পাহাড়ি ছড়ায় নেই পানি, কষ্টে জনজীবন

fec-image

তীব্র গরম এবং বৃষ্টি না হওয়ায় পাহাড়ি ছড়াগুলো পানি শুন্য হয়ে পড়েছে। পাহাড়ি কোন ছড়ায় এখন পানির প্রবাহ দেখা যায় না। ছরায় পানি না থাকায় পার্বত্য জনপদে বসবাসকারিদের পানির কষ্ট চরমে উঠেছে। ছরায় পানি না পেয়ে মানুষ দূর দূরান্তে ছুটছেন পানির জন্য।

রাঙামাটি জেলার ১০ উপজেলার প্রায় প্রত্যেক এলাকাতেই পানির কষ্ট চরমে উঠেছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, রাঙামাটি সদর উপজেলাসহ কাপ্তাই, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, কাউখালী, নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি, বরকলসহ সব উপজেলার বাসিন্দারাই পানির কষ্ট ভোগ করছেন।

রাঙামাটি সদরের কুতুকছড়ি এলাকার বাসিন্দা চিক্কো চাকমা বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা হলো পানি। ছড়ায় পানি না থাকায় এ গ্রামের কয়েকশ’ মানুষ পানি সংকটে ভুগছে। অনেক দূর পায়ে হেটে নদীর পানি খেয়ে জীবন নির্বাহ করতে হয়।

একই এলাকার বাসিন্দা ফুলমতি দেওয়ান বলেন, যাদের সামর্থ আছে তার হয়তো গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানি সরবরাহ করে। কিন্তু আমাদের মতো দরিদ্র মানুষের পক্ষে নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব নয়। তীব্র গরম এবং বৃষ্টি না হওয়ায় থাকায় পাহাড়ি ছড়াগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় আমাদের কষ্টের শেষ নেই।

এ ব্যাপারে রাঙামাটি সদরে উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান মহসিন রোমান জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু কিছু এলাকায় প্রকৃতিগতভাবেই পানির কষ্ট থাকে। অনেক এলাকাবাসী একমাত্র পাহাড়ি ছরার উপর নির্ভরশীল। ছরায় পানি থাকলে মানুষ দৈনন্দিন কাজকর্মসহ সেচ কাজেও পানি ব্যবহার করে। কিন্তু প্রকৃতির উপর যেহেতু কারও হাত নেই তাই বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

তবে অনেক এলাকায় সরকারিভাবে এবং বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে ডিপ টিউবওয়েল বসিয়ে এবং বৈদ্যুতিক মটরের সাহায্যে পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেসব এলাকা অত্যন্ত দুর্গম এবং যেখানে ডিপ টিউবওয়েল বসানোর সুযোগ নেই অথবা মোটরের সাহায্যে পানি উঠানো সম্ভব হচ্ছে না সে সব এলাকার মানুষ পানির অভাবে বেশি কষ্ট পাচ্ছে।

তবে এই অবস্থা মেনে নিয়েই পাহাড়ি এলাকায় মানুষ বছরের পর বছর বসবাস করে আসছে বলেও তিনি জানান।

রাঙামাটি জনপ্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দে বলেন, গরমের দিনে গভীর নলকূপও পানি ঠিকমতো পায় না। অনেক দুর্গম এলাকায় মাটির ৩শ’ ফুটের নিচে পাথর থাকে, নলকূপ বসানোই যায় না।

অধিদফতরের হিসাবে, জেলায় ৫শ’ গভীর নলকূপ আছে। এখন ৩৫টি বাজারে গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে। এছাড়া প্রায় দেড় হাজার চাপকল রয়েছে। পুরো জেলায় সাকল্যে ৪শ’ ২৩টি বিদ্যালয়ে চাপকল বা গভীর নলকূপ আছে। সব নলকূপ সচল নেই। আবার শুকনো মৌসুমে এর অর্ধেকে পানি ওঠে না।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম বলেন, ৭শ’ ৯০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু অবস্থানের কারণে অনেক বিদ্যালয়ে পানি দেওয়া যায় না।

রাঙামাটি শহরের আলুটিলা উলুছড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেমন পানির সরবরাহ নেই। শিক্ষার্থী আছে ৬৪ জন। তারা এক থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে এখানে পড়তে আসে।

প্রধান শিক্ষক গৌরিকা তালুকদার বলেন, বিদ্যালয়টি টিলার চূড়ায় হওয়ায় নলকূপ বসানো যায়নি। এক কিলোমিটার দূরের এক ডোবা থেকে শৌচাগারের পানি আনা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন