পাহাড়ের জাম্বুরায় মিলবে আর্থিক স্বচ্ছলতা
চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় জাম্বুরার বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে কৃষকের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি। পাহাড়ে উৎপাদিত জাম্বুরা মানসম্মত ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ছে পাহাড়ের জাম্বুরার কদর। সবমিলিয়ে জাম্বুরায় আর্থিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন বুনছে স্থানীয় বাগানীরা।
ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন পাহাড়ি পল্লীসহ স্থানীয় বাজার থেকে জাম্বুরা সংগ্রহ করছেন। আগে যেখানে স্থানীয় বাজারে একটি জাম্বুরা ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হতো সেখানে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮-১০ টাকায়। তবে বড় সাইজের জাম্বুরা ১০-১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাটিরাঙ্গা বাজারের স্থানীয় একাধিক পাইকারী জাম্বুরা ব্যাবসায়ী জানান এ বাজার থেকে প্রতি সপ্তাহে ৫/৭ ট্রাক জাম্বুরা সমতলের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।
জাম্বুরা বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর ফলের উৎপাদন কম হলেও দামটা ভালো ছিল। গত বছর প্রতিটি জাম্বুরা আকারভেদে ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হলেও চলতি বছর জাম্বুরার উৎপাদন বেশি দাম অনেকটা কম।
জাম্বুরার স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ী কান্তি বিকাশ ত্রিপুরা ও মো. নুরুল আলম জানান, তাঁরা বিভিন্ন গ্রামে গিয়েও গাছ থেকে জাম্বুরা সংগ্রহ করেন। গত বছর গ্রাম থেকে যে জাম্বুরা ১০-১২ টাকায় সংগ্রহ করেছেন, এ বছর একই আকারের জাম্বুরা বাজারে ৭-৮ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
নোয়াখালী থেকে আসা জাম্বুরার পাইকারি ব্যবসায়ী আলী আহাম্মদ বলেন, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের জাম্বুরার কদর বেশি। স্থানীয় বাজারে জাম্বুরার দাম কম হলেও পরিবহন খরচ অনেক বেশি বলে দাবি এ ব্যাবসায়ীর।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চারা রোপণের পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে জাম্বুরার ফলন পাওয়া সম্ভব। প্রতিটি গাছের গড় আয়ু ৩০-৫০ বছর, ফলনও পাওয়া যায় দীর্ঘ দিন ধরে। জাম্বুরা ‘ভিটামিন সি’ সমৃদ্ধ একটি সুপরিচিত লেবু গোত্রের ফল। পাহাড়ি অঞ্চলের টিলাগুলোতে এর ফলন ভালো হয়।
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বানিজ্যিকভাবে জাম্বুরার চাষাবাদ না থাকলেও বসতবাড়ি, স্কুল-কলেজের আশপাশে ও পতিত জায়গায় জাম্বুরার চাষ হয়ে থাকে। কোনো কোনো অঞ্চলে এটি বাতাবি লেবু নামেও পরিচিত। অন্যান্য ফলের তুলনায় যেমন দামে সস্তা, তেমন পুষ্টিতেও ভরপুর।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা রমনী ত্রিপুরা বলেন, জাম্বুরা গাছ রোগাক্রান্ত হয় না বললেই চলে। একেকটি জাম্বুরা গাছে ফলন ভালো হলে ৪০০ থেকে ৫০০টি পর্যন্ত ফলন হয়। ফাল্গুন মাসে জাম্বুরা গাছে ফলের মুকুল আসে। ভাদ্র থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত জাম্বুরার ফলন উত্তোলন করা হয়।
ডা. পরাগ দে বলেন, জাম্বুরার (বাতাবি লেবু) মধ্যে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। এ ফল ঠান্ডা, সর্দি-জ্বর, ডায়াবেটিস, মুখের ঘা, পাকস্থলীসহ শরীরের বিভিন্ন রোগের জন্য উপকারী। এ ফল শরীরের শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর এবং পেটের নানা রকম হজমজনিত সমস্যার জন্যও উপকারী।