জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উদ্যোগ, সেন্টমার্টিনের ১,৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা’

fec-image

বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিন সংলগ্ন ১,৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার বা ৬৭২ বর্গ মাইল পর্যন্ত ‘মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া’ (এমপিএ) বা ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। যাতে গভীরতা হবে ৭০ মিটার পর্যন্ত। কর্ণার পয়েন্ট রয়েছে ১২টি। যার চৌহদ্দিতে বলা আছে, উত্তরে বঙ্গোপসাগর হতে টেকনাফ পেনিনসুলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক জলসীমা এবং পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর।

বর্ণিত এলাকা ইতোপূর্বে বাংলাদেশ গেজেট মে ২০, ১৯৯৯ পবম-৪/৭/৮৭/৯৯/২৬৯ প্রজ্ঞাপনমূলে ঘোষিত সেন্টমার্টিন প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ৫৯০.০ হেক্টরের অতিরিক্ত। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নতুন সুরক্ষিত এলাকা বা এমপিএ-তে বিভিন্ন ধরনের নিয়মনীতি প্রস্তাবিত করা হয়েছে। এর মধ্যে মাছ ধরা ও নৌযান চলাচল নিয়ন্ত্রণে আলাদা জোন স্থাপনের কথাও রয়েছে।

গত ৪ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
উপসচিব দীপক কুমার চক্রবর্তী সাক্ষরিত বন শাখা-২ এর স্মারক নং -২২.০০.০০০০.০৬৭.২২.০২৩.১৫/৫ মূলে জানা গেছে, বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ (২০১২ সালের ৩০ নং আইন) এর ধারা ১৩ (১) ও ১৩ (২) এর ক্ষমতা বলে বৈশ্বিকভাবে হুমকির সম্মুখিন প্রবাল, গোলাপি ডলফিন, হাঙ্গর, রে মাছ, সামুদ্রিক কাছিম, সামুদ্রিক পাখি, সামুদ্রিক ঘাস এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও এদের আবাসস্থল সংরক্ষণ; সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই আগরণের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকার মানোন্নয়ন, ব্লু-ইকোনমি সমৃদ্ধকরণ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-১৪) অর্জনের লক্ষ্যে সেন্টমার্টিনের ১,৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ‘মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া’ (এমপিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

এমপিএ’র সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য মৎস্য বিভাগ, উপক‚লরক্ষী, নৌবাহিনী এবং স্থানীয় মাছ ধরা সম্প্রদায়ের সঙ্গে যৌথ টহল পরিচালানার পরিকল্পনা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় সেন্টমার্টিনের এমপিএ-তে সরকার ও স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে ‘ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি বাংলাদেশ’ নামক সংস্থা।

পর্যটকদের অবাধ যাতায়াত দীর্ঘদিন ধরেই দ্বীপটির ওপর ফেলে আসছে নেতিবাচক প্রভাব। সরকারিভাবে এসব প্রভাব কমানোর যথেষ্ট প্রচেষ্টা থাকা সত্তে¡ও অনিয়ন্ত্রিত বর্জ্য, নানা ধরনের দূষণ কর্মকাণ্ড এবং অতিরিক্ত প্রবাল ও মাছ শিকার সামুদ্রের জীববৈচিত্র্যকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ সিদ্ধান্তকে সময়োপযুগি মনে করছে পরিবেশবিদরা।

তাদের মতে, বাংলাদেশের ‘এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন’-এর মোটামুটি দেড় শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। সেইসঙ্গে, প্রায় ২৩০ প্রজাতির ফিনফিশের প্রধান আবাসস্থল গ্রীষ্মমন্ডলীয় এই দ্বীপের চারপাশ জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। বিশ্বব্যাপী হুমকির সম্মুখীন বন্য ও সামুদ্রিকপ্রাণী যেমন ইন্দো-প্যাসিফিক হাম্পব্যাক ডলফিন, তিমি হাঙর, সাদা দাগযুক্ত হুইপ্রে, জলপাই রঙের ছোট কচ্ছপ এবং সবুজ রঙের বড় মাথাযুক্ত কচ্ছপকেও রক্ষা করবে নতুন এই সুরক্ষিত এলাকা।

‘নারকেল জিনজিরা’ খ্যাত সেন্টমার্টিন দ্বীপটি দেশের পর্যটন খাতেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই দ্বীপের প্রায় ৭ হাজার বাসিন্দা কেবল পর্যটন এবং মাছ ধরার আয়ের ওপরই নির্ভরশীল। তবে, পর্যটনদের অবাধ যাতায়াত দীর্ঘদিন ধরেই দ্বীপটির ওপর ফেলে আসছে নেতিবাচক প্রভাব। সরকারিভাবে এসব প্রভাব প্রশমিত করার যথেষ্ট প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও অনিয়ন্ত্রিত বর্জ্য, নানান ধরনের দূষণ, এবং অতিরিক্ত প্রবাল ও মাছ শিকার সামুদ্রের জীববৈচিত্র্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগীয় কর্মকর্তা সরওয়ার আলম বলেন, “মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া’ (এমপিএ) সরকারের একটি মহতি উদ্যোগ। এর মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ হবে। বাড়বে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনমান।”

তিনি বলেন, “এমপিএ প্রবিধানগুলোর সঙ্গে সম্মতি কার্যকর ও পর্যবেক্ষণ করার জন্য বন বিভাগ একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরি করবে। সেখানে স্থানীয় জেলেসহ সকল অংশীদাররা জড়িত থাকবেন।”

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, “সেন্টমার্টিন দ্বীপের সরক্ষিত এলাকার সঙ্গে বিদ্যমান সোয়াচ-অফ-নো-গ্রাউন্ড এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ঘোষিত আরও দুটি সামুদ্রিক সংরক্ষণাগার আমাদের সামুদ্রিক এলাকার জীববৈচিত্র্য সরক্ষণে সহায়তা করবে। এর মাধ্যমে আমরা দেশের সমুদ্র এলাকার ১০ শতাংশ রক্ষা সংক্রান্ত জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অধীনে আমাদের জাতীয় লক্ষ্য অর্জনের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলাম।”

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা’, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উদ্যোগ, সেন্টমার্টিন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন