ফিলিস্তিনে চলমান সংঘাতে রোববার ছিল ‘মৃত্যুময়’


ইসরায়েলের সাথে চলমান সংঘাত শুরুর পর থেকে গতকাল রোববার সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এদিন মারা গেছেন ৪২ জন ফিলিস্তিনি। গাজার কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর বিবিসির।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, গত এক সপ্তাহে ফিলিস্তিনি জঙ্গিরা ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তিন হাজারের বেশি রকেট ছুড়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আরো বেশি সংঘাত হলে ওই এলাকায় ‘নিয়ন্ত্রণহীন সংকট’ তৈরি হবে।
তিনি এমন ভয়ংকর সহিংসতা জরুরি ভিত্তিতে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার ভোরে, ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাস রকেট ছোড়ার পরপরই গাজা শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় বিমানের মাধ্যমে ৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল।
জাতিসংঘ হুঁশিয়ার করে বলেছে, গাজায় জ্বালানি সংকট হতে পারে। যার কারণে হাসপাতাল এবং অন্য প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সংকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়া বিষয়ক জাতিসংঘের সহকারী বিশেষ সমন্বয়ক লিন হ্যাস্টিং বিবিসিকে বলেন, তিনি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করেছেন যে, গাজায় জ্বালানি এবং অন্যান্য পণ্য সরবরাহ করতে যাতে জাতিসংঘকে অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু সেখানে কিছু নিরাপদ নয় বলেও তাদের বলা হয়েছে।
গাজার কর্তৃপক্ষ বলছে, রোববারের ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১৬ জন নারী ও ১০ শিশুসহ অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েল বলছে, গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে দেশটিতে এখন পর্যন্ত রকেট হামলায় দুই শিশুসহ ১০ জন মারা গেছেন।
যা ঘটেছিল রোববার
রোববার মধ্যরাতের পর পরই গাজার একটি ব্যস্ত সড়কে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে অন্তত তিনটি ভবন ধসে পরে এবং অনেকে নিহত হয়।
এরপর প্রায় সারা রাত ধরে এবং বিকেলে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলকে লক্ষ্য করে রকেট ছোড়ে হামাস।
সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গে লাখ লাখ ইসরায়েলি নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। ফিলিস্তিনিরাও সতর্কতা অবলম্বন করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু জনবহুল এবং দরিদ্র গাজা উপত্যকার অনেক বাসিন্দার আসলে যাওয়ার মতো তেমন কোন নিরাপদ আশ্রয় ছিল না।
রিয়াদ এশকুনতানা নামে একজন ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, তিনি তার মেয়েদেরকে বাড়ির এমন একটি ঘরে ঘুম পাড়িয়েছিলেন যেটি বিস্ফোরণের স্থান থেকে সবচেয়ে দূরে বলে তিনি মনে করেছিলেন।
তবে ওই রাতের পর তার মেয়েদের মধ্যে শুধু একজন বেঁচেছিলেন। যার নাম সুজি। তার বয়স মাত্র ৬ বছর। তার স্ত্রী এবং আরো তিন সন্তান মারা যায়।
এশকুনতানা বলেন, ‘মেয়েরা বেঁচে আছে কিনা তা দেখতে ছুটে যাই আমি।’
তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী লাফিয়ে পড়ে মেয়েদের জড়িয়ে ধরে ঘরের বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা করছিল। আর তখনই ঘরটিতে দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হানে… ছাদ ধসে পড়ে আর আমি ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ি।’
পরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তারা ওই এলাকায় জঙ্গিদের একটি সুড়ঙ্গকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। সুড়ঙ্গটি ধসে পরার কারণে এর উপরে থাকা বাড়িঘরও ধসে পরে। যার কারণে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বেসামরিক প্রাণহানি ঘটে বলে জানায় তারা।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর দাবি তারা হামাসের নেতা এবং তাদের অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে।
তাদের দাবি, তারা হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার এবং তার ভাই মুহাম্মাদ সিনওয়ারের বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এই টার্গেটের জায়গাগুলো হামাসের রসদ এবং জনশক্তির মূল উৎস বলে দাবি করে তারা।
বার্তা সংস্থা এপির তথ্য অনুযায়ী, হামলার সময় তারা বাড়িতে অবস্থান করছিলেন না।
গাজার উদ্ধার কর্মীরা হামলার পর ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে মানুষদের উদ্ধার করতে দিনভর চেষ্টা চালিয়েছে।
ইসরায়েলে হামাসের ছোড়া রকেট মধ্য এবং দক্ষিণ ইসরায়েলের আশকেলন, আশদদ, নেটিভটসহ অন্যান্য এলাকায় আঘাত হানে। তবে হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি।