পাহাড়ের গহীনে একটি বিহার ও একজন ভিক্ষুকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন

fec-image

চট্টগ্রাম শহর থেকে গাড়িতে রওনা হয়ে রাঙ্গুনিয়ার পদুয়া ইউনিয়নের ফলাহারিয়া গ্রামে পৌঁছাতে লাগল প্রায় আড়াই ঘণ্টা। সেখানে গহীন বনে পাহাড়ের ওপর গড়ে তোলা হয়েছে নতুন এক বৌদ্ধ বিহার- জ্ঞানশরণ মহারণ্য।

বিহারের সীমানার প্রবেশমুখেই অসম্পূর্ণ একটি তোরণ। কিছুদূর এগোনোর পর সামনে পড়ে চারদিক খোলা বড়সর একটি একতলা স্থাপনা, তার মেঝে ঝকঝকে টাইলস করা, কলামগুলোতে লাল আর সোনালী কারুকাজ। একপ্রান্তে বিরাট এক সিংহাসন, সেখানে বসে ভক্তদের দেখা দেন বিহারের প্রতিষ্ঠাতা ভদন্ত শরণংকর থেরো।

অপরূপ সবুজ অরণ্যের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বানানো হয়েছে বেশ কয়েকটি বুদ্ধ মূর্তি। তবে বিহারের মূল অংশ দেখতে চাইলে উঠতে হবে পাহাড়ে; আর সেখানে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ!

ফলাহারিয়ার অরণ্যে আট বছরের কম সময়ে গড়ে ওঠা এই বিহার ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। শরণংকর থেরো এবং তার অনুসারীদের কর্মকাণ্ডে শান্ত সৌম্য এই বৌদ্ধ বিহারই রাঙ্গুনিয়ায় ছড়াচ্ছে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা।

এক সময় তার নাম ছিল রনি বড়ুয়া; এখন তিনি ভক্তদের কাছে পরম পূজনীয় ‘শ্মশানচারী অরণ্যবিহারী পদব্রজচারী সদ্ধর্মের আলোকবর্তিকা ধুতাঙ্গ সাধক’ শরণংকর থেরো। বয়স আনুমানিক ৩৬ বছর।

২০১২ সালে ফলাহারিয়ার এই অরণ্যে তিনি আসন পেতেছিলেন ধ্যান করার জন্য। এরপর অর্ধশত একর সরকারি বনভূমি দখল করে তিনি গড়ে তোলেন এই বিহার।

সেখানে বিদেশি জাতের প্রশিক্ষিত কুকুরের উপস্থিতি, এসি লাগানো ভূগর্ভস্থ ধ্যানকক্ষ আর নিত্য নতুন তরুণ শ্রমণদের আনাগোনায় স্থানীয়দের মধ্যে কৌতূহল আর সন্দেহ তৈরি হচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ সেখানে থেমে থাকেনি।

সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি ও বনভূমি দখল ছাড়াও স্থানীয়দের ওপর নির্যাতন, হিন্দুদের শ্মশান উচ্ছেদ, মুসলমানদের ধর্ম নিয়ে বিষোদ্গার, এমনকি মিয়ানমারের লোকজনকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে এই বৌদ্ধ ভিক্ষুর বিরুদ্ধে। এসব নিয়ে ডজনখানেক মামলাও হয়েছে।

এসব মামলা এবং স্থানীয়দের রোষের মুখে বিহার ছেড়ে ঢাকায় এসে অবস্থান নিয়েছেন শরণংকর থেরো।

কিছু অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি পাল্টা অভিযোগে বলেছেন, অন্যায় কিছু হয়ে থাকলে ‘তার ওপরই’ হচ্ছে।

আবার সরকারি জমি দখলের মত কিছু বিষয় তিনি এমনভাবে কবুল করেছেন যে, আসলে তিনি নিয়ম কানুনের তোয়াক্কাই করেন না।

তিনি বলেছেন, “আমি সরকারি জায়গায় বিহার করেছি। জমি তো নিয়ে চলে যাইনি। অনেক মসজিদ, মাদ্রাসা, হিন্দু মন্দিরও তো সরকারি জায়গায় রয়েছে। সরকার চাইলে ফেরত দিয়ে দেব। পাঁচ বছরের মধ্যে এরকম আরেকটি বিহার বানানোর ক্ষমতা রাখি।”

সেই ক্ষমতার উৎস কী? শরণংকর থেরোর সরল উত্তর- দেশ-বিদেশ থেকে পাওয়া টাকা।

চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার এবং রাঙ্গুনিয়া সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ফলাহারিয়া গ্রামের পাহাড়ে শরণংকর থেরোর বিহারে পৌঁছানো খুব সহজ নয়।

রাঙ্গুনিয়ায় ঢোকার পর চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট হয়ে ফলাহারিয়ায় যাওয়ার আগে মাঝখানে বেশ কিছুটা রাস্তা রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলায় পড়েছে। দুর্গম সেই পাহাড়ি পথে কিছু দূর পরপরই বন্য হাতি চলাচলের সাবধানবাণী টাঙানো।

ওই পথের ধারেই কারিগরপাড়া নামের একটি বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানালেন।

রাজস্থালী থেকে আবার রাঙ্গুনিয়া উজেলায় প্রবেশ করে কিছু দূর যাওয়ার পর পদুয়া ইউনিয়নের ফলাহারিয়া গ্রাম। সেই গ্রামে মনুষ্য বসতি যেখানে শেষ হয়েছে, সেখান থেকে বন ঘেরা পাহাড়সারি চলে গেছে রাঙামাটি ও বান্দরবানের দিকে।

পাহাড়ি পথ ধরে দুই কিলোমিটারের মত ইটের রাস্তা পার হলে সামনে পড়বে কয়েকটি পাহাড়জুড়ে গড়ে তোলা ‘জ্ঞানশরণ মহারণ্য’ বৌদ্ধ বিহার।

বন বিভাগের হিসাবে, ৫২ একর সরকারি সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে সেখানে পাকা দালানসহ নানা স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।

জনমানবহীন এলাকায় একটি অসম্পূর্ণ তোরণ ও বুদ্ধ মূর্তি দেখে বোঝা যায়, বিহারের এলাকা শুরু হয়েছে। হাজেরা বেগম নামে স্থানীয় এক নারীর অভিযোগ, তার জমি দখল করেই বানানো হয়েছে ওই তোরণ। এ নিয়ে তিনি মামলাও করেছেন।

তোরণ পেরিয়ে কাঁচা রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে দূরে পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি বুদ্ধ মূর্তি আর কিছু স্থাপনা চোখে পড়ে। তবে আশপাশে কোনো জনবসতি নেই।

সামনেই সমতল জমিতে একটি পুকুর কাটা হয়েছে, যার মাঝে পদ্মাসনে বসা গৌতম বুদ্ধের একটি মূর্তি।

আরও কিছুটা এগিয়ে গেলে একটি আধশোয়া বুদ্ধ মূর্তির দেখা মেলে, যার পাশেই এক সময় ছিল হিন্দুদের শ্মশান, সেটি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে শরণংকর থেরোর বিরুদ্ধে।

সেখান থেকে দূরে বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি বুদ্ধ মূর্তি দেখা যায়, যেগুলোর নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি।

একটি পাহাড়ে রয়েছে থাকার ঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। সামনের দিক দিয়ে ওই পাহাড়ে ওঠার রাস্তা থাকলেও সাধারণ মানুষকে সেখানে যেতে দেওয়া হয় না বলে ফলাহারিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের ভাষ্য।

তাই সামনে দিয়ে ওঠার চেষ্টা না করে পেছন দিয়ে পাহাড় বেয়ে উঠতেই চোখে পড়ল একটি পাকা দালান, যার আধা তলা মাটির উপরে, বাকিটা মাটির নিচে।

কাছে গিয়ে দেখা গেল, শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসিয়ে ঘর ঠাণ্ডা রাখার ব্যবস্থাও সেখানে আছে। তবে পুরনো কাপড়চোপড় দিয়ে এমনভাবে ঢেকে রাখা হয়েছে, যাতে দূর থেকে দেখে বোঝা না যায়। পানি সরবরাহের জন্য লাইন ও পানির ট্যাংকও সেখানে আছে।

ওই দালানের পাশেই একটি আধাপাকা ঘরে দেখা গেল দুটো জার্মান শেফার্ড। মাটির নিচের ঘর, কুকুর রাখার স্থান, গভীর নলকূপ, পানির ট্যাংক- সব এমন সব জায়গায় করা হয়েছে, যাতে সহজে চোখে না পড়ে।

একটি টিনের ছাউনি ত্রিপল দিয়ে ঘিরে বানানো হয়েছে গাড়ি রাখার স্থান। সেখানে বেশ কয়েকটি গাড়ি একসঙ্গে রাখা সম্ভব। একটি গাড়িও সেখানে দেখা গেল।

বন বিভাগের হিসাবে, বিহারে প্রায় তিন একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। এর মধ্যে দুটি পাকা দালান, একটি পাকা ধ্যানঘর, থাকার জন্য টিনের ১১টি ঘর, গ্যারেজ, কুকুর রাখার ঘর, চারটি নলকূপ রয়েছে।

বিহারের জন্য বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়া হয়েছিল প্রায় কুড়িটি। এর মধ্যে বেশিরভাগ সংযোগই কাটা পড়েছে।

বিহার ঘিরে অভিযোগ

শরণংকর থেরো ফলাহারিয়ার পাহাড়ে যান ২০১২ সালে। একটি টিনের ঘর দিয়ে শুরু হলেও বন বিভাগের বিশাল এলাকা এখন তার দখলে।

বন বিভাগের রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জের সুখবিলাস বিটের কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সময় যত গড়িয়েছে, পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধ মূর্তি আর স্থাপনা গড়ে বিহারের সীমানা বাড়িয়েছেন ওই ভিক্ষু।

“এসব তিনি করেছেন জবরদখলের জন্য। যদি ধর্ম প্রচারের জন্যই হত, এভাবে সরকারি জমি দখল করার প্রয়োজন তো ছিল না।”

আশরাফুল বলেন, বন বিভাগ মামলা করেও পায়নি। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার চেষ্টাতেও সফল হওয়া যায়নি। বরং বন বিভাগ যেসব গাছ লাগিয়েছিল, সেসব উপড়ে ফেলা হয়েছে। নষ্ট করা হয়েছে চারা গাছ।

বন বিভাগের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে শরণংকর থেরো দাবি করেন, সেখানে তার ‘নিজের কেনা’ চার কানি (১৬০ শতাংশ) জমি আছে। ওই জমিতে পুকুর কাটা হয়েছে এবং কিছু জায়গা ফাঁকা রয়েছে।

তাহলে এত স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে কার জমিতে? শরণংকর স্বীকার করলেন, তার ওই বিহার সরকারি জমিতেই করা হয়েছে।

“সরকারি সম্পত্তি ফেরত চাইলে আমি দিয়ে দেবে। আমার বিরুদ্ধে অন্য সব অভিযোগ মিথ্যা।“

তবে মামলা যেহেতু হয়েছে, সেহেতু আদালতেই এর ফয়সালা হবে মন্তব্য করে তিনি হুমকির সুরেই বলেন, “যদি আমি মামলায় হেরে যাই, তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে আমিও মামলা করব।”

পদুয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তারা প্রথমে শরণংকর থেরোকে সহযোগিতাই করেছেন। কিন্তু পরে তার ‘হিংসাত্মক কথাবার্তা আর চালচলনে’ তাদের সন্দেহ তৈরি হতে থাকে।

“পাহাড়ের ওপরে আন্ডারগ্রাউন্ড ঘর বানানো হয়েছে। মনে হয় সেখানে কোনো দুরভিসন্ধিমূলক সভা সমিতি করা হয়। সেখানে কাউকে উঠতে দেওয়া হয় না। কেউ সেখানে যেতে পারে না। সন্ন্যাসীদের সবার বয়স ৩০-৩২ এর নিচে। এর মধ্যে একটা দুরভিসন্ধির আভাস পাওয়া যায়।“

কী ধরনের দুরভিসন্ধির কথা স্থানীয় এই জনপ্রতিনিধি বলতে চাইছেন?

তার অভিযোগ: “কিছু দিন আগে মিয়ানমারের নাগরিকরা বিহারে এসেছিল। ভান্তে (শরণংকর থেরো) চলে যাওয়ার পর অনেক অস্ত্রশস্ত্র সরানো হয়েছে। হয়ত এখনো অনেক অস্ত্রশস্ত্র সেখানে পাওয়া যাবে।”

পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. বদিউজ্জামান বলেন, “তার (শরণংকর) প্রধান উদ্দেশ্য জমি দখল করা। সাধারণ মানুষ গরু-ছাগল নিয়ে পাহাড়ে উঠলেও তাদের ওপর তারা অত্যাচার করে। সেখানে সন্ত্রাসীদের লালন-পালন করে।”

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাশেই বলে সেখান থেকে ‘সন্ত্রাসীরা’ শরণংকরের সহায়তায় এ এলাকায় এসে থাকতে পারে বলে বদিউজ্জামানের সন্দেহ।

“মিয়ানমার থেকে ভিক্ষু এনে সে এখানে স্থাপনা তৈরি করছে। সেটা আমাদের ও বাংলাদেশের জন্য হুমকি। তাকে অতি দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা দরকার।”

তবে শরণংকর থেরো এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে তিনি বলেছেন, তার বিহারে অস্ত্র থাকলে তল্লাশি করে দেখা হোক। সরিয়েও যদি ফেলা হয়, তাহলে ফরেনসিক অনুসন্ধান করা হোক। তাহলেই সত্যিটা বেরিয়ে আসবে।

“আমি বাড়িঘর ছেড়েছি। সন্ন্যাস জীবন-যাপন করি। আমি অস্ত্রবাজির ভেতর কেন যাবে?”

বিহারে জার্মান শেফার্ড রাখার উদ্দেশ্য নিয়ে স্থানীয়দের সন্দেহ আর অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে শরণংকর থেরোর ভাষ্য, পশুপাখি পালন তার ‘শখ’। তবে ওই কুকুর আর পুকুরে কিছু হাঁস ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী পালনের কোনো চিহ্ন তার বিহারে দেখা যায়নি।

মাটির নিচের ঘর নিয়ে স্থানীয়দের যে সন্দেহ, সে বিষয়ে জ্ঞানশরণ মহারণ্য বিহারের দুজন দুরকম বক্তব্য দিয়েছেন।

শরণংকর থেরো বলেছেন, “আমরা আশ্রমে ৪০ থেকে ৪৫ জন সন্ন্যাসী থাকি। এর মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ জন বাচ্চা। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ওপর প্রায়ই হামলা হয়। আমাদের ওপর যদি কখনো হামলা হয়, তখন বাচ্চাদের যেন নিরাপদে রাখা যায়, সেজন্যই ওই ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।”

তবে ওই এলাকা ঘুরে দেখার সময় মাটির নিচের ওই ঘরের কাছে দঁfড়িয়ে বিহারের দায়িত্বে থাকা রাহুল অঙ্কুর ভিক্ষু  বলেছিলেন, “আমরা এই ঘরে ধ্যান করি।“

ধ্যান করার জন্য জঙ্গলে এসে থাকলে মাটির নিচের ওই ঘরে এসি লাগানো কেন- এ প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেন, “মাটির নিচের ঘরে গরম লাগে। তাই এসি লাগানো।“

বিহারের স্থাপনা তৈরির জন্য মিয়ানমার থেকে লোক আসার যে অভিযোগ স্থানীয়রা করছে, সেটাও ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেছেন শরণংকর থেরো।

তার দাবি, ওই বিহারের কারিগররা রাখাইন সম্প্রদায়ের। অথচ রাহুল ভিক্ষু বলেছেন, তারা কারিগর এনেছেন রাউজান থেকে।

সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা

গত বছরের অক্টোবরে জ্ঞানশরণ মহারণ্যে একটি স্থাপনা নির্মাণে বাধা দেয় বন বিভাগ। বিহারের জন্য দখল করা বন বিভাগের জায়গায় সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়।

