বলি খেলা, গরয়া নৃত্য ও পানি খেলার মাধ্যমে শেষ হলো পানছড়ির বৈসাবি

fec-image

স্বল্প পরিসরে হলেও দারুণ উৎসবে শেষ হয়েছে পাহাড়ের বৈসাবি। বৈসু, সাংগ্রাই আর বিঝু নিয়েই ত্রিপুরা মারমা আর চাকমাদের প্রধান সামাজিক উৎসব। এবার পানছড়িতে বাবুড়া পাড়ার বলি খেলা যুগলছড়ি, কংচাইরী পাড়ায় জল খেলি বা পানি খেলা ও মদন কার্বারী পাড়া, মরাটিলা আর পদ্মিনিী পাড়ায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের ধারক গরয়া নৃত্য জমেছিল বেশ।

প্রতিবছরই বৈসুতে পানছড়ির পাড়ায় পাড়ায় হতো গরয়া নৃত্য। গরয়া নৃত্যতে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের সুখ, আনন্দ ও সমৃুদ্ধি কাব্যই ভেসে উঠে। এটি ত্রিপুরাদের আদি ঐতিহ্য। ত্রিপুরাদের দেবতা গরিয়াকে মুগ্ধ করতেই এই নৃত্য পরিবেশন করে। গরয়া নৃত্যে অংশগ্রহণকারীদের খেরবাই নামে ডাকা হয়।নিয়ম অনুযায়ী কোন বাড়ির উঠানে প্রবেশ করার সাথে সাথে নির্দিষ্ট কিছু সংকেতিক আওয়াজের মাধ্যমে আগমনী বার্তা দিয়ে শুরু করে পরিবেশনা। আশপাশের পাড়া প্রতিবেশীরা বাড়ির উঠানের চারিপাশে দাড়িয়ে গরিয়া উপভোগ করে।

পানছড়ির প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কালো মনি ত্রিপুরা বলেন,‘ত্রিপুরা সংস্কৃতির সাথে গরয়া নৃত্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তার ক্রমাগত বিকাশ ও বহুল প্রচারের লক্ষে প্রতিবছর গরয়া নৃত্যের আয়োজন করা হয়। গরয়ার আবহে মুলত জুমভিত্তিক কৃষির কথা বলা হয়। গরয়া দেবতাকে কৃষির দেবতাও বলা হয়। ত্রিপুরাদের বিশ্বাস গরয়া দেবতাকে পুজা করলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পায়। এই চেতনা থেকে বছরের শেষান্তে বর্ষের সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদনাকে পিছনে ফেলে নতুন বছরে নতুন উদ্যমে কর্মে ঝাপিয়ে পড়ার প্রতিজ্ঞায় গরয়া নৃত্য পরিবেশন করে।

পানছড়ির উন্নয়ন কর্মী রুমেল মারমা জানান, চৈত্র সংক্রান্তির মধ্যে মারমাদের ঐতিহ্যবাহী খেলা জল খেলি। পুরাতন বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে মারমা সম্প্রদায়ের পাড়ায় পাড়ায় যুবক-যুবতীরা এই খেলার আয়োজন করে থাকে। তবে করোনা মহামারীর কারণে এবারে খুব সীমিত আকারে কংচাইরী পাড়া ও যুগলছড়িতে ছোট্ট পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পানছড়ি বৈসাবি উৎযাপন কমিটির আয়োজনে বাবুড়া পাড়া অনুপম-হিমাংশু ভ্যানুতে পুরুষ ও মহিলাদের বলি খেলার পাশাপাশি নানান খেলাধুলার আয়োজন করা হয়েছিল। জেলার নামকরা বলিরা এতে অংশ নিয়ে উৎসবমুখর করে তোলে। অবশেষে স্বল্প পরিসরে হলেও দারুণ উৎসবের আমেজে শেষ হয়েছে পাহাড়ের বৈসাবি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন