এক রোগীকে ১৭টি ঔষধ: উখিয়ায় ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে নানান প্রতিক্রিয়া

fec-image

কক্সবাজারের উখিয়ায় এক রোগীকে ১৭টি ঔষধ লিখার কারণে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ নানান প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, গত ৯ অক্টোবর রাতে হাজেরা বেগম নামের এক মহিলা রোগীকে পরামর্শ পত্রটি দেন উখিয়ার কোটবাজারের বেসরকারী অরিজিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: এ.এস.এম তৌহিদুজ্জামান।

এতে ইনজেকশনসহ ১৭টি ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেন তিনি। একই দিন পরামর্শ পত্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাওর হলে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয় দেশব্যাপী। কেউ কেউ ওই ডাক্তার যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন বলে মন্তব্য করলেও অধিকাংশ নেতিবাচক মন্তব্য করতে দেখা গেছে।

রুহুল আমিন নামের একজন বলেছেন, ডাক্তার ইট রাইট। ওই মহিলা অনেক সমস্যায় জর্জরিত এক রোগী। উনার লাঞ্চ, হার্ট,
লিভার, এ্যাজমা ও ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে।

বেলাল রিজভী নামে এক গণমাধ্যমকর্মী বলেছেন, রোগী কি খাবার খাবে নাকি ঔষধ? এস.এম মশিউর রানা লিখেছন, সাধেই কি মানুষ চিকিৎসার জন্য ভীন দেশে যায়? আব্দু ছালাম নামে একজন বলেছেন, সারা জীবনের ঔষধ।

সনজিত বড়ুয়া নামে একজন, ১০ রোগের অভিজ্ঞ উল্লেখ করে ডাক্তারকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন, ঔষধ খেলে হবে, ভাত খেতে
হবে না। তাহলে কিছু টাকা সাশ্রয় হবে। ধন্যবাদ ১০ রোগের অভিজ্ঞ ডাক্তার।

ডা. অখিল সরকার লিখেছেন, প্রেসক্রিপশন দেখে মনে হচ্ছে উক্ত রোগী ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের অসুখ, শ্বাসকষ্টসহ অনেক গুলো ক্রনিক ডিজিজ আছে। এই জন্য হয়ত: বেশি ঔষধ দিতে হয়েছে এবং সব গুলো অসুখই অনিরাময়যোগ্য বলে অনেক ঔষধ সারাজীবন খেয়ে যেতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারদেরও এতো ঔষধ লিখতে অসহায় হয়ে যেতে হয়। রোগীর ভালোর থাকার প্রয়োজনে খারাপ লাগলেও অনেক ঔষধ লিখতে হয়।

ভাইরাল হওয়া প্রেসক্রিপশন সম্পর্কে জানতে চাইলে সেবাগ্রহণকারী রোগী হাজেরা বেগম বলেন, আমি ডাক্তার রবিউল ইসলাম রবির একজন নিয়মিত রোগী। ওই দিন হঠাৎ আমার শ্বাসকষ্টসহ উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গেলে ডা: রবিথর অনুপস্থিতিতে চিকিৎসা সেবা দেন ডা: এ.এস.এম তৌহিদুজ্জামান। তাঁর পরামর্শ পত্র অনুযায়ী ঔষধ সেবন করে বর্তমানে আমি সুস্থ আছি। কে বা কারা আমাকে দেয়া প্রেসক্রিপশনটি ফেসবুকে পোষ্ট করেছে, তা আমি জানিনা। বিষয়টি দু:খজনক বলে তিনি জানান।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অরিজিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: এ.এস.এম তৌহিদুজ্জামান বলেন, মূলত: হাজেরা বেগম নামে ওই মহিলা রোগীটিকে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন ডাক্তার রবিউর রহমান রবি। ওই দিন রবি স্যারের অনুপস্থিতিতে তাঁর পূর্বের প্রেসক্রিপশন দেখে শুধুমাত্র ২টি ঔষধ যোগ করি। তাছাড়া ওই রোগীর বেশকিছু সমস্যা রয়েছে যা নিয়মিত ঔষধ সেবন না করলে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে।

অরিজিন হাসপাতালের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল করিম বলেন, হাসপাতালটি গ্রামীণ জনপদের সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি করোনাকালীন ডাক্তার, নার্স জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তবে কোন রোগীকে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ ঔষধ দিয়ে হয়রানি করা আমাদের লক্ষ্য নয়। হয়ত: উক্ত রোগীর বিভিন্ন রোগের সমস্যার কারণে নিশ্চয় অভিজ্ঞ ডাক্তার সার্বিক দিক বিবেচনা করে ঔষধ গুলো লিখেছেন।

এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা রঞ্জন বড়ুয়া রাজন বলেন, রোগের ধরণ ভেদে ৪০টি পর্যন্ত ঔষধ দেয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে কি কারণে এতো গুলো ঔষধ লিখেছেন তা একমাত্র তিনি জানেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা: মো: মাহবুব রহমান বলেন, বিষয়টি তিনি অবগত নন। তবে এ বিষয়ে রোগী যদি অভিযোগ করেন তাহলে এক্ষেত্রে তদন্ত সাপেক্ষে বিহীত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উখিয়া, প্রেসক্রিপশন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন