ইইউ’র সংলাপে গুরুত্ব পাবে রোহিঙ্গা, নিরাপত্তা ও যুদ্ধের বিষয়

fec-image

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক সংলাপে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইইউ’র সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা ও বিস্তৃতি এবং বর্তমান জটিল ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে রাজনৈতিক সংলাপ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। থাকবে বৈশ্বিক সমসাময়িক পরিস্থিতি, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যু। এছাড়া ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, কানেকটিভিটি, রোহিঙ্গা ইস্যু, নিরাপত্তা, অবৈধ অভিবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো আলোচনার টেবিলে থাকবে।

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৪ নভেম্বর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং ইউরোপিয়ান এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিস ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এনরিকে মোরার মধ্যে ওই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

সংলাপে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি নিরাপত্তা, রোহিঙ্গা ও মিয়ানমার, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি ও আঞ্চলিক সহযোগিতা, কানেক্টিভিটি, বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য দেশ ও সংস্থার সম্পর্ক, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। মোটা দাগে ২০০১ সাল থেকে চলা আসা বাংলাদেশ-ইইউ জয়েন্ট কমিশনের বৈঠকে আলোচিত তিনটি বিষয় অর্থাৎ উন্নয়ন সহযোগিতা, বাণিজ্য এবং সুশাসন ও মানবাধিকারের অতিরিক্ত বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা হবে।

এ বিষয়ে একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ২০০১ সালের বিশ্ব ব্যবস্থা ও বাংলাদেশের অবস্থা থেকে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটি আমরা অনুভব করছিলাম—বাংলাদেশ-ইইউ জয়েন্ট কমিশনের বৈঠকে রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনার কোনও সুযোগ নেই। ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জন্ম নেওয়া নতুন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য এই প্ল্যাটফর্ম। এধরনের রাজনৈতিক সংলাপ ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ আরও কয়েকটি দেশের করে থাকে ইইউ।

তিনি বলেন, এই রাজনৈতিক সংলাপের উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি কৌশলগত দিক-নির্দেশনা দেওয়া যাতে করে এর সঙ্গে জড়িতরা বুঝতে পারে তাদেরকে কী করতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে অক্টোবরে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠকে এই সংলাপে বসার বিষয়ে দুইপক্ষের ঐকমত্য হয়।

নিরাপত্তা:
নিরাপত্তা বিষয়টি নিয়ে এই ফোরামে বড় আকারে আলোচনা হবে। নিরাপত্তা এজেন্ডাতে সন্ত্রাসবাদ, সাইবার সিকিউরিটি, শান্তিরক্ষা, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক অপরাধসহ আরও বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

এ বিষয়ে একটি সূত্র জানায়, মৌলিক নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে এখানে আলোচনা হবে না। কিন্তু মৌলিক নয় যেমন খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।

দুইপক্ষের মধ্যে বিষয়গুলো নিয়ে সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরি এবং বিস্তৃত করার বিষয়ে উভয়পক্ষ আলোচনা করবে বলে তিনি জানান।

ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি ও আঞ্চলিক সহযোগিতা:
ইইউ ইতিমধ্যে তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি ঘোষণা করেছে। ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তৈরি বিষয়ে কাজ চলছে। এছাড়া এই অঞ্চলের দেশগুলোর সহযোগিতার বিভিন্ন মেকানিজমও রয়েছে।

একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, পৃথিবীর শক্তির যে ভরকেন্দ্র সেটি এখন এশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ার কারণে এ অঞ্চলের গুরুত্ব আগের যেকোনও সময়ের থেকে বেশি।

ইইউ’র কাছে আঞ্চলিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশ এ অঞ্চলে কীভাবে অবস্থান নিচ্ছে সেটি তারা জানতে চাইবে—এটি স্বাভাবিক বলে তিনি জানান।

রোহিঙ্গা ও মিয়ানমার পরিস্থিতি:
বাংলাদেশের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। অন্যদিকে ইইউ’র কাছে মিয়ানমারে স্বাভাবিক পরিস্থিতি।

এ বিষয়ে একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে এর সমাধানে সমর্থন দিয়ে আসছে ইইউভুক্ত দেশগুলো। কিন্তু গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পরে মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে পিছনে চলে আসে।

দুইপক্ষ তাদের স্ব স্ব গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তুলে ধরবে এবং সমস্যা সমাধানে কীভাবে কাজ করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা হবে বলে সূত্র জানায়।

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত:
রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ইইউ। অন্যদিকে বাংলাদেশ জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে বিচক্ষণতার সঙ্গে অবস্থান নিচ্ছে।

একটি সূত্র জানায়, ইইউ’র কাছে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্ধুপূর্ণ দেশগুলোর কাছ থেকে আরও বেশি সমর্থন প্রত্যাশা করে জোটটি। কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ, আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা এবং ভবিষ্যতে কী হতে পারে সেটি বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন