চরম লোকসানে টেকনাফের তরমুজ চাষীরা

Teknaf-picA-12-03-20151মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ:

ভয়াবহ লোকসানের মুখে পড়েছেন টেকনাফের তরমুজ চাষীরা। শত শত তরমুজ চাষী চরম ক্ষতিতে পড়ে রীতিমত সর্বশান্ত হয়ে গেছে। ঋণগ্রস্ত কৃষকরা এখন গা ঢাকা দিয়েছে। মহাজনের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় কৃষকদের অনেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষক পরিবারে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। লাভের আশায় জমি বর্গা ও ঋণ নিয়ে ক্ষেত করে তরমুজ চাষীরা ঋণগ্রস্ত হয়ে এখন বিপাকে পড়ে গেছেন। এবছরের মত এমন লোকসানে টেকনাফের তরমুজ চাষীরা আর কখনো পড়েনি বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একদিকে আবহাওয়ার বিরুপ প্রভাব তথা অনাবৃষ্টির ফলে চলতি মৌসুমে তরমুজের ফলন ভাল হয় নি। অন্যদিকে লাগাতার হরতাল-অবরোধ এবং বহুমুখী টোল প্রদানে কৃষক সাধারণ চরম বিপদে পড়ে গেছে। সড়কে মাত্রাতিরিক্ত “লাইন খরচ” হওয়ায় লোকসানের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং চতুর্মুখী সমস্যার গ্যাড়াকলে সীমান্তের তরমুজ চাষীরা এবারে মহা সঙ্কটে পড়ে গেছেন তারা।

চলতি মৌসুমে চাষীরা চ্যাম্পিয়ন কোরিয়া, জাম্বু, জাপানি বিগ শো, গ্লোরি, চায়না আনারকলি, ট-পিল জাতের তরমুজের চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূল সঠিক মাত্রায় পরিচর্যা করতে পারলে এচাষে কৃষকদের প্রচুর টাকা আয় করা সম্ভব। চাষ ও বাজার প্রতিকূলতায় এবছরে তরমুজ চাষীদের লক্ষ লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। প্রতিকূল পরিবেশেও এমৌসুমে “চ্যাম্পিয়ন কোরিয়া” জাতের তরমুজ ফলনে ভাল হয়েছে বলে কিছু কৃষক জানিয়েছে।

উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালী, লেচুয়াপ্রাং, খন্ডাকাটা, মরিচ্যাঘোনা, রঙ্গিখালী, লেদা, আলীখালী, মোচনী, লম্বাঘোনা, হোয়াইক্যংয়ের রইক্ষ্যং, কম্বনিয়াপাড়া, মিনাবাজার, নয়াবাজার, মহেশখালীয়াপাড়া, ডেইগ্যাকাটা, লাতুরীখোলা, জুয়ারীখোলা, সদর ইউনিয়নের লেংগুরবিল, বৃহত্তর লম্বরী, মিঠাপানিরছাড়া, বাহারছাড়ার শামলাপুর, শীলখালী, জাহাজপুরা, মাথাভাঙ্গা, বড় ডেইল, কচ্ছপিয়া ও নোয়াখালী এলাকা ঘুরে দেখা যায় শত শত কৃষক তরমুজ চাষ করে লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

বাহারছড়া এলাকার কৃষক ছৈয়দুল্লাহ ও সাব্বির জানান, ২৪০শতক জমিতে দেড় লক্ষাধিক টাকা খরচে তরমুজ চাষ করে কেবল ৪০ হাজার টাকা পেয়েছি। হ্নীলা এলাকার কৃষক মোঃ হোছেন, ফরিদ আলম, শাকের, কৃষাণী সাবেকুন্নাহার ও ফরিদারা প্রত্যেকে এবার তরমুজ চাষ করে চরম ক্ষতিতে একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

পানখালী এলাকার তরমুজ চাষী রশিদ আহমদ ১লাখ ২০হাজার টাকা খরচে উৎপাদিত ক্ষেত মাত্র ৬হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। সে ঋণের টাকা শোধ করতে না পেরে সাগর পথে মালয়েশিয়া পালিয়ে গেছে বলে এলাকাবাসী সূত্র জানা যায়।

স্থানীয় অভিজ্ঞ কৃষক মহল জানান, এবারকার তরমুজ চাষীরা এতই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন যে, ঋণগ্রস্ত হয়ে তাদের অনেকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষকদের জন্য কৃষি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোঘণার দাবী উঠেছে। যাতে করে গ্রামীণ এসব কৃষককূল আবারও সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন।

উপজেলা কৃষি অফিসে কর্মরত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শফিউল আলম জানান, টেকনাফে প্রায় ৩৬০ হেক্টর জমি তরমুজ চাষের আওতায় রয়েছে। জমি প্রতি ৫০-৬০ টন তরমুজ উৎপাদিত হওয়ার কথা থাকলেও এবারে একটু ভিন্নতা দেখা গেছে। তিনি ক্ষতির পরিমাণ তেমনটি হয়নি বলে দাবী করেন।

অপর উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শেখ মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, তরমুজ ক্ষেতে ক্ষতির পরিমাণ এতই বেশী হয়েছে যে, ঋণগ্রস্ত অনেক কৃষক ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কৃষকের এত বেশী ক্ষতির জন্য তিনি লাগাতার হরতাল-অবরোধ ও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা বেশী দায়ী করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন