পর এবার পার্বত্য খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ভাসবে বৈসাবী উৎসবে। অতীতের সবকিছু ভুলে পাহাড়ী-বাঙ্গালী মিলেই পালিত হবে বৈসাবী এমনটাই জানা গেছে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বয়ং দীঘিনালা ভূমিরক্ষা কমিটি সদস্য সচিব ধর্মজ্যোতি চাকমা।
তিনি বলেন, বাবুছড়ায় বিজিবি’র সাথে সাধারণ মানুষের ভুমি বিরোধের জের ধরে বিগত দিনের মতো করে বৈসাবি বর্জনের মতো কোন ঘটনা এবার নয়; বরং পাহাড়ি-বাঙ্গালির সমন্বয়ে এবার বৈসাবি পালিত হবে।
ইতোমধ্যে দীঘিনালার বাবুছড়ায় বিজিবি’র সদর দপ্তর স্থাপনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে বরফ গলতে শুরু করেছে। দীঘিনালা ভূমি রক্ষা কমিটি ও প্রশাসনের মধ্যে আলোচনা হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। আর ভুমি রক্ষা কমিটি ও প্রশাসনের মধ্যে দুতিয়ালী করছেন দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নবকমল চাকমা। জানা গেছে, এতোদিন শর্তের জালে আটকে থাকলেও এখন দুই পক্ষই নি:শর্ত আলোচনায় সম্মত হয়েছে।
দীঘিনালায় বিজিবি’র সদর দপ্তর স্থাপন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার কারণে এবার দীঘিনালায় বৈ-সা-বি উৎসব পালন নাও হতে পারে এমন সন্দেহ কাজ করছিল সাধারণ পাহাড়ি জনগোষ্ঠির মধ্যে। কারণ এর আগেও সাম্প্রদায়িক সমস্যায় বৈ-সা-বি উৎসব বর্জনের ঘটনা ঘটেছিল। বৈসাবী উৎসবের আগেই গেল শনিবার দীঘিনালা ভূমিরক্ষা কমিটি স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে বৈসাবি পালনের ঘোষনা দেন। দীঘিনালা উপজেলার পুকুরঘাট এলাকায় ঝক ঝক ক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে বৈসাবী পালনের কথা জানান দীঘিনালা ভূমিরক্ষা কিমিটির সদস্য সচিব ধর্মজ্যোতি চাকমা। এসময় অন্যান্যের মধ্যে বাবুছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সুগত প্রিয় চাকমা ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ‘র দীঘিনালা উপজেলা সমন্বয়ক কিশোর চাকমা উপস্থিত ছিলেন।
দীঘিনালার বাবুছড়ায় ‘বিজিবি সদর দপ্তর থাকবে কি, থাকবেনা, উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলো কোথায় পূনর্বাসিত হবে’ আলোচনার আগে এমন কোন শর্ত নয় এ কথা জানিয়ে দীঘিনালা ভূমিরক্ষা কিমিটির সদস্য সচিব ধর্মজ্যোতি চাকমা বলেন, ‘আলোচনার আগে আমরা কোন শর্ত দিতে চাইনা, প্রশাসনও কোন শর্ত না দিক। শর্তহীন আলোচনায় বসেই সমস্যার সমাধান হবে বলেও বলেন তিনি।
দীঘিনালায় আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে পাহাড়িদের সংঘর্ষের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় কোন আসামিকে যেন বৈসাবির র্যালি থেকে গ্রেফতার করা না হয় এ ব্যাপারেও প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে ভুমি রক্ষা কমিটির এ নেতা বলেন, বৈসাবি পাহাড়ি সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও বাঙ্গালীরা তা উপভোগ করে। আর সে কারণে সাম্প্রদায়িক দ্বিধাদ্বন্ধ দূর করতে এবার বৈসাবিতে পাহাড়ি-বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের যৌথ উপস্থিতিতে র্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে শর্তহীন আলোচনার আগ্রহকে সাধুবাদ জানিয়ে দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলুল জাহিদ পাভেল বলেন, ভূমিরক্ষা কমিটির কে কে প্রশাসনের কোন কোন কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করতে চায় তা জানার পরই বৈঠকের ব্যাবস্থা করা হবে। বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে কারো সাথে কোন বিরোধ থাকতে পারেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বৈসাবি পালনে আমরাও উপস্থিত থেকে মহা-সমারোহে পালনের উদ্যোগ নেব।
শর্ত বাদ দিয়ে আলোচনায় বসে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে জানিয়ে দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নবকমল চাকমা জানান, বিজিবি’র সদর দপ্তর প্রত্যাহার করে পূনর্বাসন সম্ভব হবেনা। সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব হবেনা। মামলা আইনি প্রক্রিয়ায় চলবে। এসব কথা দীঘিনালা ভূমিরক্ষা কমিটিকে জানানো হয়েছে। ভূমিরক্ষা কমিটি আলোচনার জন্য কার সাথে বসতে চায় তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে উত্তর পেলেই বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য যে, দীঘিনালার বাবুছড়ায় ৫১ বিজিবির সদর দপ্তর স্থাপন নিয়ে পাহাড়িদের সাথে বিরোধের সুত্রপাত হয়। এনিয়ে দীঘিনালা ভূমিরক্ষা কমিটির সাথে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ভূমিরক্ষা কমিটির ব্যানারে গতমাসের ১৯ তারিখ সংবাদ সম্মেলন করে ভূমিরক্ষা কমিটি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা নিরসন দাবী করে।
– ফাইল ছবি