পাহাড়ি ঝর্ণা ভ্রমণে বাড়ছে ঝুঁকি


বান্দরবানের বিভিন্ন পাহাড়ি ঝর্ণায় ঘুরতে গিয়ে মৃত্যু হওয়ার সাথে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রায়। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গাইড নিশ্চিত না করায় এসব ভ্রমণে বাড়ছে ঝুঁকি। সর্বশেষ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ‘ফাত্রাঝিরি ঝর্ণা’ দেখতে গিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন কক্সবাজার উখিয়ায় একটি ভ্রমণ দল। এ সময় স্রোতের তোড়ে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হন হাফেজ মেহরাব হোসাইন (১৮) নামে এক কিশোর।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকার ঝর্ণায় ঘুরতে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিখোঁজ মেহরাব উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের মরিচ্যা বাজার এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় হোটেল ওয়াকিয়ার মালিক মনজুর আলমের ছেলে।
স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে মেহরাবসহ ১৮ সদস্যের একটি দল উখিয়া থেকে ফাত্রাঝিরি ঝর্ণা ভ্রমণে যান। ঝর্ণা দেখে ফেরার পথে আনুমানিক দুপুর দেড়টার দিকে হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে খালের পানির স্তর বৃদ্ধি পায়। এ সময় বাঁশের তৈরি সাঁকোর একটি ডাল ভেঙে খালের পানিতে পড়ে যান মেহরাব। পরে প্রবল স্রোতে মুহূর্তেই তলিয়ে যান তিনি। ঘটনার পরপরই স্থানীয় লোকজন, স্বজন ও বন্ধুরা উদ্ধারে নামলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি তার।
এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক উদ্ধার অভিযান শুরু না হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে জরুরি সাড়া-পদ্ধতি নিয়েও।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ওই খাল ধুরুম খালি হয়ে রেজুখাল পেরিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। স্রোতের তীব্রতায় ওই যুবক হয়ত সমুদ্র পর্যন্ত ভেসে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মেহরাবের চাচা আবদুল মালেক বলেন, ‘আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কেউ কোনো তথ্য পেলে মরিচ্যা বাজারের ওয়ালটন প্লাজা মার্কেটে যোগাযোগের অনুরোধ করছি।’
এদিকে ফাত্রাঝিরি ঝর্ণা এলাকায় পর্যটকদের ভিড় বাড়লেও নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এছাড়া সেখানে নেই সরকারি পর্যটন নিয়ন্ত্রণ কিংবা সতর্কবার্তা। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় যেকোনো সময় ভারী বৃষ্টিপাতে হঠাৎ ঢল ও স্রোত বেড়ে যায়। যা যেকোনো সময়ই রূপ নিতে পারে প্রাণঘাতী ঢলে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এখানকার ঝুঁকি বেড়ে যায় বহুগুণে। তবে এসব বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই প্রশাসনের।
এর আগে গত ৯ জুন বান্দরবানের আলীকদমের দুর্গম ক্রিস্টং পাহাড়ে ঘুরতে এসে তৈন খালের প্রবল স্রোতে নিখোঁজ হন দুই পর্যটক ও এক ট্যুর অপারেটর। পরে তাদের মধ্যে দু’জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন তাদের একজন।
এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ঝর্ণা এলাকাগুলোতে সতর্কতা চিহ্ন, গাইড বাধ্যতামূলককরণ, ঢলের পূর্বাভাস প্রচার ও দ্রুত উদ্ধার ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
সূত্র : নয়াদিগন্ত