চার উপজেলার মানুষের ভোগান্তি কমছে

দুই মাস পর কাপ্তাই হ্রদে লঞ্চ চলাচল শুরু

fec-image

প্রখর রোদ্রে কাপ্তাই হ্রদের পানি অস্বাভাবিক ভাবে শুকিয়ে যাওয়ায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার ৬টি উপজেলার গত ২৩ এপ্রিল থেকে নৌপথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে ওই উপজেলা গুলোর প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ চলাচলের ক্ষেত্রে চরম দূর্ভোগে পড়েছিল।

গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় হ্রদের পানি বেড়ে ৬ টি উপজেলার মধ্যে ৪টি উপজেলা বরকল, জুরাছড়ি,লংগদু ও নানিয়ারচর উপজেলায় গত শনিবার থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু করেছে। তবে বাঘাইছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলায় কয়েকটি নৌ রুটে পানি একেবারে কমে যাওয়ায় লঞ্চ ও ইঞ্জিন বোট চলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা নৌ-পরিবহন লঞ্চ মালিক সমিতি।

রবিবার (২৩ জুন) সকালে জেলার নৌ-পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ মঈনুদ্দিন সেলিম জানান, গত দুই মাস ধরে মালিক সমিতির লঞ্চ চলাচল করতে না পারায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে জেলার ৬টি উপজেলার মানুষদের। ছোট ছোট ট্রলার বোটের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রতিটি যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুন তিনগুন ভাড়া নিয়ে মালিক সমিতির ঘাড়ে বদনাম ছাপাতে চেয়েছেন। লাইনে যেহেতু মালিক সমিতির কোন লঞ্চ নেই সেহেতু দ্বিগুন তিনগুন ভাড়ার সাথে মালিক সমিতি কোন ভাবে সম্পৃক্ত ছিল না। বৃষ্টি হয়ে কাপ্তাই হ্রদে সামান্য হয়েছে তাই শনিবার থেকে মালিক সমিতি বরকল জুরাইছড়ি ও লংগুদু উপজেলা সদরে লঞ্চ সার্ভিস চালু করেছে। তবে বৃষ্টি হয়ে পানি বাড়লে আরও তিন উপজেলায় লঞ্চ চলাচল চালু করা হবে বলে তিনি জানান।

বরকল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শ্যামরতন চাকমা ও জুরাইছড়ি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিটন চাকমা বলেন, শুস্ক মৌসুমে প্রতি বছর হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলে বরকল ও জুরাইছড়ি দুই উপজেলার মানুষদের উপজেলা সদর থেকে ইউনিয়নে কিংবা জেলা সদরে যাতায়াত করতে অর্বণনীয় দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে হয়। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় লঞ্চ চলাচল করতে না পারায় গত দুই মাস ধরে এ দুই উপজেলার মানুষদের ছোট ছোট ট্রলার বোটে দ্বিগুন তিনগুন ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনেও দ্বিগুন তিনগুন ভাড়া দিয়ে জেলা সদর থেকে নিয়ে আসায় ও সব মালামাল উপজেলার সাধারণ ক্রেতাদের কিনে নিতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে একদিকে আর্থিক অন্য দিকে শারিরীক ও মানসিক ভাবে বিপদগ্রস্ত হতে হচ্ছে এ দুই উপজেলার সাধারণ মানুষদের।

উল্লেখ্য, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনে ১৯৬০ সালে খরস্রোতা কর্ণফুলি নদীর উপর দিয়ে নির্মিত হয় কাপ্তাই বাঁধ। সৃষ্টির পর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদন, নৌ যোগাযোগ, জলে ভাসা জমিতে কৃষি চাষাবাদ, সেচ, ব্যবহার্য পানি সরবরাহ, পর্যটনসহ বিভিন্ন সুযোগ ও সম্ভাবনা গড়ে ওঠে কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে। কিন্তু সৃষ্টির পর গত ৫৯ বছরে কাপ্তাই হ্রদের কোনো সংস্কার, ড্রেজিং বা খনন করা হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে নামা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদে পলি জমে হ্রদের নাব্যতা নষ্ট হয়ে গেছে। নাব্যতার সংকটের কারণে এই বিশাল কাপ্তাই হ্রদ অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন