কক্সবাজার জেলায় ১দিনে ৬লাখ ১৮ হাজার টাকা জরিমানা
করোনাভাইরাস নিয়ে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন বাজার মনিটরিং অব্যাহত রেখেছেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কমিটি। নির্ধারিত দামের চাইতে বেশি দামে পণ্য বিক্রি, দোকানের সামনে মূল্য তালিকা না ঝুলানোর অপরাধে কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, উখিয়া ও টেকনাফে বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে একদিনে ৬ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করেছে প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
২১ মার্চ (শনিবার) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত দিনব্যাপী অভিযানে এ জরিমানা করে।
এদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্কে গত কয়েকদিন জেলার খুচরা ও পাইকারি বাজারগুলোতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বমুখীর অভিযোগ আনেন সাধারণ ক্রেতারা। চাল, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ সকল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে কক্সবাজার জেলার বাজারগুলোতে।
কক্সবাজার শহরের বড় বাজার, চকরিয়া, টেকনাফ পৌরসভা ও উখিয়ার বিভিন্ন বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মোট ৬ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত টিম।
কক্সবাজার সদর : অভিযানে নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার সদরের এ্যাসিল্যান্ড নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: শাহরিয়ার মোক্তার। অভিযানকালে নির্ধারিত মূল্যের থেকে অধিক মূল্যে চাল বিক্রি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য তালিকা না থাকায় শহরের বড় বাজারের চাল ব্যবসায়ী ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীকে মোট ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। একজন পাইকারী ব্যবসায়ীকে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এ অভিযানে ইমন স্টোকে ৫০ হাজার, বার আওলিয়া স্টোর ও মোক্তার স্টোর ৩০ হাজার, হাসান ট্রেডার্স, রিমা স্টোর ও হমেল ট্রেডার্সকে ২০ হাজার এবং রাসেল ট্রেডার্সকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই অভিযোগে কাশেম এন্ড সন্স এর মিজানুর রহমানকে আটক ও ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
চকরিয়া সংবাদদাতা জানান, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দোকানে পৃথক অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত। এ সময় অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রি ও মজুদের দায়ে ২৬ জন দোকানদারের কাছ থেকে ৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নুরুদ্দীন মোহাম্মদ শিবলী নোমান এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হোসেন শনিবার (২১ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে একটানা সন্ধ্যা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় তাঁরা উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের বানিয়াছড়া স্টেশন, খুটাখালী বাজার, ডুলাহাজারা বাজার, বদরখালী বাজার ও চকরিয়া পৌর সদরের ২৬টি ভোগ্য পণ্যের দোকানে অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রি ও মজুদের দায়ে ২৬জন দোকানদারের কাছ থেকে ৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। পৃথক অভিযানের সময় পুলিশ, আনসার সদস্য ও উপজেলা প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুরুদ্দীন মোহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, করোনা ইস্যুকে পুঁজি করে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন বাজারে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত দামে ভোগ্যপন্য বিক্রির অভিযোগ পেয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ও নিয়মিত বাজার মনিটরিং কর্মসূচীর আওতায় শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভ্রাম্যমান আদালতের পৃথক অভিযান চালানো হয়।
এ সময় পৌর এলাকার তিনটি ভোগ্য পণ্যের দোকানে অভিযান চালিয়ে তিন দোকান মালিকের কাছ থেকে ১৮ হাজার টাকা, বানিয়ারছড়া স্টেশনের এক মিল মালিক ও দুই মুদির দোকানদারের কাছ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও বদরখালী বাজারের ৫টি ভোগ্যপণ্যের দোকানে অভিযান চালিয়ে ৭৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
অপরদিকে শনিবার সকাল ১০টা থেকে একটানা সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলা খুটাখালী ও ডুলাহাজারা বাজারের ১৫টি ভোগ্যপণ্যের দোকানে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তানভীর হোসেন।
এ সময় অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রি ও মজুদের দায়ে ১৫জন দোকানদারের কাছ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ও নিয়মিত বাজার মনিটরিং কর্মসূচীর আওতায় এসব অভিযান চালানো হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটট নুরুদ্দীন মোহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চালের আড়তদার, মিল মালিক ও মুদির দোকানদারদের কাছে প্রায় ৪০০ মে: টন চাল মজুত রয়েছে।
ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা যাতে এসব চাল অতিরিক্ত দামে গ্রাহকদের নিকট বিক্রি করতে না পারেন সে ব্যাপারে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে ট্যাক অফিসার হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে টেকনাফ পৌরসভার বিভিন্ন বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়েছে। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: সাইফুল ইসলাম।
অভিযানে চালের বাজার, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও মসলা, আলু ও কাঁচাবাজারে অভিযান চালানো হয়। এ সময় অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রি ও দোকানের সামনে মূল্য তালিকা না থাকায় জরিমানা ও সতর্ক করা হয়।
জানা যায়, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: নিকারুজ্জামান ও সহকারী কমিশনার ভূমি মো: আমিমুল ইসলাম খান উপজেলার কোর্টবাজার, মরিচ্যা বাজার, সোনারপাড়া বাজার, ভালুকিয়া বাজার, পালংখালী বাজার, থাইংখালী বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এসময় বিভিন্ন অপরাধে জরিমানা আদায় করা হয়। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সমূহের অতিরিক্ত মূল্য না নেয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
বিশেষ করে মরিচ্যা বাজারের ৬টি মুদির দোকানকে নগদ এক লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এসময় বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও দোকানকে সকর্ত করা হয়। বাজার মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন নির্দেশ দিয়েছেন তাই দেশের সংকটাপন্ন মুহূর্তে ব্যবসায়ীদেরকে অন্যান্য পেশাজীবিদের মত সুবিধা বঞ্চিত মানুষকে সহযোগিতা করার অনুরোধ করেন এবং কোন অবস্থাতে দ্রব্যমূল্যের অতিরিক্ত মূল্য না নিতে নির্দেশ প্রদান করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন-হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো: শাহ আলম, প্যানেল চেয়ারম্যান মনজুর আলম, আজিজুর রহমানসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ ও সরবরাহ আছে। কাউকে আতঙ্কিত হয়ে প্রনের বেশি পণ্য না কেনার অনুরোধ জানান তিনি। জেলা প্রশাসক অনুরোধক্রমে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, করোনাভাইরাস আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা যেন এর বাড়তি মুনাফা না নেন। সর্বস্তরের মানুষকে তিনি সরকার ও রাষ্ট্রের পাশে থাকার আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, জেলার বিভিন্ন বাজারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। অধিক মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রয়ের অপরাধে মোট ৬ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের দরুণ উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি রোধকল্পে কক্সবাজার জেলায় বাজার মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।