পার্বত্যনিউজকে দেয়া একান্ত স্বাক্ষাৎকারে ড. এফ দীপঙ্কর মহাথেরো

কোনো সন্দেহ নেই জেএসএস সন্ত্রাসী শান্তিবাহিনীরাই আমার বৌদ্ধ বিহার পুড়িয়ে দিয়েছে

fec-image

এফ দীপঙ্কর আরো বলেন, আমি যেহেতু মানুষকে বলছি তোমরা জীব হত্যা করো না, মদ গাঁজা খেয়ো না, সন্ত্রাস করো না, জোর জুলুম করোনা, চাঁদাবাজী করো না। কিন্তু সেটা তো তারা মানতে রাজী নয়। তারা বলছে আমরা করবো তাতে তোমার কি? তোমার কারণে তো মানুষ অন্য দিকে চলে যাচ্ছে। ওদের বক্তব্য হচ্ছে, আমি ওদের সন্ত্রাসী পথের বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছি। আমার কারণে বহু মানুষ ভালো হচ্ছে, শান্তির পথে ফিরে আসছে, এই সন্ত্রাসীদের তা সহ্য হচ্ছে না। তারা চায় চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসী, জোর জুলুম হত্যা, মারপিট এসব করে চলবে।

শুক্রবার রাতে পুড়িয়ে দেয়া রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ধুপশীল আন্তর্জাতিক বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের প্রধান ভিক্ষু ড. এফ দীপঙ্কর মহাথেরো বলেছেন, কোনো সন্দেহ নেই জেএসএস সন্ত্রাসী শন্তিবাহিনীরাই আমার বৌদ্ধ বিহার পুড়িয়ে দিয়েছে। শনিবার বিকেলে পার্বত্যনিউজকে দেয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবী করেন।

সন্ত্রাসীদের অব্যহত হুমকির মুখে বর্তমানে বান্দরবানে বসবাসরত এই ভিক্ষু বলেন, শান্তিবাহিনী জেএসএস সন্ত্রাসীরা ভিক্ষুদের উপর হামলা করছে, বিহারে নির্মাণে বাধা দিচ্ছে, বৌদ্ধ বিহার জ্বালিয়ে দিচ্ছে, ভক্তদের উপর গুলি চালাচ্ছে, আমার ভক্তদের আহত করছে, আমাকে হুমকি দিচ্ছে। সরকার ও প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন এভাবে আর কতোদিন চলবে?


আরো পড়ুন:

পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের লাগানো আগুনে রাঙামাটিতে বৌদ্ধ বিহার পুড়ে ছাই


ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, গতকাল রাত ১১ দিকে আমি আমার ভক্ত বিদ্যা সাগর তঞ্চঙ্গাকে টেলিফোন করি। তখনও দাও দাও করে আগুন জ্বলছিলো। যে সেবক ওখানে ছিলো তার নাম সুরেন্দ্র কান্তি তঞ্চঙ্গা। তাকে মারধোর করে ওখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।

ওই সেবকের কাছ থেকে যেটা শুনেছি, শান্তিবাহিনীর বন্দুকধারীরা ১০-১৫জন বিহারে যায় আনুমানিক রাত ৯টা বা তার একটু পরে। সন্ত্রাসীরা অকটেন বা গান পাউডার জাতীয় দাহ্য পদার্থ এবং শুকনো বাঁশ সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল। মন্দিরটি পোড়াতে তারা এগুলো ব্যবহার করে যাতে দ্রুত পোড়ানো যায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি দাহ্য পদার্থের বোতল ও কিছু শুনকো বাঁশ উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো বর্তমানে স্থানীয় মহিলা মেম্বারের হেফাজতে রাখা হয়েছে। ওই সন্ত্রাসীদের কাছে দুইটি বন্দুক ছিলো।

ড. দীপঙ্কর বলেন, এতে কোনো রকম সন্দেহ নেই যে জেএসএস সন্ত্রাসীরা এই অগ্নি সংযোগ করেছে, আমার বৌদ্ধ বিহার জ্বালিয়ে দিয়েছে। জেএসএস সন্ত্রাসী ও শান্তিবাহিনী ওরা আমার ভিক্ষুকে কিডন্যাপ করে, বিহারে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে, আমার ভক্তদের উপর গুলি চালাচ্ছে, আমার ভক্তরা নদীপথে আসলে সেখানে গুলি চালায়, আমার কুটিরে আগুন জ্বালায়।

তাদের গুলিতে আমার সেবক গুলিবিদ্ধ হয়েছে।আমাকে বারবার ওরা মৃত্যুর হুমকি দিচ্ছে। আমি কারো মৃত্যু, ফাঁসি দাবী করতে পারি না। কিন্ত আমি চাই এই সন্ত্রাস বন্ধ হোক। বাংলাদেশ সরকার, পুলিশ ও সেনা প্রশাসনের কাছে আমার আহ্বান জেএসএস সন্ত্রাসীদের এই সন্ত্রাস বন্ধ হোক।

তিনি আরো বলেন, সন্ত্রাসীদের কোনো জাতি নেই। কোনো ধর্ম নেই। ওরা মুসলিমও নয়, হিন্দুও নয়, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানও নয়। ওদের একটাই পরিচয় ওরা সন্ত্রাসী। ওদের তো কোনো ধর্ম নেই। ওরা তো টাকা পেলে মা বাবাকেও মেরে ফেলবে। ওদের কাছে কিসের মন্দির, কিসের মসজিদ? তারা তো সন্ত্রাসী। ওরা তো ধর্ম প্রচার করতেই দিচ্ছে না। ধর্ম যেহেতু শান্তির কথা বলে, আর ওরা সন্ত্রাসের কথা বলে। তাই ওরা ধর্ম প্রচারের বিরুদ্ধে। ওরা চায় না মানুষ ধর্ম পথে আসুক। তাহলে ওদের সন্ত্রাস করতে সুবিধা হবে।

এফ দীপঙ্কর আরো বলেন, আমি যেহেতু মানুষকে বলছি তোমরা জীব হত্যা করো না, মদ গাঁজা খেয়ো না, সন্ত্রাস করো না, জোর জুলুম করোনা, চাঁদাবাজী করো না। কিন্তু সেটা তো তারা মানতে রাজী নয়। তারা বলছে আমরা করবো তাতে তোমার কি? তোমার কারণে তো মানুষ অন্য দিকে চলে যাচ্ছে। ওদের বক্তব্য হচ্ছে, আমি ওদের সন্ত্রাসী পথের বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছি। আমার কারণে বহু মানুষ ভালো হচ্ছে, শান্তির পথে ফিরে আসছে, এই সন্ত্রাসীদের তা সহ্য হচ্ছে না। তারা চায় চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসী, জোর জুলুম হত্যা, মারপিট এসব করে চলবে। এই শান্তিবাহিনীর সদস্যদের একটাই শ্লোগান ধরো, মারো, কাটো। আমার আপনার কাছে অনুরোধ আমার এই বক্তব্য রেকর্ড করে প্রধানমন্ত্রী ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে দিবেন। তারা এই সন্ত্রাস বন্ধের ব্যবস্থা নেবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন