কক্সবাজারে দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব সংলাপ সম্পন্ন

fec-image

শেষ হলো কক্সবাজারে দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব সংলাপ। সংলাপে মন্ত্রীসহ ভারতের ২৬ জন এবং সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ বাংলাদেশের ৫৪ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। সংলাপের সমাপনী অধিবেশনে পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান সভাপতিত্ব করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

গত শুক্রবার বিকালে কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানীর তারকা হোটেল রয়েল টিউলিপের বলরুমে বাংলাদেশ-ভারত কৌশলগত অবস্থান সংলাপের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি।

প্রথমদিনের অধিবেশনে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেছেন, দীর্ঘ স্থল সীমান্ত, ৫৪টি নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব সংলাপ ভূমিকা রাখতে পারে। তথ্য প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সমুদ্র অর্থনীতিসহ পারস্পরিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দু’দেশের মাঝে মতবিনিময় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। এ ছাড়া দু’দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে ভারসাম্য আনার ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

স্পিকার বলেন, বাংলাদেশ ভারত বন্ধুত্ব সংলাপ উভয় দেশের সম্পর্কে নবদিগন্তের সূচনা করেছে।

বন্ধুত্ব সংলাপ এমন একটি প্লাটফরম যেখানে মতবিনিময়ের মাধ্যমে উভয় দেশ পারস্পরিকভাবে লাভবান হতে পারে। সংসদীয় কূটনীতি ব্যবহার করে দু’দেশের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপ দু’দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার করবে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক গভীর এবং ঐতিহাসিক- যার সূচনা ১৯৭১ সালে বাংলদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভারতের সহযোগিতা আজও বাংলাদেশের জনগণ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বাংলাদেশ পালন করবে মুজিব বর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে দু’দেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় অবস্থান করবে। স্পিকার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনসহ দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে ভারতের ভূমিকা অসামান্য। এ সময় মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি, পানি চুক্তিসহ বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর দু’দেশের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে বেশ ফলপ্রসূ ভূমিকা রেখেছে।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিশ্বে রোল মডেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ উক্তি উল্লেখ করে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মোদি সরকার কার্যকর ভূমিকা রাখছে। দু’দেশের সম্পর্ক সুরক্ষিত করে পারস্পরিক বিশ্বাসযোগ্যতার মাধ্যমে সন্ত্রাস দমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উভয় দেশের ভূমিকা মাইলফলক হয়ে থাকবে। ভারতের আসাম রাজ্যের অর্থ, উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা এবং পূর্তমন্ত্রী হিমান্তা বিশ্ব শর্মা বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে আসামেও শান্তি বজায় রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের এ ভূমিকার জন্য আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

তিনি বলেন, ভারতের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের সম্পর্ক অত্যন্ত সূদৃঢ়। আসাম থেকে যে পরিমাণ পণ্য বাংলাদেশ আমদানি করা হয় তার তুলনায় বাংলাদেশের পণ্য অনেক বেশি রপ্তানি হয়। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে বাণিজ্যের এর ধারাবাহিকতা এবং সম্পর্ক অটুট থাকবে।

বিজিপির (ভারত) জাতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব ভারানাসী বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজ নিজ দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিগত নির্বাচনে দুই প্রধানমন্ত্রীই ভূমিধস বিজয় অর্জন করেছেন। দুর্নীতি ও সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে দুই দেশ জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীই তৃণমূলে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তিনি বলেন, সীমান্তের বেড়া প্রতিবেশী দুই দেশের বিভক্তির জন্য নয়, নিরাপত্তার জন্য দেয়া হয়েছে। সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ বড় সমস্যা। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ অনন্য নজির স্থাপন করেছে। রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য বাংলাদেশ কাজ করছে। এক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশের পাশে রয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় রাজ্যসভার এমপি এম জে আকবর, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাশ, বিমসটেক এর সাধারণ সম্পাদক এম শহিদুল ইসলাম, ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশের সভাপতি ও টেকনো ইন্টারন্যাশনাল কলেজ অব টেকনোলজির পরিচালক ড. রাধা তমাল গোস্বামী। ভোট অব থ্যাংস প্রদান করেন আলোক বাংশাল।

এ সংলাপে সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর সভাপতি হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, ফ্রেন্ড বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক আ স ম সামশুল আরেফীন, কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরোয়ার কমল, চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুলসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে অতিথিদের সম্মানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন