পৃথিবীর লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকির মুখে: গবেষণা

fec-image

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) মার্কিন বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে পৃথিবীর লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকির মুখে। সাধারণত লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম বা জীবন প্রণালি বলতে যে বাতাসে আমরা শ্বাস নিই, যে পানি আমরা পান করি, যে মাটিতে আমরা ফসল ফলাই-বসবাস করি এবং সামগ্রিকভাবে যে জলবায়ুর অংশীদার আমরা সেটিকে বোঝানো হয়। পৃথিবীর লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম বা জীবন প্রণালি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে তা আর মানুষের জন্য নিরাপদ নয়। এমন সতর্কবার্তাই প্রকাশ করেছেন ডেনমার্কের ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগেনের একদল গবেষক। তাঁরা পুরো পৃথিবীর ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষার’ পর এক গবেষণা নিবন্ধে এ কথা বলেছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগেনের ২৯ জন গবেষক পুরো পৃথিবীর ৯টি ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষা’ সূচক ব্যবহার করে এই গবেষণা চালান। সেখানে তাঁরা দেখতে পান ৯টি সূচকের মধ্যে—জীবজগতের অটুট অবস্থা (অর্থাৎ কোনো প্রজাতির হারিয়ে না যাওয়া বা যুক্ত না হওয়া), জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিষ্কার পানির পর্যাপ্ত ব্যবহারের মতো সব মিলিয়ে ৬টি সূচক এরই মধ্যে নিরাপদ সীমা অতিক্রম করেছে। সব মিলিয়ে ৯টির মধ্যে ৮টি সূচকই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কেবল পৃথিবীর ওজোন স্তর আগের চেয়ে অনেকটা ভালো অবস্থানে রয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের হস্তক্ষেপের কারণে এই জীবন প্রণালি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরাপদ বসবাসের যে সর্বশেষ সীমা তা অতিক্রম করেছে। এ বিষয়ে গবেষণা প্রধান গবেষক ক্যাথেরিন রিচার্ডসন বলেন, ‘আমরা জানি না, এই বড় ও নাটকীয় বিপর্যয় থেকে আমরা কতটা উন্নতি করতে পারব।’

তবে এখনো আশা শেষ হয়নি। গবেষকেরা বলছেন, নিরাপদ বসবাসের সর্বশেষ সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া মানে এই নয় যে, মানবসভ্যতা এখনই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে। তবে এই পরিবর্তন, এই সীমা অতিক্রম পৃথিবীর লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমের অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করবে।

এ বিষয়ে ক্যাথেরিন রিচার্ডসন বলেন, ‘আমরা পৃথিবীকে মানুষের শরীরের সঙ্গে এবং নিরাপদ বসবাসের সর্বশেষ সীমাকে রক্তচাপের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। রক্তচাপ ১২০/৮০-এর বেশি হলে হয়তো হার্ট অ্যাটাক হবে না, কিন্তু এটি এর আশঙ্কা বাড়াবে।’ এ সময় তিনি মানুষের অতিমাত্রায় নির্বনীকরণ, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, প্লাস্টিক, বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহারের কুফল তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘মানুষের তৈরি কয়েক হাজার রাসায়নিক প্রতিনিয়ত পরিবেশে মিশছে। আমরা মানুষের এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া দেখে ক্রমাগত অবাক হচ্ছি।’

গবেষণায় বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ৯টি সূচকের মধ্যে কেবল ৩টি সূচককে কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থা পেয়েছেন। সেগুলো হলো—সমুদ্রে অ্যাসিডের পরিমাণ, ওজোন স্তরে ছিদ্র এবং বিভিন্ন বায়ুদূষকের উপস্থিতি। তবে সমুদ্রের পানিতে অ্যাসিডের পরিমাণ শিগগিরই নিরাপদ সীমা অতিক্রম করবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ক্ষতিগ্রস্ত, গবেষণা, ঝুঁকি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন