ঋতুপর্ণার মা ক্যান্সারে আক্রান্ত : অর্থাভাবে করতে পারছেন না চিকিৎসা

fec-image

পাহাড়ের নারী ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমা যখন জাতীয় দলে হয়ে দেশের নারী ফুটবল দলকে বিশ্বের অন্যতম উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই দেশের এই কৃতি ফুটবলারের মা ভূজোপতি চাকমা ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাভাবে করাতে পারছেন না চিকিৎসা।

রাঙামাটি কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার মগাছড়িতে জাতীয় নারী ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়ি। উপজেলা শহরের মুল সড়ক থেকে পায়ে হেঁটে প্রায় সাড়ে ৩-৪ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকা মাড়িয়ে যেতে হয় তার বাড়ি। একমাত্র ভাই তিন বছর আগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ফুটবল থেকে আয় করা অর্থ দিয়ে চলে ঋতুপর্ণার পরিবার।

সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রশাসন থেকে আশ্বাস দেয়া হয় ঋতুদের গ্রামের প্রত্যন্ত রাস্তা সংস্কার করা হবে, ঋতুকে নতুন ঘর দেয়া হবে। বেকার বোনদের সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। সরকারের এসব আশ্বাসের কোনটাই বাস্তবায়ন হয়নি।

তাছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে ঋতুর মা দুরারোগ্য ব্যাধি ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। অর্থের অভাবে করানো যাচ্ছেনা চিকিৎসা। মায়ের চিকিৎসা সহায়তাসহ কৃতি ফুটবলার ঋতুর পরিবারের সংকট নিরসনে দেশের মানুষসহ সরকারি সহায়তা চান তার পরিবার।

ঋতুপর্ণার বড় বোন পাম্পী চাকমা বলেন, আমরা মা ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। অর্থের অভাবে আধুনিক ও উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা করতে পারছি না। দেশের এই কৃতি ফুটবলারের মায়ের চিকিৎসা সেবায় সরকার এবং দেশের মানুষের সহায়তা চেয়েছেন ঋতুপর্নার বোন। পাশাপাশি সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চান তাদের বিধ্বস্ত ভাঙ্গা ঘরের পরিবর্তে নতুন ঘর, এলাকার রাস্তা ও পরিবারের বেকার বোনদের সরকারি চাকরি দেয়ার দাবি করেন তিনি।

অসুস্থ শরীর নিয়ে ঋতুপর্ণার মা ভূজোপতি চাকমা বলেন, ঋতুর সব খেলাই দেখেন। ঋতুর গর্বিত মা ভূজোপতি চাকমার আশা তার মেয়ে একদিন ফুটবলে বিশ্ব জয় করবে। পাশাপাশি পরিবার নিয়ে হতাশার কথা জানিয়েছেন ঋতুর মা।

পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমা, আনাই মঘিনি, আনু মঘিনি, রুপনা চাকমাসহ শত শত খেলোয়ার যার হাত ধরে তৈরি হয়েছে তিনি হলেন রাঙামাটির মঘাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বীর সেন চাকমা।

এ ক্রীড়া সংগঠক বলেন, আমি চাই ঋতুর ভবিষ্যতের জন্য একটি সরকারি চাকরি জরুরি। পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসা করানো এবং সরকারের আশ্বাস অনুযায়ী তার বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হোক। ঋতুপর্ণার সকল সংকট নিরসনে সরকার এগিয়ে আসুক এমনটা প্রত্যাশা করছি যোগ করেন ঋতুর স্কুল জীবনের এ শিক্ষক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাফ জিতে আসার পর সাংসারিক অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি দেশের অন্যতম কৃতি ফুটবলার ঋতুর। ২০১৫ সালে ক্যানসারের মারা যান ঋতুপর্ণার বাবা বরজ বাঁশি চাকমা। বাবার অনুপ্রেরণায় ফুটবলে এসেছেন ঋতুপর্ণা। পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে পড়ছেন এই তারকা ফুটবলার।

এবার এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় ম্যাচে ঋতুপর্ণারা মিয়ানমারকে হারিয়েছে ২-১ গোলে। দুটি গোলই করেছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে এক গোল করেন তিনি। দেশের ফুটবলকে অন্যতম উচ্চতায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ঋতুপর্ণারা দারিদ্রতার কষাঘাতে হারিয়ে যাবে না এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: রাঙামাটি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন