চকরিয়ায় খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ৩ জনকে শাস্তিমূলক বদলী

fec-image

খাদ্য বান্ধব চাউল কেলেংকারীর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় অবশেষে চকরিয়া উপজেলার খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি এলএসডি) সহ তিনজনকে শাস্তিমূলক বদলী করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জহিরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে চিরিংগা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহমান খাঁনকে বদলী করা হয়। তাদেরকে চট্টগ্রাম খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরে ন্যাস্ত করা হয়েছে।

গত ২২ মার্চ রাত ১০টার দিকে বিএমচর ইউনিয়নের খাদ্য বান্ধব ডিলার জুবাইরুল ইসলামের গুদামে অতিরিক্ত চাল রাখার দায়ে কক্সবাজার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রূপান্তর চাকমা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেপি দেওয়ানের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা চালানো হয়। ওইসময় গুদামে থাকা অতিরিক্ত ১৮০ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে চকরিয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তপন মল্লিক বাদী হয়ে গুদামে অতিরিক্ত ও নিম্মমানের চাল রাখার দায়ে ডিলার জুবাইরুল ইসলামকে আসামী করে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করে।

এঘটনায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এক সপ্তাহ তদন্ত শেষে চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহমান খান ডিলার জোবাইরুল ইসলামের গুদামে অতিরিক্ত ও নিম্মমানের চাল রাখার বিষয়টি প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। গত ৫ এপ্রিল তদন্ত কমিটির সুপারিশে চিরিংগা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, নিরাপত্তা প্রহরী টিকলু চৌধুরী ও আলাউদ্দিনকে শাস্তিমূলক বদলী করা হয়।

জানা গেছে, চিরিঙ্গা খাদ্য গুদাম থেকে গত ১৭ মার্চ সংগ্রহ করা ৩৯১ বস্তা চাল তার নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘চাউল বিতান’ গুদামে সংরক্ষণ করা হয়। ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা ৩৯১ বস্তা চাল দেওয়ার কথা থাকলেও খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহমান খান তাকে নিম্মমানের চাল দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের ছাড়পত্রে খাদ্য গুদাম থেকে সংগ্রহ করা চাল গুলো পরীক্ষা করে দেখতে পান ৩৯১ বস্তা চালের মধ্যে ১১ বস্তা ভিয়েতনামের চাল হলেও বাকি ৩৮০ বস্তা নিম্মমানের স্থানীয় চাল।

ডিলার জুবাইরুল ইসলাম নিম্মমানের চাল দেওয়ার বিষয়টি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তপন মল্লিককে তাৎক্ষণিক ভাবে অবহিত করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে গত ২০ মার্চ রাতে চিরিঙ্গা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহমান খানের নির্দেশে দু’টি ট্রাকে করে ৩৮০ বস্তা ভিয়েতনামের চাল গুদামে রাখা হয়। সেখান থেকে একটি গাড়িতে ২০০ বস্তা নিম্মমানের চাল নিয়ে গেলেও আরও ১৮০ বস্তা চাল রাত বেশি হয়ে গেছে অজুহাতে গুদামে রেখে যান। চাল গুলো পরের দিন সকালে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়। ওই চাল গুলো গুদামে পড়ে থাকে। খাদ্য গুদামের ওসি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিন্মমানের চাল বিতরণ করতে চাপ প্রয়োগ করেন ডিলারকে। ২২ মার্চ রাতে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা গুদামে থাকা ১৮০ বস্তা অতিরিক্ত ও নিম্মমানের চাল জব্দ করেন।

স্থানীয়রা জানান, চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহমান খানকে বাঁচাতে উল্টো ডিলার জোবাইরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে নিন্মমানের চাল বিতরণের অভিযোগে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহমান খান জড়িত থাকার প্রমাণিত হলে ৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জহিরুল ইসলাম খান চিরিংগা খাদ্য গুদামে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহমান খাঁনকে শাস্তিমূলকভাবে বদলী করে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, খাদ্য বান্ধব চাউলের ঘটনার বিষয়ে যে অভিযোগ রয়েছে তা তদন্তনাধীন রয়েছে। তবে চলমান কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি এলএসডিসহ তিনজনকে তদন্ত কমিটির সুপারিশে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বদলী করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন