পাহাড়ের দুর্গম সাজেকে ছড়িয়ে পড়ছে শিক্ষার আলো
আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা সাজেক ইউনিয়নে সরকারি বিদ্যালয় আছে, কিন্তু শিক্ষকরা যান না এমন অভিযোগ বহুদিনের। তাই যুগযুগ ধরে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত সাজেকের হাজারো শিশু। সেসব শিক্ষা বঞ্চিতদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করছে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা। ২০১০ সালে স্থানীয় গ্রামবাসীদের নিয়ে ২৫টি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৭০৬ বর্গমাইল দুর্গম সাজেক ইউনিয়নে অর্ধলক্ষ লোকের বসবাস। সেখানে ১৪০টি বেশি গ্রাম রয়েছে। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। আট-দশটি গ্রামের সরকারি বিদ্যালয় থাকলেও বাকি গ্রামগুলোতে কোনো বিদ্যালয় নেই। ২০১০ সালে ওই গ্রামগুলো বিদ্যালয় চালু করার উদ্যোগ নেয়। পরে জেলা পরিষদের সহযোগিতায় ২৫টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও দুটি বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র চালু করে।
স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা সাস এর সঙ্গে ওই সব বিদ্যালয় পরিচালনার ও অবকাঠানো তৈরির জন্য তিন বছরের চুক্তি হয়। ২০১৩ সালে সেপ্টেম্বর মাসে মেয়াদ শেষ হয়। চাকরি হারান সাসের নয় জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। বর্তমানে জেলা পরিষদ থেকে চুক্তি ভিত্তিক তিন কর্মকর্তা রয়েছেন। তাঁদেরও আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তি রয়েছে। শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৫টি বিদ্যালয়ে মোট ১ হাজার ৭৫৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়া দুটি বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রে ৬০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। চুক্তি ভিত্তিতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫১ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয় জেলা পরিষদ থেকে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠার শুরুতেই সরকারিভাবে পাঠদান অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু জেলা শিক্ষা কার্যালয়ে ফাইলবন্দি করে রেখে দেওয়া হয়। এতে সম্প্রতি সরকার ঘোষিত রেজিষ্ট্রার, পাঠদান অনুমতি পাওয়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারিকরণ আওতায় আসেনি। পরে উপজেলা শিক্ষা কার্য়ালয় থেবে সুপারিশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সরকারিকরণের দ্বিতীয় ধাপে তালিকা আসার কথা থাকলেও আসেনি। গত ২৩ ডিসেম্বর নন্দারাম বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সত্যপ্রিয় চাকমা জেলা শিক্ষা কার্যালয়ে ফাইলগুলো পাঠানো হয়েছে কিনা খবর নিতে যান। ফেরার পথে দীঘিনালা উপজেলার খবাখালী ইউনিয়নের শান্তি রঞ্জন কার্বারী পাড়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনার মারা যান। তাঁর সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেল চালকও নিহত হন।
উলুছড়ি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক লক্ষী কুমার চাকমা বলেন, আমরা পাঁচ হাজার ২০০ টাকা বেতন পাই। আমাদেরও কোনো রকমে সংসার চলে এবং শিক্ষার্থীরাও শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু প্রকল্প মেয়াদ শেষ হলে এবং জাতীয়করণ না হলে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
দক্ষিণ মেলাছড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোবিন্দ চাকমা বলেন, পাঠদান অনুমতির জন্য প্রতিষ্ঠার পর সমস্ত কাগজপত্রসহকারে ফাইল পাঠানো হয়েছে। তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে না পাঠিয়ে শুধু তালিকা পাঠিয়েছেন। এতে আমাদের বিদ্যালয়গুলো দ্বিতীয় ধাপেও জাতীয় করণের তালিকা আসেনি।
উন্নয়ন সংস্থা সাসের বাঘাইছড়ি সমন্বয়ক শুভাশীষ চাকমা বলেন, আমরা বিদ্যালয় নির্মাণ, আসবাবপত্র সরবরাহ ও বিদ্যালয়গুলো তত্তাবধান করতাম। যেসব এলাকায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হযেছে সেখানকার লোকজন অত্যন্ত নিরীহ। বাইরে গিয়ে তাঁদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করার কোনো অর্থ নেই। সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা জানালেন, আমার ইউনিয়নে বিদ্যালয় বিহীন এলাকা ২৫টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। শিক্ষাবঞ্চিত শিশুরা শিক্ষা সুযোগ পাচ্ছে। সরকারি বিদ্যালয় নয়টি রয়েছে কিন্তু বহিরাগতদের নিয়োগ দেওয়ায় বাঘাইহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া আটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা ঠিকমত ক্লাস করেন না। সেকারণে ২৫টি বিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে স্থানীয়দের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এগুলো জাতীয়করণ হলে আর কোনো সমস্যা হবে না।
উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো, মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, সাজেকে ২৫টি বিদ্যালয়ে আমরা শুধু বই দিয়ে থাকি। বাকিরা বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা ও জেলা পরিষদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। পাঠদানের অনুমতির জন্য ফাইলগুলো জেলা শিক্ষা কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শুরু বিদ্যালয়ের তালিকা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপেও তালিকায় আসেনি।