সেই ঘটনা তুলে ধরে বন কর্মকর্তা আশরাফুল বলেন, “পরিদর্শনে গিয়ে দেখি উনি সেখানে ভবন নির্মাণ করছেন। আমরা বাধা দিলে উনি নিজে আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন, লাঞ্ছিত করেন, কিল-ঘুষি মেরে ফেলে দেন।

“আমার আগের বিট কর্মকর্তা সেখানে বিভিন্ন গাছের চারা লাগিয়েছিলেন। ওই চারাগুলো তারা নষ্ট করেছে, উপড়ে ফেলে দিয়েছে।“

এ বিষয়ে বন বিভাগের পক্ষ থেকে যে মামলা করা হয়েছে, সেখানে প্রায় ৭৫ হাজার চারা গাছ কেটে ফেলা, তিন হাজার চারা গাছ উপড়ে ফেলার অভিযোগ আনা হয়েছে।

অন্যদিকে শরণংকর থেরোর দাবি, সেই ঘটনায় বন বিভাগের লোকজনই বরং তার সন্ন্যাসীদের ‘লাঞ্ছিত’ করেছে। গাছ তারা নষ্ট করেননি, বরং আশ্রমের লাগানো গাছ বন বিভাগের লোকজন গিয়ে ‘নষ্ট করেছে’।

শরণংকর থেরোর কর্মকাণ্ডে সেটাই ছিল সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষের প্রথম আনুষ্ঠানিক বাধা। এরপর ঘটনাপ্রবাহ সাম্প্রদায়িক অশান্তির দিকে গড়ায়।

শরণংকর থেরো এবং তার অনুসারীরা গত বছরের অক্টোবরে বিহারের লাগোয়া একটি পাহাড়ে হিন্দুদের শ্মশানে লাশ দাহ করতে বাধা দেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

প্রিয়তোষ কান্তি দে নামে এক হিন্দু গ্রামবাসী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ২০০০ সাল থেকে ওই শ্মশানে লাশ দাহ করে আসছি। কিন্তু গত বছর একটি লাশ দাহ করার জন্য গেলে আমাদের বাধা দেওয়া হয়। চার ঘণ্টা তারা লাশ আটকে রাখে।”

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মৃতদেহ সেখানে আর দাহ করা হবে না- এরকম একটি লিখিত সে সময় নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন প্রিয়তোষ।

তিনি বলেন, শ্মশানের জন্য একটি টিনের ঘর তারা নির্মাণ করেছিলেন, সেটাও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে শরণংকর বলেন, “আমি লিখিত নেব কেন? ওই পাহাড়ের পাশে আমরা একটি শোয়া বুদ্ধ মূর্তি স্থাপন করেছি। এছাড়া পাশেই আমরা একটি স্কুল বানিয়েছি। তাদের শ্মশান ৭০ ফুট পাহাড়ের উপরে।”

অবশ্য পরে আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্বীকার করেন, ওই ঘটনার সময় তিনিই পুলিশকে খবর দিয়ে এনেছিলেন, তখন একটি লিখিতও নেওয়া হয়েছিল।

শ্মশানের ওই ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকায় মানবন্ধন করেছিলেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। সেই কর্মসূচি শেষে রাঙ্গুনিয়ায় ফেরার পথে গত ১২ অক্টোবর কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তাদের গাড়ি বহরে গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ করেন প্রিয়তোষ। সেই ঘটনায় একটি মামলাও হয়েছে বলে তিনি জানান।

এদিকে শ্মশানের ওই ঘটনার সময় থেকেই শরণংকর থেরো এবং তার অনুসারীরা ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ওপর ‘নির্যাতন হচ্ছে’ বলে অভিযোগ করতে থাকেন। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে ফলাহারিয়ার পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

স্থানীয় বাসিন্দা হাকিম উদ্দিন অভিযোগ করেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ মিলেমিশে থাকলেও শরণংকর থেরোর কারণে তা ‘নষ্ট হচ্ছে’।

“নামাজের সময় হলেই বিহার থেকে মাইক বাজানো হয়। মুসলিমদের কটূক্তি করে ফেইসবুকে ভিডিও প্রকাশ করে তারা। এসব নিয়ে অশান্তি হয়।”

জুলাই মাসের শুরুতে শরণংকরের দুই অনুসারীর (শ্রমণ) নামে খোলা ফেইসবুক আইডি থেকে ইসলাম ও মুসলিমদের নিয়ে ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ পোস্ট দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় কয়েকজন।

এরপর পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয়। প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের চেষ্টায় বড় ধরনের সহিংসতা এড়ানো গেলেও শরণংকর থেরো ও তার অসুনারীদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, বিক্ষোভ চলতে থাকে। মামলাও হয়।

এর পাল্টায় শরণংকরও ফেইসুক লাইভে এসে বিভিন্ন বক্তব্য দিতে থাকেন। সেখানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ওপর ‘অত্যাচার হচ্ছে’ বলে তিনি অভিযোগ করেন। তাতে উত্তাপ আরও বাড়ে।

এই পরিস্থিতির মধ্যে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে শরণংকর থেরো জ্ঞানশরণ মহারণ্য ছেড়ে প্রথমে রাউজান এবং পরে অগাস্টে ঢাকায় চলে আসেন।

স্থানীয় মুসলমানদের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে শরণংকর থেরো বলেন, “আমাদের বিহারের মাইক থেকে মসজিদের অবস্থান দূরে। অত দূরে শব্দ যাওয়ার কথা না। তাছাড়া আমরা বিহারের বাইরে মাইক বসাইনি।”

আর ফেইসবুকে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, তার ভক্তদের নামে ‘ভুয়া আইডি খুলে’ সেগুলো করা হয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বলেন, “উনি তো এখন এলাকায় নেই। শুনেছি উনি ঢাকায় আছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত করছি আমরা। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। রাঙ্গুনিয়ায় প্রতি সপ্তাহে বিক্ষোভ হচ্ছে, তবে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে।”

অভিযোগ করছেন বৌদ্ধ ধর্মগুরুরাও

রাঙ্গুনিয়ায় শরণংকর থেরোর কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শীর্ষ সংগঠনগুলোর নেতারা গত ১৮ অক্টোবর একটি বিবৃতি দেন।

বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস-চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষণ বড়ুয়া, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি-কমলাপুর বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ বুদ্ধপ্রিয় মহাথেরো, বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সভাপতি দিব্যেন্দু বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় এবং বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের মহাসচিব সাবেক ডিআইজি অমর বড়ুয়া তিন পৃষ্ঠার ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন।

সেখানে বলা হয়, “মহামতি গৌতম বুদ্ধের আদর্শ ও বৌদ্ধ ধর্মের মর্মবাণী ‘অহিংসা পরম ধর্ম’। এ কারণে অবৈধভাবে বন ও অন্য ধর্মের উপাসনালয়, শ্মশান দখল ও কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা বৃহত্তর বৌদ্ধ সমাজ কখনও সমর্থন করে না। এমন কাজ মহামতি বুদ্ধের অহিংসা, করুণা ও মৈত্রীর বাণীকে খর্বকারী।”

বিবৃতিতে বলা হয়, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই ২০১২ সালে জ্ঞানশরণ মহারণ্য বৌদ্ধ বিহার স্থাপন করেন ভিক্ষু শরণংকর থেরো। বন বিভাগের নিষেধের পরও তিনি পাহাড় ও গাছপালা কেটে বিহার সম্প্রসারণ করেন।

মামলা করেও কাজ না হওয়ায় গত ৯ জুলাই বন বিভাগ ও পুলিশের যৌথ অভিযানে সেখানে সব ‘অবৈধ স্থাপনার কাজ’ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

“এ ঘটনার পরপরই কেউ কেউ বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য একে রাজনৈতিক রূপ দানের অপচেষ্টা করে। এ অবস্থায় দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতারা এলাকা পরিদর্শন করেন ও মৈত্রীপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখার আহ্বান জানান।”

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস-চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষণ বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্যের জমি দখল করতে হবে এমন শিক্ষা তো বৌদ্ধ ধর্ম দেয় না।”

আর ঢাকার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনি তো ধ্যানের জন্য ফলাহারিয়াতে গিয়েছিলেন। অথচ সরকারি জায়গায় বেশ কিছু স্থাপনা তৈরি করেছেন।”

কে এই শরণংকর থেরো

জ্ঞানশরণ মহারণ্য বিহারের প্রতিষ্ঠাতা শরণংকর থেরো বলেছেন, তার জন্ম চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে হলেও বেড়ে উঠেছেন রাঙ্গুনিয়ায়।

২০০৪ সালে যখন ভিক্ষু হন, তখন বয়স ২০ বছর ছিল বলে শরণংকরের ভাষ্য। সেই হিসেবে এখন তার বয়স হয় ৩৬ বছর।

তবে ভিক্ষু হওয়ার আগের জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে চাননি তিনি। সংক্ষিপ্ত উত্তরে শুধু বলেছেন, “আমি রাজনীতিও করেছি, মিছিলে স্লোগানও দিয়েছি।”

স্থানীয় সংবাদপত্রের খবরে তার সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জানা যায়। তাতে বলা হচ্ছে, ভিক্ষু হওয়ার আগে শরণংকর (তখন নাম ছিল রনি বড়ুয়া) গাড়ি চালকের চাকরি করতেন। তার শৈশব কেটেছে অনেকটা দারিদ্র্যের মধ্যে।

শরণংকর থেরোর দাবি, ভিক্ষু হওয়ার পর ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি ৭৫০০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটেছেন। কক্সবাজারের মিয়ানমার সীমান্ত থেকে হেঁটে ঢাকা, বেনাপোল হয়ে ভারতের বিহারে বুদ্ধ গয়াতেও গেছেন। ১৮টি শ্মশান ও কবরস্থানে ধ্যান করেছেন।

ফলাহারিয়ার অনেকে অবশ্য বলেছেন, তারা শরণংকর থেরোকে দামি গাড়িতে চড়েও ঘুরতে দেখেছেন।

এ বিষয়ে শরণংকরের বক্তব্য, তিনি চড়েছেন ‘ভক্তদের দেওয়া’ গাড়িতে। যানবাহনে চড়া তো ‘অনৈতিক’ নয়।

যুদ্ধাপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির জন্য ‘দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির’ চেষ্টার অভিযোগে গত মে মাসে চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার রকি বড়ুয়ার কাছ থেকে শরণংকর থেরোর ক্রেস্ট নেওয়ার একটি ছবি ছাপা হয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায়।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে শরণংকর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে রকি বড়ুয়ার সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। তার বাইরে আর কোনো সম্পর্ক তার সঙ্গে ‘নেই’।

শরণংকর থেরো বিহার বানানোর টাকা কোথায় পেলেন, সে প্রশ্ন অনেকের মধ্যেই রয়েছে।

বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষণ বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, দেশে তাদের নিবন্ধিত বিহারের সংখ্যা ২ হাজার ৫৮৫টি। এর বাইরে আরও হাজারখানেক অনিবন্ধিত বিহার আছে।

“জ্ঞানশরণ মাহারণ্য বিহার আমাদের এখানে নিবন্ধিত নয় এবং তারা কখনো অর্থ অনুদান চেয়ে আবেদন করেনি।”

তাহলে সেখানে এত স্থাপনা কীভাবে গড়ে তোলা হল?

এ প্রশ্নের উত্তরে শরণংকর থেরো বলেন, “দেশে-বিদেশে আমাদের অনেক ভক্ত আছেন। তার অনুদান পাঠান। এছাড়া বৌদ্ধ প্রধান রাষ্ট্র থেকেও আমরা অনুদান পাই।”

তার ভাষ্য, অনুদান নেওয়ার জন্য তাদের একাধিক ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এর বাইরে নগদ অনুদানও তারা নেন।

মামলায় যত অভিযোগ

শরণংকর থেরোর অবৈধ দখলে থাকা জমি থেকে স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য চলতি বছর জুলাই মাসে চট্টগ্রামের ডিসির কাছে আবেদন করে বন বিভাগ।

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক শাহ চৌধুরীর ওই চিঠিতে বলা হয়, বন বিভাগের নামে রেকর্ডভুক্ত সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ফলাহারিয়া মৌজায় ৫০ একর জমি দখল করে ঘরবাড়ি, মূর্তি, তোরণসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছের শরণংকর থেরো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের ডিসি মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলা চলছে। মামলার রায় পেলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেব।”

শরণংকর থেরো এবং তার সহযোগী দীপংকর ভিক্ষুসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বন আদালতেও মামলা হয়েছে। পাহাড়ের মাটি সরানোর পাশাপাশি ৫০ হাজার বর্গফুট এলাকার বন উজাড় করে সমতলে পরিণত করার অভিযোগ আনা হয়েছে সেখানে।

২০১৯ সালের অক্টোবরে সুখবিলাস বিটের তৎকালীন কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলামও বন আদালতে একটি মামলা করেছিলেন।

সেখানে বলা হয়, আসামিরা ফলাহারিয়া মৌজায় বন বিভাগের পরিকল্পিত বাগানের ৯০ হাজার চারার মধ্যে থেকে তিন হাজার চারা উপড়ে ফেলে এবং বাগানের সাইনবোর্ড ধ্বংস করে। এছাড়া পাহাড় সমতল করে সেখানে কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণ করে তারা। তাদের বাধা দেওয়ায় বন বিভাগের কর্মীদের ওপর হামলাও হয়।

গত ২১ অক্টোবর বন আদালতে করা আরেকটি মামলায় অভিযোগ করা হয়, বলরাম বড়ুয়া, রাহুল অংকুর বড়ুয়াসহ জ্ঞানশরণ মহারণ্য বিহারের আরও কিছু লোক গত ১৮ সেপ্টেম্বর নতুন করে বন উজাড় শুরু করে।

চলতি বছরের জুন মাসে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় বন বিভাগের করা এক মামলায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রবেশ, পাহাড়ের মাটি কেটে সমতল করা এবং সেখানে ভারী যানবাহানে করে ইট পরিবহন ও স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ আনা হয়। আসামিরা বাগানের ৭৫ হাজার চারা গাছ ধ্বংস করে ১০ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

গত ৪ জুলাই বনে আগুন দেওয়া এবং বৃক্ষ নিধনের অভিযোগে শরণংকর থেরো, দীপংকর ভিক্ষু, কনক বড়ুয়াসহ ৯/১০ জনকে আসমি করে বন আদালতে মামলা করেন বিট কর্মকর্তা শাহ আলম হাওলাদার।

হিন্দুদের শ্মশান দখল এবং স্থানীয় হিন্দু, মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাঙ্গুনিয়া থানায় শরণংকর থেরোর বিরুদ্ধে মামলা করেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অনুসারী টিটু কুমার বড়ুয়া।

২০০০ সালে তৈরি একটি শ্মশান দখল ও উচ্ছেদের অভিযোগে শরণংকর থেরোর অনুসারীদের বিরুদ্ধে রাঙ্গুনিয়া থানায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে মামলা করেন প্রিয়তোষ কান্তি দে।

হাজেরা বেগম নামের এক নারী গত ২৯ সেপ্টেম্বর সহকারী কমিশনারের (ভূমি) বরাবরে এবং থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। সেখানে বলা হয়, তার পৌত্রিক সম্পত্তি দখল করে বিহারের তোরণ নির্মাণ করেছেন শরণংকর থেরো।

তার বিরুদ্ধে ৮০ শতাংশ জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগে ২০১৮ সালে আরেকটি মামলা করেছিলেন জাইতুন নুর বেগম নামের এক নারী।

এছাড়া শিমুল গুপ্ত নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এবং রাসেল রাসু ও হাকিম উদ্দিন নামে দুজন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে মামলা করেছেন ওই বৌদ্ধ ভিক্ষুর বিরুদ্ধে।

 

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন