আপডেট

পেকুয়ায় মিনি ট্রাক ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষ : নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪, আহত ২

fec-image

কক্সবাজারের পেকুয়ায় মিনি ট্রাক ও সিএনজি’র মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িছে চার। এদের মধ্যে একজন কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী। আহতদের চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সোমবার (২৬ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটায় পেকুয়া সদরের নন্দিপাড়া স্টেশনের দক্ষিণ পাশে আনোয়ারা-বাঁশখালী-কক্সবাজার (এবিসি) আঞ্চলিক মহাসড়কে এ মর্মান্তিক দূর্ঘটনা ঘটে। এসময় ঘটনাস্থলে একজন, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে দু’জন ও চমেক হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় একজনসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

নিহতরা হলেন, কুতুবদিয়া উপজেলার ধুরুং ইউনিয়নের আজিম উদ্দিন সিকদার পাড়া এলাকার মৃত গিয়াস উদ্দিনের প্রকাশ ভেন্ডার গিয়াসের ছেলে আমিনুল কবির (২৮), একই এলাকার মাষ্টার ছৈয়দ আলমের ছেলে আক্কাস উদ্দিন (৩৫) ও পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মহুরী পাড়া এলাকার মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে সিএনজি চালক আবু তালেব (৩৮) ও সর্বশেষ সোমবার দিনগত রাত আড়াইটায় চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কলেজ পুড়য়া ছাত্রী আফসানা আলম সোনিয়ার (১৭) মৃত্যু ঘটে। মর্মান্তিক এ দূর্ঘটনায় বাবা, মেয়ে ও চাচাসহ একই পরিবারে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের মাতম।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, চকরিয়া মরংঘোনা বালু মহাল থেকে বালু ভর্তি দ্রুতগামী একটি মিনি ট্রাক পেকুয়ার দিকে যাচ্ছিল। বিপরীত থেকে আসা রাকিব, সাকিব এন্ড তুষার এক্সপ্রেস নামের একটি যাত্রীবাহী সিএনজির মূখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এসময় ঘটনাস্থলে একজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সিএনজি চালকসহ পাঁচ জন গুরুতর আহত হয়। আহত পাঁচজনকে উদ্ধার করে পেকুয়া হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরা হলেন, একই এলাকার মাষ্টার ছৈয়দ আলমের ছেলে আক্কাস (৩৫) ও পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মহুরী পাড়া এলাকার মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে সিএনজি চালক আবু তালেব (৩৮), আক্কাসের মেয়ে আফসানা আলম সোনিয়া (১৭), বড়ঘোপ ইউনিয়নের গোলজার পাড়া এলাকার আব্দুল হান্নানের ছেলে দিদারুল ইসলাম (২৮), বড়ঘোপ ইউনিয়নের বাহার উল্লাহ’র ছেলে নেজাম উদ্দিন (৩০)। আহতদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় কর্মরত চিকিৎসক তাৎক্ষনিক তাঁদের চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার পথে বিকেল চারটায় বাঁশখালী উপজেলার জলদী এলাকায় আহত সিএনজি চালক আবু তালেব মারা যান। একইভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আহত আক্কাস উদ্দিন। এলাকাবাসীর ধারণা ঘাতক মিনি ট্রাক চালক মাদকাসক্ত ছিল। ঘটনার পর থেকে চালক পালাতক রয়েছে।

নিহতের পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, নিহত আমিনুল চট্টগ্রাম কাস্টম অফিসের কর্মকর্তা। গত ৩৪ দিন পূর্বে মারা যায় আমিনুলের বাবা গিয়াস উদ্দিন প্রকাশ ভেন্ডার গিয়াস । প্রয়াত পিতার কুলখানি শেষে নিজ কর্মস্থলে ফিরছিলেন আমিনুল। একই গাড়িতে আমিনুলের চাচাতো ভাই (বোনের জামাই) মোঃ আক্কাস উদ্দিন ও তাঁর মেয়ে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী আফসানা আলম সোনিয়াও ছিল। সোনিয়া চট্টগ্রামের ওমরগণি এম.ই.এস কলেজের এইচ এস সি’র প্রথম বর্ষের ছাত্রী। সে পিতার সাথে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন। অপর আহত দিদার ও নেজাম কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ এবং ধুরুং ইউনিয়নের।

মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) বেলা ১১টায় নিহতদের জানাজার নামাজ শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

স্থানীয় রোবেল, আবু ছালেক ও পথচারী নিলুফা ইয়াসমিন নামের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বালু ভর্তি একটি মিনি ট্রাক যাত্রীবাহি সিএনজিকে ধাক্কা দেয়। এতে বিকট শব্দ হয়। এতে যাত্রীবাহি সিএজিটি ধুমড়ে মুচড়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মিনি ট্রাকটি রাস্তার পাশে একটি গোয়াল ঘরে ভিতরে ঢুকে পড়ে। স্থানীয়রা ছুটে এসে সিএনজিতে থাকা যাত্রীদের উদ্ধার করে পেকুয়া হাসপাতালে পাঠায়।

এদিকে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোতোছেম বিল্যাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে আহতদের খোঁজ খবর নেয়।

খবর পেয়ে পেকুয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পুলিশ জানায়, স্থানীয়দের সহযোগীতায় আহতদের উদ্ধার করে পেকুয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। কতর্ব্যরত চিকিৎসক মনিরুল কবিরকে (৩৮) মৃত ঘোষণা করেন। এরপর মনিরুল কবিরসহ আরও দুই জনের লাশ থানায় নিয়ে আসে। ওই দিন রাত ১০টার দিকে তিনজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পেকুয়া থানা অফিসার ইনচার্জ সাইফুর রহমান মজুদার বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। এঘটনায় চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দূর্ঘটনা কবলিত মিনি ট্রাক (ডাম্পার) ও সিএসজি জব্দ করা হয়েছে। নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আহত, নিহত, সংঘর্ষ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন