খাগড়াছড়িতে আ.লীগের মামলায় আসামি সাংবাদিক প্রফুল্ল: প্রেসক্লাবের নিন্দা
বাংলাভিশনের খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি এইচএম প্রফুল্ল। একই সাথে তিনি খাগড়াছড়ি টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও পার্বত্যনিউজের খাগড়াছড়ি ব্যুরো প্রধান। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের নির্বাচনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক সহিংসতায় দায়েরকৃত মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু এ মামলার তথ্য নেই খোদ খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, এমপি ও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরীর কাছে।
গত ২৬ মে খাগড়াছড়িতে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসার পথে আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের গাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। হামলায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ক্ষেত্র মোহন রোয়াজাসহ অন্তত ৫ জন আহত হন।
সেই গাড়ি হামলা ও ভাংচুরের জেরে খাগড়াছড়িতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টা-পাল্টি মামলা হয়েছে। মামলায় উভয় দলের প্রায় সাড়ে ৬ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান বাদী হয়ে সোমবার (২৯ মে) দুপুরে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমএন আবছারসহ ১১০ জনের নাম উল্লেখসহ আরো দেড় থেকে দুই শতাধিক অজ্ঞাত নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ আনা হয়।
এ দিকে গত রবিবার (২৮ মে) দুপুরে খাগড়াছড়ি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব সৈয়দ ওমর ফারুক সুজনের আদালতে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক রতন কুমার ত্রিপুরা বাদী হয়ে প্রথমে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় খাগড়াছড়ি জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কেএম ইসমাইল হোসেনকে প্রধান করে ১০৩ জনের নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাত আড়াই শতাধিক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও মামলায় খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরীকে হুকুমের আসামি করা হয়।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দায়েরকৃত মামলায় সাংবাদিক এইচএম প্রফুল্লকে ১৭ নম্বর আসামি করা হয়। মামলায় আসামি হওয়ার বিষয়ে সাংবাদিক এইচএম প্রফুল্ল’ বলেন, “আমি” কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত নই। গত দুই যুগেও কেউ বলতে পারবে না, আমি কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে মিছিল, সমাবেশ কিংবা কোন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলাম। তিনি বলেন, আমি স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে বহুবার জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। কাজেই এমন মিথ্যা মামলায় ভীত নয়। এমন মিথ্যা মামলায় পুলিশ ফোন করলে নিজে হাজির হবো।
খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপির কাছে প্রশ্ন করা হয় সাংবাদিক এইচএম প্রফুল্ল তো কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত না, তাকে কেন মামলার আসামি করা হলো? জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
একই প্রশ্ন করা হলে খাগড়াছড়ি জেলা খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, ঘটনার দিন (২৬ মে) আমি অসুস্থ ছিলাম। সারা দিন বাসা থেকে বের হইনি। মামলার বিষয়টিও আমার জানা নেই।
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো। অপর দিকে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা বলেন, উপরে কথা বলে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ মে খাগড়াছড়িতে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসার পথে আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের গাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। হামলায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ক্ষেত্র মোহন রোয়াজাসহ অন্তত ৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পরস্পরকে দায়ী করে মামলা দায়ের করেছে।
এদিকে খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন রাজনৈতিক সহিংসতায় জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় খাগড়াছড়ির পেশাজীবী সাংবাদিক ও খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
মঙ্গলবার (৩০ মে) খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব সভাপতি জীতেন বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের মুহাম্মদ এক যুক্ত বিবৃতিতে সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘটিত সহিংস ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কর্মীর ন্যায় কর্মরত পেশাজীবী সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রবণতা খুবই দু:খজনক।
নেতৃবৃন্দ এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং একই সাথে এমন ঘৃণ্য তৎপরতা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে বিরত থাকার আহবান জানান।