জনশুমারি ২০২২: পার্বত্য চট্টগ্রামের জনমিতি বিশ্লেষণ

fec-image

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং ২০১১ সালের জনশুমারি প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে তুলনামূলকভাবে বেড়েছে বাঙালি জনসংখ্যা এবং অন্যদিকে কমেছে অবাঙালি তথা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনসংখ্যা। ২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন মতে, তিন পার্বত্য জেলা তথা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবান জেলার মোট জনসংখ্যা ১৮৪২৮১৫ জন। এর মধ্যে বাঙালি ৯২২৫৯৮ (৫০.০৬%) জন এবং অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৯২০২১৭ (৪৯.৯৪%) জন। ২০১১ সালের জনশুমারি অনুসারে তিন পার্বত্য জেলার মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬১৩৯৮৯ জন। এর মধ্যে বাঙালি ৭৬১৪৪৯ (৪৭.১৮%) জন এবং অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৮৫২৫৪০ (৫২.৮২%) জন। অর্থাৎ ২০১১ সালের জনশুমারির তুলনায় শতাংশের দিক থেকে বাঙালি বেড়েছে ২.৮৮%, অন্যদিকে একই সময়ের ব্যবধানে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাঙালি তথা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনসংখ্যা শতাংশের দিক থেকে কমেছে ২.৮৮%।

২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে, তিন পার্বত্য জেলায় মুসলিম ৮২০৪৯৮ (৪৪.৫২%) জন, বৌদ্ধ ৭৬৯২৭৯ (৪১.৭৪%) জন, হিন্দু ১৬৯০৯৬ (৯.১৮%) জন, খ্রিস্টান ৬০০২৮ (৩.২৬%) জন এবং অন্যান্য ২৪০৩৪ (১.৩০%) জন। ২০১১ সালের জনশুমারি মতে ছিল, মুসলিম ৬৮০৮১০ (৪২.১৮%) জন, বৌদ্ধ ৭০১৩৯৯ (৪৩.৪৬%) জন, হিন্দু ১৪৬৫৭৬ (৯.০৮%) জন, খ্রিস্টান ৫২০৬৬ (৩.২৩%) জন এবং অন্যান্য ১৭৩৮০ (১.০৮%) জন। অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রামে তুলনামূলকভাবে কমেছে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা, অন্যদিকে বেড়েছে মুসলিম, হিন্দু এবং খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী। এমনকি উল্লেখিত চারটির ধর্মের বাইরে যারা আছেন (প্রকৃতি পূজারি) তাদের সংখ্যাও বেড়েছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০১১ সালের তুলনায় বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ৬৭৮৮০ জন বৃদ্ধি পেলেও পূর্বের চেয়ে শতাংশের দিক থেকে ১.৭২% কমেছে। অন্যদিকে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে ১৩৯৬৮৮ জন এবং শতাংশের দিক থেকে বেড়েছে ২.৩৪%। হিন্দু ধর্মের অনুসারী বেড়েছে ২২৫২০ জন এবং শতাংশের দিক থেকে বেড়েছে ০.১%। খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী বেড়েছে ৭৯৬২ জন এবং শতাংশের দিক থেকে বেড়েছে ০.০৩%। অন্যান্য (প্রকৃতি পূজারি) ধর্মের অনুসারী বেড়েছে ৬৬৫৪ জন এবং শতাংশের দিক থেকে বেড়েছে ০.২২%।
বাংলাদেশের আয়তন ১৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার, পার্বত্য তিন জেলার মোট আয়তন প্রায় ১৩১৯১ বর্গ কিলোমিটার, যা দেশের মোট আয়তনের ১১.১৯ শতাংশ। অন্যদিকে দেশের মোট জনসংখ্যা যেখানে ১৬৫১৫৮৬১৬ জন, সেখানে তিন পার্বত্য জেলায় বসবাস করেন ১৮৪২৮১৫ জন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১.১৬ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের ১১.১৯ শতাংশ আয়তনের পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করেন মোট জনসংখ্যার ১.১৬ শতাংশ মানুষ।

খাগড়াছড়ির জনসংখ্যা
২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে খাগড়াছড়ির মোট জনসংখ্যা ৭১৪১১৯ জন। এর মধ্যে বাঙালি ৩৬৪৭৪১ (৫১.০৮%) জন এবং অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৩৪৯৩৭৮ (৪৮.৯২%) জন। ধর্মের দিক থেকে মুসলিম ৩৩২৪৯৪ (৪৬.৫৬%) জন, বৌদ্ধ ২৫৬৫১২ (৩৫.৯২%) জন, হিন্দু ১১৯৬১৫ (১৬.৭৫%) জন, খ্রিস্টান ৪৪২৮ (০.৬২%) জন এবং অন্যান্য ১১৪৩ (০.১৬%) জন। খাগড়াছড়ি জেলার প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ২৬০ জন এবং সাক্ষরতার হার ৭১.৭৩%। ২০১১ সালের জনশুমারির প্রতিবেদন অনুসারে খাগড়াছড়ির মোট জনসংখ্যা ছিল ৬১৩৯১৭ জন। এর মধ্যে বাঙালি ২৯৬৯৩০ (৪৮.৩৭%) জন এবং অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৩১৬৯৮৭ (৫১.৬৩%) জন। ধর্মের দিক থেকে মুসলিম ২৭৪২৫৮ (৪৪.৬৭%) জন, বৌদ্ধ ২৩১৩০৯ (৩৭.৬৮%) জন, হিন্দু ১০৩১৯৫ (১৬.৮১%) জন, খ্রিস্টান ৪০৭০ (০.৬৬%) জন এবং অন্যান্য ১০৮৫ (০.১৮%) জন। ২০১১ সালে খাগড়াছড়ি জেলার প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল ২২৩ জন এবং সাক্ষরতার হার ছিল ৪৬.১%।

রাঙ্গামাটির জনসংখ্যা
২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে রাঙ্গামাটি জেলার মোট জনসংখ্যা ৬৪৭৫৮৭ জন। এর মধ্যে বাঙালি ২৭৪৭২৩ (৪২.৪২%) জন এবং অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৩৭২৮৬৪ (৫৭.৫৮%) জন। ধর্মের দিক থেকে মুসলিম ২৩৪৫৫৬ (৩৬.২২%) জন, বৌদ্ধ ৩৭০৭৪৪ (৫৭.২৫%) জন, হিন্দু ৩৩০২৭ (৫.১০%) জন, খ্রিস্টান ৮৫৪৮ (১.৩২%) জন এবং অন্যান্য ৭১২ (০.১১%) জন। রাঙ্গামাটি জেলার প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১০৬ জন এবং সাক্ষরতার হার ৭১.৩৩%। ২০১১ সালের জনশুমারির প্রতিবেদন অনুসারে রাঙ্গামাটির মোট জনসংখ্যা ছিল ৫৯৫৯৭৯ জন। এর মধ্যে বাঙালি ২৩৯৮২৬ (৪০.২৪%) জন এবং অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৩৫৬১৫৩ (৫৯.৭৬%) জন। ধর্মের দিক থেকে মুসলিম ২০৯৪৬৫ (৩৫.১৫%) জন, বৌদ্ধ ৩৪৭০৩৮ (৫৮.২৩%) জন, হিন্দু ৩০২৪৪ (৫.০৭%) জন, খ্রিস্টান ৮৬৬৩ (১.৪৫%) জন এবং অন্যান্য ৫৬৯ (০.১০%)। ২০১১ সালে রাঙ্গামাটি জেলার প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল ৯৭ এবং শিক্ষার হার ছিল ৪৯.৭%।

আরও পড়ুন

পার্বত্য চট্টগ্রামে সংসদীয় আসন সংখ্যা ন্যায়সঙ্গত করা হোক

Population Census 2022: A CHT Demographic Analysis

পার্বত্য চট্টগ্রামের ইউপি নির্বাচন ২০২১-২০২২ এর ফলাফল বিশ্লেষণ

বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর আগমন ও আদিবাস

The Migration Of Small Ethnic Groups To Bangladesh And Their Original Habitats

বান্দরবানের জনসংখ্যা
২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে বান্দরবান জেলার মোট জনসংখ্যা ৪৮১১০৯ জন। এর মধ্যে বাঙালি ২৮৩১৩৪ (৫৮.৮৫%) জন এবং অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১৯৭৯৭৫ (৪১.১৫%) জন। ধর্মের দিক থেকে মুসলিম ২৫৩৪৪৮ (৫২.৬৮%) জন, বৌদ্ধ ১৪২০২৩ (২৯.৫২%) জন, হিন্দু ১৬৪৫৪ (৩.৪২%) জন, খ্রিস্টান ৪৭০৫২ (৯.৭৮%) জন এবং অন্যান্য ২২১৭৯ (৪.৬১%) জন। বান্দরবান জেলার প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১০৭ এবং সাক্ষরতার হার ৬৩.৬৪%। ২০১১ সালের জনশুমারির প্রতিবেদন অনুসারে বান্দরবানের মোট জনসংখ্যা ছিল ৪০৪০৯৩ জন। এর মধ্যে বাঙালি ২২৪৬৯৩ (৫৫.৬০%) জন এবং অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১৭৯৪০০ (৪৪.৪০%) জন। ধর্মের দিক থেকে মুসলিম ১৯৭০৮৭ (৪৪.৭৭%) জন, বৌদ্ধ ১২৩০৫২ (৩০.৪৫%) জন, হিন্দু ১৩১৩৭ (৩.২৫%) জন, খ্রিস্টান ৩৯৩৩৩ (৯.৭৩%) জন এবং অন্যান্য ১৫৭২৬ (৩.৮৯%) জন। ২০১১ সালে বান্দরবান জেলার প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল ৮৭ জন এবং সাক্ষরতার হার ছিল ৩১.৭%।

সারাদেশের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যার কিছু তুলনামূলক চিত্র
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ সালের প্রাথমিক প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত কিছু তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সারাদেশের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যার তুলনামূলক কিছু ব্যতিক্রমী তথ্য পাওয়া গেছে। যেমন সারাদেশের তুলনায় পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংখ্যার ঘনত্ব খুবই কম। দেশে যখন প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১১১৯ জন মানুষ বসবাস করেন এবং চট্টগ্রাম বিভাগে বসবাস করেন ৯৭৯ জন, সেখানে খাগড়াছড়িতে ২৬০ জন, রাঙ্গামাটিতে ১০৬ জন এবং বান্দরবানে ১০৭ জন বসবাস করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের (খাগড়াছড়ি ৭১.৭৩%, রাঙ্গামাটি ৭১.৩৩% এবং বান্দরবান ৬৩.৬৪%) সাক্ষরতার হার প্রায় জাতীয় সাক্ষরতার (৭৪.৬৬%) হারের কাছাকাছি, এমনকি ময়মনসিংহ বিভাগের সাক্ষরতার (৬৭.০৯%) হারের চেয়ে বেশি। পার্বত্য চট্টগ্রামে (খাগড়াছড়িতে ০.০১%, রাঙ্গামাটিতে ০.০০৮% এবং বান্দরবানে ০.০২%) গৃহহীন ভাসমান জনসংখ্যার হার জাতীয়ভাবে ভাসমান জনসংখ্যার (০.০১%) চেয়ে কম। সারাদেশের বস্তিবাসীর (১.১০%) চেয়ে রাঙ্গামাটি (০.৯৪%) এবং বান্দরবানে (০.০০০৪%) বস্তিবাসীর সংখ্যা কম হলেও খাগড়াছড়িতে (১.১৮%) বেশি । এটা হয়েছে সম্ভবত খাগড়াছড়িতে গুচ্ছগ্রামের বস্তিসম আবাসে থাকা বিরাট সংখ্যক বাঙালি জনসংখ্যার কারণে। রাঙ্গামাটিতে গুচ্ছগ্রাম থাকলেও সংখ্যায় কম এবং বান্দরবানে গুচ্ছগ্রাম না থাকার কারণে সেখানে বস্তিবাসী নেই বললেই চলে। জাতীয়ভাবে পল্লী এলাকায় (৬৮.৪৬%) বসবাসকারীর তুলনায় পার্বত্য চট্টগ্রামে (খাগড়াছড়িতে ৫৮.২৪%, রাঙ্গামাটিতে ৫২.৪০% এবং বান্দরবানে ৫৯.৫২%) কম সংখ্যক জনসংখ্যা পল্লী এলাকায় বসবাস করে। অন্যদিকে জাতীয়ভাবে শহরে বসবাসকারী মানুষের (৩১.৪৯%) চেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের (খাগড়াছড়িতে ৪১.৭৩%, রাঙ্গামাটিতে ৪৭.৫৫% এবং বান্দরবানে ৪০.৩৮%) মানুষ শহর এলাকায় বেশি বসবাস করে। এর মানে হতে পারে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ এখন পাহাড়ি এলাকায় জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহের পরিবর্তে আধুনিক শহুরে জীবনযাপনের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে বেশি। অন্যদিকে তিন পার্বত্য জেলায় তৃতীয় লিঙ্গ তথা হিজড়া আছে ১০১ জন।

আরও পড়ুন:
রাঙামাটি জেলা পরিষদ শিক্ষাবৃত্তির ৩৩.২৩ শতাংশ পেয়েছে বাঙালিরা
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের শিক্ষা বৃত্তিতে বৈষম্যের শিকার বাঙালিরা
বাবু চুনীলাল দেওয়ানের স্ত্রী রাজাকার বাহিনীর প্রধান ছিলেন

বাংলাদেশের অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনসংখ্যা
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বসবাসরত অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নাম পাওয়া গেছে ৫০টি। এর বাইরে আরো কিছু জনগোষ্ঠী আছে। কিন্তু তাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। বাংলাদেশে অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর মোট জনসংখ্যা ১,৬৫০,১৫৯ জন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ০.১০%। এদের মধ্যে নামোল্লেখিত ৫০টি জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা ১৫৮১৬২১ জন (যা অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর মোট জনসংখ্যার ৯৫.৮৫%) এবং অন্যান্য জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা ৬৮৫৩৮ জন (যা অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর মোট জনসংখ্যার ৪.১৫%)।

অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর নাম ও জনসংখ্যা
(বর্ণমালার ক্রমানোসারে)
ওরাওঁ ৮৫,৮৪৬ (৫.২০%), কড়া ৮১৬ (০.০৫%), কন্দ ১,৮৯৮ (০.১২%), কোচ ১৩,৭০২ (০.৮৩%), কোল ৩,৮২২ (০.২৩%), খারওয়ার/খেড়োয়ার ৩১২ (০.০২%), খারিয়া/খাড়িয়া ৩,০৯৯ (০.১৯%), খাসিয়া/খাসি ১২,৪২১ (০.৭৫%), খিয়াং ৪,৮২৬ (০.২৯%), খুমি ৩,৭৮০ (০.২৩%), গঞ্জু ৪,১৩৭ (০.২৫%), গড়াইত ২,৭২৭ (০.১৭%), গারো ৭৬,৮৪৬ (৪.৬৬%), গুর্খা ১০০ (০.০১%), ডালু ৩৮৬ (০.০২%), চাক ৩,০৭৭ (০.১৯%), চাকমা ৪৮৩,২৯৯ (২৯.২৯%), তঞ্চঙ্গা ৪৫,৯৭২ (২.৭৯%), তুরি ৩,৭৯২ (০.২৩%), তেলী ২,০৮২ (০.১৩%), ত্রিপুরা ১৫৬,৫৭৮ (৯.৪৯%), পাংখোয়া/পাংখো ১,৮৫৭ (০.১১%), পাত্র ৩,১০০ (০.১৯%), পাহাড়ী/মালপাহাড়ী ৮,৮০১ (০.৫৩%), বড়াইক/বাড়াইক ৩,৪৪৪ (০.২১%), বম ১৩,১৯৩ (০.৮০%), বর্মণ ৪৪,৬৫৭ (২.৭১%), বাগদী ১২,০৯২ (০.৭৩%), বানাই ২,৮৫১ (০.১৭%), বেদিয়া ৭,২০৭ (০.৪৪%), ভিল ৯৫ (০.০১%), ভূঁইমালী ১৯৩০ (০.১২%), ভূমিজ ৯,৬৬৪ (০.৫৯%), মণিপুরী ২২,৯৭৮ (১.৩৯%), মারমা ২২৪,২৬১ (১৩.৫৯%), মালো/ঘাসিমালো ১৪,৭৭১ (০.৯০%), মাহাতো/কুর্মিমাহাতো/বেদিয়ামাহাতো ১৯,২৭১ (১.১৭%), মাহালী ৬,৬১৪ (০.৪০%), মুন্ডা ৬০,১৯১ (৩.৬৫%), মুসহর ৪,৬০০ (০.২৮%), ম্রো ৫২,৪৫৫ (৩.১৮%), রাখাইন ১১,১৯৫ (০.৬৮%), রাজোয়ার ২,৩২৭ (০.১৪%), লুসাই ৩৮০ (০.০২%), লোহার ৩,৪১৮ (০.২১%), শবর ১,৯৮০ (০.১২%), সাঁওতাল ১২৯,০৪৯ (৭.৮২%), হাজং ৭,৯৯৬ (০.৪৮%), হুদি ১,৫০৩ (০.০৯%), হো ২২৩ (০.০১%) অন্যান্য ৬৮,৫৩৮ (৪.১৫%)।

অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর নাম ও জনসংখ্যা
(জনসংখ্যার অধঃক্রমানোসারে)
চাকমা ৪৮৩,২৯৯ (২৯.২৯%), মারমা ২২৪,২৬১ (১৩.৫৯%), ত্রিপুরা ১৫৬,৫৭৮ (৯.৪৯%), সাঁওতাল ১২৯,০৪৯ (৭.৮২%), ওরাওঁ ৮৫,৮৪৬ (৫.২০%), গারো ৭৬,৮৪৬ (৪.৬৬%), মুন্ডা ৬০,১৯১ (৩.৬৫%), ম্রো/মুরং ৫২,৪৫৫ (৩.১৮%), তঞ্চঙ্গা ৪৫,৯৭২ (২.৭৯%), বর্মণ ৪৪,৬৫৭ (২.৭১%), মণিপুরী ২২,৯৭৮ (১.৩৯%), মাহাতো/কুর্মিমাহাতো/বেদিয়ামাহাতো ১৯,২৭১ (১.১৭%), মালো/ঘাসিমালো ১৪,৭৭১ (০.৯০%), কোচ ১৩,৭০২ (০.৮৩%), বম ১৩,১৯৩ (০.৮০%), খাসিয়া/খাসি ১২,৪২১ (০.৭৫%), বাগদী ১২,০৯২ (০.৭৩%), রাখাইন ১১,১৯৫ (০.৬৮%), ভূমিজ ৯,৬৬৪ (০.৫৯%), পাহাড়ী/মালপাহাড়ী ৮,৮০১ (০.৫৩%), হাজং ৭,৯৯৬ (০.৪৮%), বেদিয়া ৭,২০৭ (০.৪৪%), মাহালী ৬,৬১৪ (০.৪০%), খিয়াং ৪,৮২৬ (০.২৯%), মুসহর ৪,৬০০ (০.২৮%), গঞ্জু ৪,১৩৭ (০.২৫%), কোল ৩,৮২২ (০.২৩%), তুরি ৩,৭৯২ (০.২৩%), খুমি ৩,৭৮০ (০.২৩%), বড়াইক/বাড়াইক ৩,৪৪৪ (০.২১%), লোহার ৩,৪১৮ (০.২১%), পাত্র ৩,১০০ (০.১৯%), খারিয়া/খাড়িয়া ৩,০৯৯ (০.১৯%), চাক ৩,০৭৭ (০.১৯%), বানাই ২,৮৫১ (০.১৭%), গড়াইত ২,৭২৭ (০.১৭%), রাজোয়ার ২,৩২৭ (০.১৪%), তেলী ২,০৮২ (০.১৩%), শবর ১,৯৮০ (০.১২%), ভূঁইমালী ১৯৩০ (০.১২%), কন্দ ১,৮৯৮ (০.১২%), পাংখোয়া/পাংখো ১,৮৫৭ (০.১১%), হুদি ১,৫০৩ (০.০৯%), কড়া ৮১৬ (০.০৫%), ডালু ৩৮৬ (০.০২%), লুসাই ৩৮০ (০.০২%), খারওয়ার/খেড়োয়ার ৩১২ (০.০২%), হো ২২৩ (০.০১%), গুর্খা ১০০ (০.০১%), ভিল ৯৫ (০.০১%), অন্যান্য ৬৮,৫৩৮ (৪.১৫%)।

পার্বত্য চুক্তিতে যেসব উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নাম আছে
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক চুক্তিতে যেসব উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নাম আছে তাদের নাম, জনসংখ্যা এবং দেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর মোট জনসংখ্যায় তাদের শতকরা হার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, চাকমা ৪৮৩,২৯৯ (২৯.২৯%), মারমা ২২৪,২৬১ (১৩.৫৯%), ত্রিপুরা ১৫৬,৫৭৮ (৯.৪৯%), মুরং/ম্রো ৫২,৪৫৫ (৩.১৮%), তঞ্চঙ্গা ৪৫,৯৭২ (২.৭৯%), বম ১৩,১৯৩ (০.৮০%), খিয়াং ৪,৮২৬ (০.২৯%), খুমি ৩,৭৮০ (০.২৩%), চাক ৩,০৭৭ (০.১৯%), পাংখোয়া/পাংখো ১,৮৫৭ (০.১১%), লুসাই ৩৮০ (০.০২%)।

ষষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২
গত ২৭ জুলাই ২০২২ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এর আগে ১৫ হতে ২১ জুন ২০২২ সপ্তাহব্যাপী সারাদেশে ৬ষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ সম্পন্ন করা হয়। প্রথমবারের মতো এবারের জনশুমারি করতে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এ শুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন, নারী ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন এবং হিজড়া ১২ হাজার ৬২৯ জন। অর্থাৎ ৯৮ জন পুরুষের বিপরীতে দেশে নারীর সংখ্যা ১০০ জন। গত ১০ বছরে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২ কোটি ১১ লাখ ১৪ হাজার ৯১৯ জন।
মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ঢাকা বিভাগে বসবাস করেন। এ ছাড়া, বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ৩ কোটি ৩২ লাখ, রাজশাহীতে ২ কোটি ৩ লাখ মানুষ বাস করছেন এবং বরিশাল বিভাগে দেশের সর্বনিম্ন ৯১ লাখ মানুষ বসবাস করছেন।

বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২২ শতাংশ, এক দশক আগে যা ছিল ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। দেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যা ঘনত্বের হার ১ হাজার ১১৯ জন, এক দশক আগে যা ছির ৯৭৬ জন। মোট জনংখ্যার ৯১ দশমিক ০৪ শতাংশ মুসলিম, হিন্দু ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। দেশে সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এছাড়া প্রতিবন্ধিতার হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞ মতামত
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ কী? এ প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য বাঞ্ছিতা চাকমা বলেন, এবারের জরিপটা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। আমি রাঙ্গামাটি শহরে আমার পরিচিত অনেকের কাছে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, তাদের বাসায় কোনো গণনাকারী যায়নি। তাছাড়া, এবারের জরিপ হয়েছে বর্ষাকালে। বৃষ্টির দিনে পার্বত্য চট্টগ্রামে শহর এলাকার বাইরের রাস্তাঘাট বা যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ কষ্টসাধ্য। সে কারণে দুর্গম এলাকায় গণনাকারীরা ঠিক মতো পৌঁছাতে পারেনি। আর দুর্গম এলাকাগুলোতে সাধারণত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষরাই বেশি সংখ্যায় বসবাস করেন। এসব কারণেই এবারের জরিপে তাদের সংখ্যা কম এসেছে। তাই আমি মনে করি, এবারের জরিপে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যার বাস্তব চিত্রের যথাযথ প্রতিফলন হয়নি।

একই প্রশ্নের জবাবে সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং পার্বত্যনিউজের সম্পাদক মেহেদী হাসান পলাশ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালির সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিরা শিক্ষা-দীক্ষা, কর্মসংস্থান, অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য সচেতনতায় অনেক পিছিয়ে থাকার কারণে তাদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে সচেতনতা ও আগ্রহের অভাব রয়েছে। বিপরীত দিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ শিক্ষা-দীক্ষা, কর্মসংস্থান, অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য সচেতনতায় অনেক বেশি এগিয়ে থাকায় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে তারা বেশি আগ্রহী হন। শিক্ষিত এবং স্বাস্থ্য সচেতন মায়েরা সাধারণত অধিক সংখ্যক সন্তান নিতে আগ্রহী হন না, আবার অল্প শিক্ষিত অথবা শিক্ষা বঞ্চিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মায়েরা সংসারের হাল ধরার জন্য জুম চাষের মতো কঠিন পরিশ্রমের কাজে নিয়োজিত থাকেন বিধায় তাদের পক্ষে অধিক সন্তান নেয়া অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

দ্বিতীয়ত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তথা উপজাতিদের জন্য বিভিন্ন উন্নত দেশ ও দাতা সংস্থা শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা ও সুযোগ-সুবিধা দেয়ায় প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ বিভিন্ন দেশে যায়। যাদের একটা বড় অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামে ফিরে আসার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট দেশেই স্থায়ীভাবে থেকে যায়।

তৃতীয়ত সরকারিভাবে উচ্চ শিক্ষা এবং চাকরিতে কোটা সুবিধার কারণে প্রতি বছর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণী পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়ছে। এদের অনেকেই শহুরে আধুনিক জীবনে অভ্যস্থ হয়ে যাওয়ার পর পাহাড়ে ফিরে না গিয়ে বরং সমতলের বিভিন্ন জেলায় বসতি গড়ছে। অনেকে আবার বিদ্যমান সহিংস পরিস্থিতি তথা উপজাতীয় আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে নিত্যনৈমিত্তিকভাবে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজির কারণেও পার্বত্য চট্টগ্রামে ফিরছে না।

চতুর্থত বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, বিগত কয়েক বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নতুন প্রজন্মের একটি বড় অংশ যুক্ত হয়েছে। এছাড়া পূর্ব থেকেও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর যেসব মানুষ এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল, তাদের একটি বড় অংশ নিজেদের পরিবার-পরিজনদের নিরাপদে রাখতে প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখানে চাঁদাবাজি, অপহরণ, মাদক পাচার এবং সন্ত্রাসের মাধ্যমে অর্জিত অর্থের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশে থাকা তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে পাচার করছে। মূলত এসব কারণেই জনশুমারির প্রতিবেদনে পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার চিত্র ফুটে উঠেছে।

আরও পড়ুন

পার্বত্য চট্টগ্রামে সংসদীয় আসন সংখ্যা ন্যায়সঙ্গত করা হোক

Population Census 2022: A CHT Demographic Analysis

পার্বত্য চট্টগ্রামের ইউপি নির্বাচন ২০২১-২০২২ এর ফলাফল বিশ্লেষণ

বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর আগমন ও আদিবাস

The Migration Of Small Ethnic Groups To Bangladesh And Their Original Habitats

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন