প্রদীপসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে সাংবাদিক ফরিদের মামলা

fec-image

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় বরখাস্ত হওয়া টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন কারামুক্ত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান। সেখানে স্থানীয় ৪ ব্যক্তিকে ‘পুলিশের দালাল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজারের সিনিয়র জুুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এ দায়েরকৃত মামলাটি আমলে নিয়ে পরবর্তী ধার্য তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে নির্দেশ দেন বিচারক তামান্না ফারাহ।

মামলার আসামীরা হলেন, টেকনাফ থানার এসআই মো. কামরুজ্জামান, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) এবিএমএস দোহা, ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম খান, কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই প্রদীপ, এসআই মো. সাইফুল করিম, টেকনাফ থানার এসআই মশিউর রহমান, এসআই মনসুর মিয়া, এসআই ছাব্বির আহমেদ, এসআই সুুজিত চন্দ্র দে, এসআই বাবুল, এসআই মো. জামাল উল্লাহ, এসআই মো. নাজির উদ্দিন, এসআই আমির হোসেন, এসআই মিসকাত উদ্দিন, এসআই সনজিত দত্ত, কনস্টেবল নাজমুল হাসান, সাগর দেব, আবদুল্লাহ আল মামুন, রাশেদুল ইসলাম, হেলাল উদ্দিন, মংচিংপ্র চাকমা, আবদুল শুক্কুর, মো. মহিউদ্দিন, সেকান্দর, টেকনাফের দক্ষিণ হ্নীলা ফুলেরডেইল এলাকার মৃত আবুল খায়েরের ছেলে মো. জহিরুল ইসলাম, হোয়াইক্যং পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়ার হাজি আবুল কাশেমের ছেলে মফিজ আহমদ, হ্নীলা দরগাহ পাড়ার মৃত তাজর মুল্লুকের ছেলে আবুল কালাম প্রকাশ আলম এবং হোয়াইক্যং দক্ষিণ কাঞ্জরপাড়ার মাওলানা সিরাজুল হকের ছেলে নুরুল আমিন।

সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের দায়েরকৃত মামলায় টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ পুলিশ সদস্য ও তাদের দালালদের মাধ্যমে পৃথক চার দফা ঘটনায় নানাভাবে শারীরিক নির্যাতন, হত্যাচেষ্টা, মিথ্যা মামলা দায়েরসহ নানা অভিযোগে আনা হয়েছে।

আদালতে মামলা দায়েরকালে বাদির পক্ষে ছিলেন, কক্সবাজার জেলা বারের সাবেক সভাপতি এডভোকেট আবুল কালাম সিদ্দিকী, সিনিয়র আইনজীবী মো. মোস্তফা, মো. আবদুল মন্নান, ফখরুল ইসলাম গুন্দু, রেজাউল করিম রেজা, এম.এম ইমরুল শরীফসহ অসংখ্য আইনজীবী।

চাঁদাবাজি, অস্ত্র, মাদকসহ নানা অভিযোগে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার বিরুদ্ধে একেএকে ৬টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় দীর্ঘ ১১ মাস ৫ দিন পর গত ২৭ আগস্ট কারামুক্ত হন। তখন থেকে তিনি কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ফরিদুল মোস্তফা খান জনতার বাণী বিডি ডটকম এবং দৈনিক কক্সবাজার বাণী পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি টেকনাফ হোয়াইক্যং সাতঘরিয়া পাড়ার বাসিন্দা মরহুম ডাঃ মো. ইছহাক খানের ছেলে। বর্তমানে শহরের ১নং ওয়ার্ডের মধ্যম কুতুবদিয়া পাড়ার বাসিন্দা।

মামলার বাদি ফরিদুল মোস্তফা খান জানান, গত ২০১৯ সালের ২৪ জুন ‘টেকনাফে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ও টাকা না দিলে ক্রস ফায়ার দেন ওসি প্রদীপ’ শিরোনামে তিনি বস্তুনিষ্ট সংবাদ করেন। এছাড়াও মাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সংবাদ, ক্রস ফায়ারের নামে বিচার বহির্ভুতভাবে মানুষ হত্যার বিষয়ে লিখেন সাংবাদিক ফরিদ। এতে ক্ষিপ্ত হন প্রদীপ কুমার দাশসহ কিছু পুলিশ সদস্য। পরে জিআর-৫৬২/২০১৯, জিআর-৫৭৭/২০১৯ ও জিআর-৭৯৮/২০১৯ মামলা করান ওসি। এই তিন মামলার বাদিই মাদক কারবারী ও দেশদ্রোহী বলে ফরিদুল মোস্তফা তার মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন।

এসব মামলার কারণে ভয়ে ভিটেমাটি বিক্রি করে ঢাকায় আত্মগোপনে গিয়েও রেহাই পান নি ফরিদুল মোস্তফা। সেখানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপির কাছে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেন। পরে ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা মীরপুরের বাসা থেকে বিনা পরোয়ানায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেখান থেকে কক্সবাজার আনার পথে কয়েক দফায় চোখ-হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, ক্রস ফায়ারের চেষ্টা চালানো হয় বলে জানান ফরিদ। এরপর টেকনাফ থানায় নিয়ে গিয়ে চালানো হয় দফায় দফা নির্যাতন। মরিচের গুঁড়া দিয়ে চোখ নষ্ট করতে চেষ্টা, থানা হাজতে পিপাসার্থ অবস্থায় পানি চাইলে তাকে দেয়া হয় প্রশ্রাব। চরম ক্ষুধার্থ অবস্থায় খেতে চাইলে মুখে ঢেলে দেয় পায়খানা। ভেঙে দেয়া হয় দুই হাত ও এক পা। এভাবে অমানুষিক নির্যাতনের পর তাকে পরের দিন ২২ সেপ্টেম্বর রাতে সমিতি পাড়ার বাসায় নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে ৪০০০ ইয়াবা, দুইটি এলজি, ১২টি বিদেশী মদের বোতল ও ৫ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধারসহ গ্রেফতার দেখায়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামীরা মাদক নির্মূলের নামে মাদক ব্যবসা করেছে। প্রতিপক্ষকে খুন করে ক্রস ফায়ার নাটক সাজানো হয়। এতে এলাকার দুয়েকজন ছোটখাটো অপরাধীকে আসামি করার পাশাপাশি যাদের সামান্য টাকা আছে তাদেরকে হত্যা, মাদক, অস্ত্র মামলার আসামি বানিয়ে চাঁদা আদায় করে। যা অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসবে।

সাজানো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন ফরিদুল মোস্তফার আইনজীবী মো. আবদুল মন্নান।

তিনি জানান, এক বছর আগে ফরিদুল মোস্তফা যা লিখেছেন তা আজ সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। তখন প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে এতগুলো নিরীহ মানুষ ‘ক্রসফায়ার’ এর নামে প্রদীপের হাতে খুন হতো না। মেজর সিনহার মতো দেশের একজন সম্পদও হয়তো বেঁচে যেত। বিচার বিভাগীয় তদন্তপূর্বক ফরিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন এডভোকেট মো. আবদুল মন্নান।

এদিকে, বাদি ফরিদুল মোস্তফা খান তার দায়েরকৃত মামলাটি পুলিশ ছাড়া অন্য কোন বিভাগকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান। না হলে তিনি ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন