জুমিয়াদের ঘরে-ঘরে নবান্ন

fec-image

‘মোনো উগুরে ঝুম গুচ্চে, ইক্কে ইদু আমা ঘর’। এটি চাকমা ভাষায় রচিত জুম চাষের ওপর প্রচলিত গান। যার বাংলা অর্থ-‘পাহাড়ের উপরে জুমের চাষ করেছি, এখন আমাদের বাড়ি এখানে’। পাহাড়ি জুমিয়ারা জুমে উৎপাদিত ফসল ঘরে তোলার সময় মনের সুখে এই ধরণের গান গেয়ে থাকে।

পাহাড়ে বর্তমানে জুম ফসল ঘরে তোলার উৎসব শুরু হয়েছে। দম
ফেলার ফুসরত নেই জুমিয়াদের। ফসল তোলাকে কেন্দ্র করে নবান্ন উৎসবের আয়োজন চলছে। চলতি বছর বৃষ্টি-পাত ভাল না হলেও পূর্বের বছর তুলনায় এই মৌসুমে ফলন ভাল হয়েছে।

রাঙামাটি সদরের মগবান ইউনিয়নের ঝগড়াবিল এলাকার বসুদেব চাকমা বলেন, তিনি এইবার এক একর জমিতে জুমের ফসল ফলিয়েছেন। এর মধ্যে- ১৫ কেজি ধান রোপন করেছেন। লাগানো এইসব ধান কাটা শুরু করেছেন। কয়েকদিনের মধ্যে ধান কাটা শেষ হবে। আশা রাখছেন, এর থেকে ১০মণ ধান পাবেন।

তার সহধর্মীণী কবিতা চাকমা জানান, আমার স্বামীর সাথে আমি ধান কাটা শুরু করেছি। পাশাপাশি উৎপাদিত মরিচ, মারফা ঘরে তুলবো।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালে তিন পার্বত্য জেলায় মোট জুমিয়া কৃষকের সংখ্যা ৪২ হাজার ৯৩৭ জন। তার মধ্যে বান্দরবান ১৫ হাজার ৪৮ জন, খাগড়াছড়ি ৪ হাজার ৩৯০ জন এবং রাঙামাটিতে ২৩ হাজার ৫০০ জন প্রায়।

জুমে নানাবিধ ফসল চাষ হয়ে থাকে। তার মধ্যে- স্থানীয় এবং উফশী জাতের ধান, মিষ্টি কুমড়া, মারফা, চিনাল, অড়হর, শিম, শসা, করলা, ঢেঁড়শ, তিল, ভুট্টা, মরিচ, কাউন, বিলাতী ধনিয়া, করলা, বরবটি, ঝিংগা. চিচিংগা, চাল কুমড়া, কাকরোল, পুঁইশাক, জুমকচু, মুখিকচু, বেগুন, লাউ. ধুন্দল, আদা, হলুদ, যব, তুলা, পাহাড়ি আলু যা ঠান্ডা আলু হিসাবে পরিচিত, চুকুর, জোয়ার ও গাঁদা ফুল ইত্যাদি।

সূত্রটি আরও জানায়- জুম চাষের পদ্ধতিও ভিন্ন রকম। পৌষ-মাঘ
মাসে সুবিধাজনক সময়ে চাষের জন্য এক টুকরো পাহাড় নির্বাচন করা হয়। তারপর সেই জঙ্গলের সমস্ত গাছ, বাশঁ, ঝাড়-জঙ্গল কেটে ফেলা হয়। কাটার পর সেগুলো রোদে শুকানো হয় চৈত্র মাস পর্যন্ত। চৈত্র ও বৈশাখের শুরুতে এতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তাতে শুকিয়ে যাওয়া গাছপালা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেইসঙ্গে ওপরের ১-২ ইঞ্চি মাটিও পুড়ে যায়। ছাই ও পোড়া মাটির জন্য জমি উর্বর হয়। এরপর দু-এক পশলা বৃষ্টি হলে জমি ভিজে নরম হয়। তারপর বীজ বোনার কাজ শুরু হয়।

সূত্রটি বলছে, চলতি মৌসুমে রাঙামাটির দশ উপজেলায় ৯হাজার ৭১০হেক্টর জমিতে জুম ধান ( উফশী) চাষ করা হয়েছে।

এই বছর লক্ষ্য মাত্রা ছিলো- ৯হাজার ৪৫০হেক্টর। যা প্রতি হেক্টরে গড়ে ২দশমিক ৬ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। জুম ধানের মধ্যে রয়েছে গেলং, কবরক, আমেই, বাদোয়ে, বিনি ধান। এছাড়া অর্থকরী ফসলের মধ্যে- মারফা, মরিচ, বেগুন, তিল, ঢেঁড়স ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি অঞ্চলের উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, গত বছরের তুলনায় এই মৌসুমে জুমের ভাল ফলন হয়েছে। জুম চাষীদের স্থানীয় বীজের পাশাপাশি খড়া সহিষ্ণু ফলনশীল জাত বিরি ধান-৪৮, বিরি ধান ৮৫, বিরি ধান ৮২, বিরি ধান ৬৫ জাতের বীজ এবং বিভিন্ন ধরণের কীটনাশকও
বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি তাদের মাঝে সরকারি প্রণোদনা হিসেবে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে। কৃষকদের সকল সমস্যার দূরীকরণে কৃষি বিভাগ পাশে রয়েছেন বলে যোগ করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে, চাকমা, জুম ফসল
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন