রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

প্রধান শিক্ষকসহ ৫ বিষয়ে কোন শিক্ষকই নেই , ২৭টি পদে আছেন মাত্র ৯ জন

fec-image

খাগড়াছড়ির ঐতিহ্যবাহি রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক শূণ্যতায় পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক, সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ গণিত, জীব বিজ্ঞান, কৃষি, ভূগোল ও চারুকলা বিষয়ে কোন শিক্ষক নেই।

২৭ জন শিক্ষকের স্থলে শারীরিক শিক্ষার অতিরিক্ত একজনসহ এখন কর্মরত আছেন মাত্র ৯ জন শিক্ষক। চলিত মাসের প্রথম সপ্তাহে পাবলিক সার্ভিস কমিশন(পিএসসি) সারা দেশে ৩১৭টি সরকারি স্কুলে দুই হাজার ৬৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দিলেও রামগড়ে একজনও পোস্টিং দেয়া হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানরাখা পার্বত্যাঞ্চলের প্রাচীন এ স্কুলের প্রতি এটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা বলে মনে করছেন অভিবাবক ও শিক্ষানুরাগীমহল।

১৯৫২ সালে রামগড় মহকুমা আমলে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি ১৯৬৮তে সরকারিকরণ করা হয়। উপজেলার একমাত্র এ সরকারি স্কুলটি বরাবরই শিক্ষক সংকটে ভুগছে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ ২৭টি শিক্ষক পদ রয়েছে। বর্তমানে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ ১৯ জন শিক্ষকের পদই শূণ্য। তন্মধ্যে গণিত, জীব বিজ্ঞান , কৃষি, ভূগোল ও চারুকলার কোন শিক্ষকই নেই।

স্কুল সূত্রে জানাযায়, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধান শিক্ষক সুধীর চন্দ্র সরকার অন্যত্র বদলীর পর অদ্যবদি শূণ্য পদে নতুন প্রধান শিক্ষক পোস্টিং দেয়া হয়নি। সহকারি প্রধান শিক্ষকের পদও শূণ্য দীর্ঘদিন ধরে । গণিত বিষয়ের ৩টি পদের মধ্যে ২ জন পোস্টিং ছিল। ২০২১ সালে দুজনকেই অন্যত্র বদলী করা হয়। ফলে এখন গণিতের কোন শিক্ষকই নেই। এছাড়া, বিষয় ভিত্তিক সহকারি শিক্ষকের মধ্যে বাংলার ৪টি পদের মধ্যে ৩টি, ইংরেজির ৪টির মধ্যে ৩টি, সামাজিক বিজ্ঞানের ২টির মধ্যে ১টি, ভেত বিজ্ঞানে ২টির মধ্যে ১টি, ব্যবসায় শিক্ষায় ২টির মধ্যে ১টি, জীব বিজ্ঞানের ২টির মধ্যে ২টি, ভূগোল, কৃষি শিক্ষা ও চারুকলার একমাত্র পদগুলো শূণ্য পড়ে আছে দীর্ঘদিন যাবৎ।

অন্যদিকে, শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষকের একটি পদে দুজন পোস্টিং রয়েছে। শিক্ষক সংকটের কারণে শ্রেণীর পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেকটা জোরাতালি শ্রেণি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এতে লেখাপড়ার মান এবং জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ক্রমশ: খারাপের দিকে যাচ্ছে। স্কুলের এ নাজুক অবস্থায় সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থীর অভিভাবক চরম উদ্বিগ্ন।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল কাদের বলেন, ‘ ৬ষ্ঠ হতে দশম শ্রেণীর একাধিক শাখার শ্রেণীর পাঠদান করতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকরা। শূণ্যপদে বদলী ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের জন্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মিত চিঠি পাঠানো হচ্ছে।’ রামগড় উপজেলা নির্বাহি অফিসার খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরাাফাত স্কুলের নাজুক অবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘শিক্ষক সংকট দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

এদিকে, গত মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মারাত্মক শিক্ষক সংকটগ্রস্ত স্কুলটি পরিদর্শন করেছেন খাগড়াছড়ির অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) গোলাম মো. বাতেন। এসময় স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাঁর কাছে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় শিক্ষকের আবেদন জানান। অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) গোলাম মো. বাতেন বলেন, ‘ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এ বিদ্যালয়ের শিক্ষকের অভাব দূর করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন