চকরিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় ৫৯ সড়কে করুনদশা, যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ
সম্প্রতি টানা ভারি বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন সড়ক, সেতু, কালভার্ট ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গ্রামীণ জনপদের কোন কোন রাস্তায় বড় বড় খানাখন্দক, গর্ত সৃষ্টি হয়ে পুকুরেও পরিণত হয়েছে। এতে উপজেলার ১৮ ইউনিয়নে সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ভয়াবহ বন্যায় ভেঙেছে মানুষের ঘরবাড়ি, তলিয়ে গেছে মাছের ঘের, খামার, ঘটেছে বিভিন্ন ধরনের প্রাণহানির ঘটনাও। যার ফলে বন্যাপরবর্তী সময়ে এই উপজেলার বেশ কিছু ইউনিয়নে যাতায়তে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বন্যায় ভয়াবহ ক্ষত নিয়ে জেগে উঠা সড়ক, সেতু, কালভার্ট দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক গুলো চলাচল উপযোগী ও দ্রুত সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধি।
চকরিয়া উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) চকরিয়া উপজেলায় ২৩১ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। তৎমধ্যে এবারের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ৫৯টি বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কের ৪০.৩৮ কিলোমিটার পানির প্রবল স্রোতের তোড়ে পড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২টি সেতু ও কালভার্ট। এছাড়াও গ্রামীণ কাঁচা সড়ক গুলোতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বন্যার সময়ে মানুষ পানিবন্ধি থাকাবস্থায় গ্রামীণ জনপদের অভ্যান্তরীণ ওইসব সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল। তখন বানবাসি লোকজন বিকল্পভাবে নৌকা ভাড়া করে কেউ বা বাঁশ ও কাঠের ভেলা তৈরি করে যাতায়াত করেছেন। বানের পানির প্রবল স্রোতে সে সময়ই পাকা সড়ক ভেঙে তৈরি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য নালা ও গর্ত। অনেক সড়ক একেবারে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে গিয়ে বিলীন হয়েছে অসংখ্য কাঁচা সড়ক।
উপজেলায় বন্যায় বেহাল হওয়া ৫৯ টি সড়কের ৪০.৩৮ কিলোমিটার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়েছে ৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এছাড়া ২টি ব্রীজ কালভার্টে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩ মিটার। যা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয় ৬০ লক্ষ টাকা।
হারবাং রাখাইন পাড়ার বাসিন্দা উবাথোই জানান, আমি নিয়মিত রাখাইন পাড়া-বরইতলী সংযোগ এ সড়ক দিয়ে চলাচল করি। গেল ভয়াবহ বন্যায় সড়কটি তলিয়ে গিয়ে অনেক স্থানে ভেঙে পুকুর হয়ে যায়। বর্তমানে এই সড়ক দিয়ে হাজার বাসিন্দারা বিকল্প পথে আমাদের যাতায়াত করতে খুব কষ্ট ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে স্মরণকালের এই ভয়াবহ বন্যায় গ্রামীণ জনপদের রাস্তা-ঘাটে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে হারবাং ইউনিয়নের রাখাইন পাড়া সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙে বড় বড় গর্ত হয়েছে। এছাড়াও মাতামুহুরী নদীর তীরবর্তী কাকারা ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম সড়ক ও মাহবুব মিয়ার ঘাটা এলাকায় বন্যার পানির প্রবল স্রোতে পড়ে নদীতে ধসে গেছে কাকারা সড়ক।
সরেজমিন দেখলে সহজেই অনুমান করা যায় এবারের বন্যার ভয়াবহতা। রাস্তাঘাট ও ব্রীজ কালভার্টের ভয়াবহ ক্ষতির কারণে চরম ভাবে ভোগান্তিতে পড়েছে ছোট ছোট স্কুল ও মাদ্রাসা পডুয়া শিক্ষার্থীসহ সাধারন মানুষ।
চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) কর্মকর্তা সাফায়ত ফারুক চৌধুরী বলেন, উপজেলার ১৮ইউনিয়ে ৫৯টি সড়কের ৪০.৩৮ কিলোমিটার ও ২টি ব্রীজ কালভার্টের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৫৩ কোটি টাকা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তথ্য ও সরেজমিন পরিদর্শনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত সকল সড়কের তালিকা নিরূপণ করে দ্রুত মেরামত ও চলাচল উপযোগী করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।