তামাক আগ্রাসনে ছেয়ে গেছে পাহাড়ের ভূমি
মুহাম্মদ আব্দুল হালিম, খাগড়াছড়ি
দেশী-বিদেশী ট্যোবাকো কোম্পানির লোভনীয় অফারে আকৃষ্ট হয়ে পাহাড়ের সাধারণ কৃষকরা নিজ জমির ঊর্ববরতার কথা ভূলে গিয়ে সাময়িক মুনাফার আশায় ফসলি জমিগুলোতে অতিমাত্রায় তামাক চাষ করছে। জেলার সর্বত্রই ছেয়ে গেছে তামাক চাষে। এতে করে বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে তামাক আগ্রাসনে বিপন্ন হতে চলেছে পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ।
তামাক চাষে জমির ঊর্ববরতা বিনষ্ট হয়ে এর ক্ষতিকর প্রভাবের কথা কৃষকদের বার বার বলা হলেও অতি লাভের আশায় তাদেরকে বিরত রাখা যায়নি। তাই বিকল্প হিসেবে কৃষকদেরকে ভূট্টা চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করছে খাগড়াছড়ির পাহাড়ী কৃষি গবেষণা বিভাগ।
খাগড়াছড়ির পাহাড়ী কৃষি গবেষণা অফিস সুত্রে জানা যায়, ভূট্টা একটি অধিক ফলনশীল দানা শস্য। ধান ও গমের তুলনায় ভূট্টার পুষ্টিমান বেশি। ১১% আমিষ রয়েছে এ ফসলে। ভূট্টার রয়েছে নানাবিধ ব্যবহার। এর দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে, গাছ ও সবুজ পাতা উন্নত মানের গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। হাসঁ মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর গুরুত্ব রয়েছে। বর্তমানে ২.০২ লক্ষ হেক্টর জমিতে ১৩.৭৮ লক্ষ মে.টন ভূট্টা উৎপাদন হয়।
এ জেলার মোট ৮টি উপজেলায় অর্ধলক্ষাধিক একর ফসলি জমিতে এবছর করা হয়েছে তামাক চাষ। ট্যোবাকো কোম্পানিগুলো তামাক চাষীদের মাঝে দাদনের অর্থ ও সার সরবরাহসহ তামাক চাষের সকল প্রয়োজনীয় উপকরণাদী সরবরাহ করে চলেছে। সার, কীটনাশকসহ প্রয়োজনীয় পুঁজির নিশ্চয়তায় প্রলুব্ধ হয়ে স্থানীয় সাধারণ উপজাতি ও বাঙালি কৃষকরা বুঝে না বুঝে উৎসুক তামাক চাষে।
খাগড়াছড়ির মাটিরাংগা, পানছড়ি, দিঘীনালা, মহালছড়ি, রামগড়, মানিকছড়ি ও সদর উপজেলাসহ জেলার সবকটি উপজেলার ফসলি জমিগুলোতে যে দিকে দেখা যায় সর্বত্রই শুধু তামাক আর তামাক।
দিঘীনালার তামাক চাষী মোবারক হোসেন জানায়, সুবিধাভোগী একশ্রেণীর মহাজন ও প্রভাবশালী দাদন ব্যবসায়ীর পাশাপাশি অনেক ট্যোবাকো কোম্পানি পার্বত্য এলাকার সহজ সরল ও অজ্ঞ চাষীদের বোকা বানিয়ে সহজ শর্তে সরবরাহকৃত ঋণ এবং কীটনাশকের নামে সুকৌশলে চড়া সুদ আদায় করে নিচ্ছে।
ডেন্টিস জহিরুল ইসলাম মোহন জানান, পাহাড়ে তামাক চাষের ব্যাপকতা দিন দিন বাড়লেও সরকারের তামাক বিরোধী অভিযান আজ অবধি এ অঞ্চলে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। যার ফলে বৃটিশ নীল করদের কায়দায় ট্যোবাকো কোম্পানিগুলো এ অঞ্চলে ঘাঁটি বেঁধে বসেছে
কৃষিবিদ পাহাড়ী গবেষণার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. সেলিম জানান, তামাক চাষে পরিবেশ ও জমির উর্ববরতা কমে যায়। এ থেকে চাষিদের বিরত রাখতে বর্তমানে ভূট্টা চাষ করা হচ্ছে। তবে তামাক চাষে অর্থনৈতিকভাবে বেশি লাভবান হলেও ভূট্টা চাষে রয়েছে নানাবিধ সুবিধা।