বান্দরবানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তায় স্বজনপ্রীতিতে বিএনকেএস এনজিও

fec-image

স্মরণকালে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বান্দরবানের থানচি উপজেলায় প্রকৃত বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তা না দিয়ে, সেটি নিকট আত্মীয় ও নিজের পরিচিত ব্যক্তিদের কাছে আর্থিক অনুদান তুলে দেয়া অভিযোগ উঠেছে বলিপাড়া নারী কল্যাণ সমিতি (বিএনকেএস) এনজিও বিরুদ্ধে। মূলত এই এনজিও কর্তৃপক্ষরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা না করে স্বজনপ্রীতি করার হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন চলতি মাসের ভয়াবহ বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী অসহায় পরিবার ও এলাকাবাসী।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অভিযোগ, এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নতুন পাড়া হেডম্যানসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষ। যারা বন্যায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব পরিবারদের তালিকা না করে, যাদের ঘর বন্যায় কবলিত পড়েনি মুষ্টিমেয় লোকজনকে তালিকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তারা বলেন, যাদের বাড়ি ভাঙ্গার দুরের কথা এক ইঞ্চিও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি সেসব পরিবার গুলোকে সুযোগ-সুবিধা হাসিল করতে তাদের নাম দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি এনজিও সংস্থা বিএনকেএস থেকে থানচি উপজেলায় বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ৩২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান বরাদ্ধ দেওয়া হয়। তারমধ্যে ৪টি ইউনিয়নের বলিপাড়া ২৮৮, সদরে ২০০, রেমাক্রী ৫০ ও তিন্দু ইউনিয়নের ৫০ টিসহ মোট ৫শত ৮৮ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পাবে ৫ হাজার ৫শত টাকা আর্থিক সহায়তা।

শুধু অর্থ নয় বন্যার কবলিত পরিবারদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে ৫০টি করে পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট ও প্রতি পরিবারের মাঝে ২টি লিফলেট বিতরণ করা কথাও রয়েছে। তাছাড়া বন্যার কবলিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করতে বিএনকেএস সংস্থা থেকে গ্রামগুলোতে মাঠে কাজ করছেন ৫ জন ভলেন্টিয়ার।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সোমবার (২৮ আগস্ট) সকালে থানচি উপজেলার মিলনায়তনে ৫ হাজার ৫শত টাকা করে ১শত ৮৫ জন বন্যার কবলিত মানুষের মাঝে ১ লাখ সাড়ে ১৭ হাজার টাকা আর্থিক প্রদান করেন বেসরকারি সংস্থা বিএনকেএস। এরপরেই শুরু হয় সমালোচনা ঝড়। প্রকৃত বন্যার ক্ষতিগ্রস্তরা আর্থিক অনুদান না পাওয়াই একের পর এক অভিযোগ করতে থাকে বন্যার কবলিত সাধারণ মানুষ। এরপর বন্ধ করে দেওয়া হয় আর্থিক অনুদানের বিতরণ। তাছাড়া নামের তালিকা সাথে সামঞ্জস্য একেবারে নেই, তাদের তালিকা দেখা গেছে অন্যরকম চিত্র। অনেকেই এই বন্যাতে বাড়িঘর প্লাবিত না হয়েও পাচ্ছেন আর্থিক অনুদান। এতে দুঃখ প্রকাশ ও এনজিও প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া করেছেন প্রকৃত বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।

বিএনকেএস ভলেন্টিয়ার সুপারভাইজার সেমসম বম বলেন, আমরা না খেয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে পাড়া কারবারীদের সাথে বসে মিটিং করি। তাদের তথ্য অনুযায়ী আমরা ঘরে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করি। তাছাড়া অনেকে মুরগী, ঘর আবার জমি গেছে সেসবগুলো তথ্যনুযায়ী তালিকা তৈরি করেছি। তবে তিন্দু ও রেমাক্রীতে কয়েকটি ঘর ডুবে গেছে। তবে বেশীর ভাগই জুম চাষ পাহাড় ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে গেছে সেইগুলো আমরা তালিকা করে এনেছি। তবে অভিযোগ পুরোপুরি সাজানো আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

বিএনকেএস পোগ্রাম ম্যানেজার পেশাল চাকমা বলেন, বলিপাড়াতে ১১ জনের আর্থিক না পাওয়ার অভিযোগ এসেছিল তাদেরকেও তদন্ত অনুসারে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে তালিকা করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া বিএনকেএস ষ্টার ফান্ডে কোন জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে মাঠে জরিপ করার সেই নিয়ম আমাদের নাই। যা করার আমাদের ভলেন্টিয়াররা সরেজমিনে গিয়ে জরিপ করবে। তাছাড়া আমরা এইখান থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ষ্টার ফান্ডে পাঠিয়ে দেই তারা সবকিছু সিলেকশন করে। মাঝে মাঝে আমাদের ভলেন্টিয়ারদের কিছু মিসঘেট হবে এটাই স্বাভাবিক।

এদিকে বিএনকেএস পরিচালক হ্লাসিংনু সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এবিষয়ে থানচি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অংপ্রু জানান, যাচাই বাছাই পরে অনেকে এক পরিবারের ৭-৮ জন পেয়েছে। অনেকে ভুক্তভোগীরা পাইনি, এরকম অভিযোগ সকালে পেয়েছি। উপজেলার যদি আইনশৃঙ্খলা মিটিং হয় তাহলে সেই বিষয়ে উত্থাপন করার জন্য পদক্ষেপ হিসেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

থানচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহা: মুনসুর বলেন, কয়েকদিন আগের বিএনকেএস লোকজন এসে শুধু জানিয়েছে তারা মাঠে মাঠে গিয়ে জরিপ করবে। আর তিনদিন আগে স্কুলের সামনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দেখেছি। তবে প্রকৃতরা আর্থিক সহায়তা পাইনি কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি তারা পেয়েছে, সেই ব্যাপারে আমার কাছে এখনো কেউ অভিযোগ করতর আসেনি। যদি অভিযোগ আসে তাহলে সেটি নিয়ে তদারকি করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন