আদালতের নথি জালিয়াতি করে জামিন, আসামির দেশ ত্যাগে রেড এলার্ট
কক্সবাজার সদরের পিএমখালীতে মোরশেদ আলী ওরফে বলি মোরশেদ হত্যা মামলার নথি জালিয়াতি করে জামিনে কারামুক্ত দুই নম্বর আসামি মোহাম্মদ আলি প্রকাশ মোহাম্মদের ব্যাপারে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আমির হোসাইন।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস পাঠিয়ে দিয়েছি। জালিয়াতি করে জামিনপ্রাপ্ত আসামি মোহাম্মদ যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সতর্ক। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) দুপুরে কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন এডভোকেট মোহাম্মদ আমির হোসাইন।
তিনি বলেন, হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি মোহাম্মদ আলি প্রকাশ মোহাম্মদের স্থলে ২২ নং আসামি (জামিনপ্রাপ্ত) ছেলে মোহাম্মদ ইয়াসিনের নাম বসিয়ে দেয়া হয়েছে।
শুধু তাই নয়, রিমান্ডের প্রতিবেদন, এফআইআর, এজাহার ও ফৌজদারি মিস মামলার আদেশ নামাতেও জঘন্য জালিয়াতি করেছে আসামিপক্ষ। যা সুস্পষ্ট আদালত অবমাননার শামিল। আসামিপক্ষ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে এই জালিয়াতির কাজটি সেরেছেন শক্তিশালী একটি চক্র। কয়েকজনকে ইতোমধ্যে আমরা চিহ্নিত করেছি। সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জালিয়াতির বিষয়টি কীভাবে, কখন অবগত হয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে এডভোকেট মোহাম্মদ আমির হোসাইন বলেন, কক্সবাজার দায়রা জজ আদালতের মিস মামলা ৩২৫১/২২ নথিতে সব ঠিক আছে। আমরা সব দেখেছি। উচ্চ আদালতের আবেদনের ফাইলে জালিয়াতি করেছে।
আদালতের নথিপত্র:
জালিয়াতির জামিনে ৭ জুলাই কারামুক্ত হন আসামি মোহাম্মদ আলি ওরফে মোহাম্মদ। সে দিনই আমরা অবগত হই। আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবস্থা নিতে পারিনি।
তিনি বলেন, গত ৩১ মে জেলা জজ আদালতে ৫ জনের জামিন প্রার্থনা করা হয়। তাতে আবেদন নামঞ্জুর করেছেন বিচারক। আদেশনামাও ঠিক আছে। কিন্তু ওই আদেশনামার তথ্য গোপন করে অন্য আসামিদের বাদ দিয়ে শুধু একজন মোহাম্মদের নামে উচ্চ আদালত জামিন নিয়েছে জালিয়াত চক্রটি। এর মাধ্যমে আইন আদালত ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইতোমধ্যে উচ্চ আদালতকে অবগত করেছি। বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী এ নিয়ে কাজ করছেন। আসামির জামিন বাতিল করাসহ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, একটি শক্তিশালী চক্র এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ইতোমধ্যে অনেকের নাম আমাদের হাতে এসেছে। আইনকে ফাঁকি দিয়ে জালিয়াতি করে কারো রক্ষা হবে না। সে বিষয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি।
নথি জালিয়াতির সঙ্গে একটি মধ্যস্বত্বভোগী চক্র সরাসরি জড়িত বলে জানিয়েছেন পিপি ফরিদুল আলম।
সংবাদ সম্মেলনে, অ্যাডভোকেট মহি উদ্দিন, অ্যাডভোকেট নুর মোহাম্মদ, অ্যাডভোকেট রিদুয়ান আলী, অ্যাডভোকেট জুবাইরুল ইসলাম, নিহত মোরশেদ আলির ভাই মামলার বাদি জাহেদ আলি, খোরশেদ আলি, রাশেদ আলি, শাহেদ আলিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৭ এপ্রিল ইফতারের আগ মুহূর্তে মোরশেদ আলিকে জনসম্মুখে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ-যুব লীগের ১০ নেতাসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে গত ৯ এপ্রিল কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই জাহেদ আলি। যার মামলা নং- ১৭/২২৭। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ১০ জন আসামি রয়েছে।
নিহত মোরশেদ আলী পিএমখালীর মাইজপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মরহুম ওমর আলীর ছেলে।