জ্বর, গিরা ব্যথা, চুলকানি রোগ

টেকনাফ ও উখিয়ায় অজানা ভাইরাসে আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

fec-image

কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় ঘিরা বা জয়েন্ট ব্যথা, মাত্রাতিরক্ত জ্বর, সারা শরীর ব্যাথা, পা ফুলে যাওয়া, মাথা ঘুরানো, চুলকানিসহ অজানা ভাইরাস রোগে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ টেকনাফের ঘরে ঘরে দিনাতিপাত করছে আক্রান্ত রোগীরা। এ রোগ নির্ণয়ে হিমশিম খাচ্ছে রোগী ও চিকিৎসকরা।

দেড় মাস ধরে এই রোগে ভুগছে মানুষ। প্রথমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শুরু হয়। সেখান থেকে ধীরে ধীরে টেকনাফসহ পুরো কক্সবাজার জেলায় এ রোগে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।
রবিবার (২৯ জুন) সরেজমিন ঘুরে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত দেড় মাস পূর্বে থেকে টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হঠাৎ করে হাঁড় কাঁপানো অতিরিক্ত জ্বর,

শরীরের প্রতিটি গিরা বা জয়েন্টে ব্যথা-বিষ, পা ফুলে যাওয়া ও চুলকানিসহ নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এ রোগটি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়লে প্রথমের দিকে চিকিৎসকগণ এন্টিবায়োটিক সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ঔষধ সেবনের জন্য প্রদান করে।

পরে রোগটি ছোট বড় সকল আক্রান্ত করায় একপর্যায়ে এসব রোগীকে এন্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন না করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এই অজানা ভাইরাস রোগটি ৮-১০ দিন স্থায়ী থাকে। এসময় রোগী হাঁটা চলা একদম করতে পারে না।

অন্যজনের সাহায্যে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে যেতে হয়। খাওয়ার রুচি চলে যায়।
পরিবারের একজনের হলেই পর্যায়ক্রমে সকলকে এ অজানা ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। শুধু তাই নই, এ রোগে আক্রান্ত হয়ে একবার ভাল হওয়ার পর পুনরায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে যাদের ডায়বেটিস রোগ রয়েছে ওদের জন্য এই রোগটি দীর্ঘদিন স্থায়ী হচ্ছে বলে অনেক রোগী জানিয়েছেন।

এদিকে, খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, অজানা এই ভাইরাস রোগটি চিকুনঘুনিয়া, ডেঙ্গু জ্বরের মত লক্ষণ হলেও ব্লাড টেস্ট পরীক্ষায় নেগেটিভ ধরা পড়ে। রক্তের প্লাটিলেট অনেক কমে যায়। ফলে রোগীরা আতঙ্ক হয়ে পড়ে।

অজানা ভাইরাসের এ রোগটি এখন আর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সীমাবদ্ধ নেই। এটি ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের গ্রাম ও টেকনাফসহ পুরো কক্সবাজার জেলায়। টেকনাফের নোয়াপাড়া গ্রামের ছৈয়দুল আমিন চৌধুরী জানান, পরিবারের মধ্যে প্রথমে ছোট মেয়ে এই অজানা ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়।

পরে তিনিসহ পুরো পরিবারের ৬-৭ জন সকলে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তিনি আরো জানান- শরীরে মাত্রাতিরিক্ত জ্বর, সমস্ত শরীরে ব্যথা, প্রতিটি জয়েন্টে ব্যাথা-বিষ ও পা ফুলে গিয়েছিল। মুখের রুচি থাকে না। চিকিৎসকের কাছে গেলে প্যারাসিটামল ও ব্যথানাশক ঔষধ ছাড়া আর কোন ঔষধ দেয় না। এ সময় লেবু, ডাব ও নিয়মিত খাবার চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

টেকনাফের সংবাদকর্মী আবদুস সালাম জানান, এমন মারাত্মক জয়েন্ট ব্যথা, জ্বর ও সারা শরীর ব্যথা জীবনে কোনো দিন হয়নি। হঠাৎ করে শরীর কাঁপুনি জ্বর হয়ে আক্রান্ত হয়ে পড়ি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা: প্রণয় রৌদ্র জানান- ইতিমধ্যেই এ রোগটি ছড়িয়ে পড়ার খবর আমরা জেনেছি। এ রোগ নিয়ে অনেক রোগী আমাদের হাসপাতালে আসে। এ রোগে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এছাড়াও এন্টিবায়োটিক সেবন না করতে বারণ করেন। এ রোগ দেখা দিলেই হাসপাতালের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি আরো জানান- ইতিমধ্যে এই অজানা ভাইরাস রোগটির ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, হ্নীলা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন