পুরুষ ফাঁসানো এক সুন্দরী শিক্ষিকার দিনকাল
নিউজ ডেস্ক পুরুষ ফাঁসানোর এক সুন্দরীর নজীরবিহীন অসুন্দরের নানান কাহিনী সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। এই সুন্দরী একজন স্কুল শিক্ষিকা। ফাঁসানোর তালিকায়ও রাখেন উচ্চ শিক্ষিত কলেজ ও ভার্সিটির শিক্ষক, ধনাঢ্য ব্যবসায়ি কিংবা বিদেশ ফেরত।
এই সুন্দরী নিজেকে ক্যাডার অফিসার, কখনও কলেজের শিক্ষিকা পরিচয় দিয়ে নিরীহ মানুষকে ফাঁদে ফেলেন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। অনর্গল বাংলা-ইংরেজী বলতে পারা পটু এই প্রাথমিক স্কুলশিক্ষিকার নাম শাহনাজ পারভীন। ইতিমধ্যে তিনি অনেককে ফাঁদে ফেললেও তিনজনের হেস্তনেস্ত হওয়ার কাহিনী জানা গেছে। এরমধ্যে সৌদি প্রবাসী এক ব্যক্তি এবং বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজের এক সহকারী অধ্যাপক কোনভাবে রক্ষা পেলেও কলেজ শিক্ষক ড. রফিকুল ইসলাম ওই সুন্দরীর ফাঁদে পড়ে এখন অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন।
সুন্দরী শাহনাজ এক সময় ছিলেন বগুড়ার একটি এনজিওর মাঠকর্মী ছিলেন। সেখানে নানান কেলেংকারির পর চাকরিচ্যুত। এরপরে বেসরকারি এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরি মিলে। পরে বিদ্যালয়টি সরকারি হয়। পিতা ছিলেন একজন পুলিশ কনস্টেবল। পৈতৃক নিবাস বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার আচুয়ার পাড়ার গ্রামে। এখন তিনি পুরান বগুড়ার বিদ্যুৎ নগরে থেকে নন্দীগ্রামের বুরুইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরি করছেন।
এলাকাবাসী জানান, শাহনাজের প্রথম বিয়ে হয়, নন্দীগ্রামের থালতামাছ ইউনিয়নের পারসন গ্রামের খলিলুর রহমানের সঙ্গে। ওই বিয়েটাও ছিল ফোনে ফাঁদ পাতার। খলিল সৌদি আরব থেকে এসে শাহনাজের প্রতারণা বুঝতে পারে। তারপর ডিভোর্স করে।
মোবাইল ফোনে দ্বিতীয় টার্গেট বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজের ইসলামের ইতিহাসের এক সহকারী অধ্যাপক। কিছুদিন ফোনে কথাও হয় তার সঙ্গে।এক পর্যায়ে আমিনুল ইসলাম নামের ওই শিক্ষকের বাসায় পৌছে যান শাহনাজ। নিজেকে পরিচয় দেন আমিনুল ইসলামের স্ত্রী হিসাবে। পরে বৈধ কোন কাগজপত্র দেখাতে না পারায় এলাকাবাসী তাকে বাসা থেকে বের করে দেয়।
এরপর তৃতীয় শিকার সান্তাহার সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তার সঙ্গে ব্যক্তিগত কাজে দেখা করবেন বলে জানান। এরপর মাঝে মাঝেই কথা বলতেন। এরপর বলতে শুরু করেন, আপনাকে না দেখলে আমার খুব ভাল লাগে না। দেখা হোক না হোক অন্তত কথা বলার সুযোগটা দিন। ড. রফিকুল ইসলামও আপত্তি করেননি।
২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর, রাত ৮টা। ড. রফিকুল ইসলাম কলেজ থেকে ট্রেনযোগে বগুড়া রেল স্টেশনে নামেন। হঠাৎ ফোন আসে শাহনাজ পারভীনের। ওপ্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘আপনি এখন কোথায়’ উত্তরে রফিকুল ইসলাম জানান, এই মাত্র বগুড়া স্টেশনে নামলাম।
রেল স্টেশন থেকে রিকশাযোগে বাদুরতলা এলাকায় যাওয়ার সময় হঠাৎ করে পাঁচটি মোটরসাইকেল যোগে হাদি নামের একজনের নেতৃত্বে এক দল সন্ত্রাসী তাকে ঘিরে ফেলে। অস্ত্র উঁচিয়ে ড. রফিকুলকে নিয়ে যাওয়া হয় পুরান বগুড়া মিশুক ছাত্রাবাসে। সেখানে নিয়ে তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে বেধড়ক মারপিট করা হয়।
ওই সময় হঠাৎ আগমন ঘটে শাহনাজ পারভীন ও তার পরিবারের সদস্যদের। শাহনাজ কান্নার ভঙ্গিতে বলেন, আমার স্বামীকে আপনারা মারবেন না। তখনই থেমে যায় মারপিট। এ সময় সন্ত্রাসীরা তিনটি স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক ড. রফিকুল ইসলামের স্বাক্ষর নেয়। এরপর রাত ১২টায় ছেড়ে দেয়া হয় তাকে। পরদিন তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাকের কাছে বিষয়টি খুলে বলেন। এরপর দু’টি স্ট্যাম্প ফেরত পেলেও আরেকটি স্ট্যাম্প দিয়ে ছবি দিয়ে শাহনাজ পারভীন ও তার সহযোগীদের মাধ্যমে বিয়ের এফিডেভিট করেন।
এসব ঘটনা আর নানান নাটকীয়তার পর ডিভোর্স। এরপরই ড. রফিক গত বছর ২৫শে অক্টোবর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শাহনাজ পারভীনসহ তার পরিবারের ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত ঘটনাটি তদন্তের জন্য একজন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেন।
তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কাবিনে সাক্ষী, ছাত্রাবাসের ছাত্রদের জবানবন্দি রেকর্ড করে গত ১৫ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন। প্রতিবেদনে ড. রফিকুলের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়। এদিকে, শাহনাজের ভাই সামিউল ইসলাম বাদী হয়ে গত বছর ১৮ই অক্টোবর ড. রফিকুল ইসলামসহ তার পরিবারের ৬ জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু আদালতে মামলা দায়ের করে। মামলাটি পুলিশি তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
শাহনাজ পারভীনের মামলার সাক্ষী না হলেও পরবর্তী সময়ে তিন ব্যক্তি হাসিবুর রহমান বিলু, শাজাহান আলী বাবু, মনিরুল ইসলাম মারুফ আদালতে নারাজি আবেদন করেন। ওই আবেদনের শুনানি এখনও হয়নি।
অন্যদিকে, সান্তাহার সরকারি কলেজের কর্মরত থাকাকালে নন্দীগ্রাম থানায় শাহনাজ পারভীন তাকে স্কুল থেকে অপহরণ করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে ড. রফিকের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছেন।
সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ি শাহনাজ পারভীনের এতোসব ঘটনা জানার পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ড. আফছারুল আমীন তদন্তের জন্য নির্দেশ দিলেও নন্দীগ্রাম প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এখনও তদন্ত শুরু করেননি।
HAYRA TATUL KI NA PARO TOMRA