চকরিয়ায় জমি দখলে নিতে ২৬টি বসতঘরে আগুন: নিহত-১, আহত-২০

fec-image

কক্সবাজারের চকরিয়ায় একদল দখলবাজ চক্র জায়গা জবর নিতে ২৬ টি বসতঘর আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এতে মুহুর্তের মধ্যে সম্পূর্ণ বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুন লাগানোর পর কেউ যাতে আগুন নেভাতে না পারে সেই উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি গুলিও করে ওই দখলবাজ চক্ররা।

বৃহস্পতিবার (১৪ মে) ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের খিলছাদক এলাকায় সাহরী খেয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতির সময় নারকীয় এ ঘটনা ঘটে।

এসময় মনোয়ারা বেগম (৫০) নামের এক গৃহিনী আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে অন্তত ২০ জন শিশুসহ নারী পুরুষ আহত হয়।

মাতামুহুরী নদীর ভরাট হয়ে জেগে উঠা চর দখল করতে এ তাণ্ডব চালানো হয় বলে এলাবাসীর বক্তব্য দিয়ে থানার ওসি হাবিবুর রহমান নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, অন্তত একযুগ আগে থেকে নদীর ভরাটচর দখল নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। ইতোপূর্বে ৭-৮ বছর আগেও এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল। এবার সাহরীর শেষ সময়ে ২৬টি পরিবারের বসতবাড়িতে আগুন দিয়ে সবকিছু পুড়িয়ে নি:শেষ কর দেয়া হয়েছে। লুট করে নেওয়া হয়েছে নগদ টাকা, গবাদি পশু, মালামালসহ অন্তত কোটি টাকার সম্পদ।

এ সময় আগুনে পুড়ে মারা গেছে মনোয়ারা নামের গৃহবধূ। অগ্নিদগ্ধ ছাড়াও গুলিবিদ্ধ ও ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি কোপে আহত হয়েছেন নারী-পুরুষসহ অন্তত ২০ জন।

ঘটনাস্থল থেকে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কা হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামবাসীরা জানায়, প্রথমে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অন্তত অর্ধশত রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। সাথে সাথে আগুন লাগিয়ে সম্পূর্ণ বসতঘর আগুনে পুড়ে দেওয়া হয়। এতে মারা গেছেন গৃহবধূ মনোয়ারা বেগম (৫০)। তিনি ওই গ্রামের মোজাহের আহমদের স্ত্রী।

অন্যান্য আহতরা হলেন নিহতের স্বামী মোজাহের আহমদ (৬৫), ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ন আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন (২৫), মো. মুরাদ (২৩), আবু ছালেক (৪২), নবীর হোছাইন (৫০), মো. বাবলু (২২) ও মো. আলম (৪৫)। অন্যদের নাম পাওয়া যায়নি।

ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে তাদের গ্রামের বিশাল অংশ মাতামুহুরী নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। নদীতে তলিয়ে যাওয়া সেই জায়গা ১০-১২ বছর ধরে জেগে উঠতে থাকে। যাদের জায়গা জেগে উঠে তারা সেই জায়গায় বসতি গড়ে তোলেন।

কিন্তু নদীর ওপারে পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন বরইতলীর গোবিন্দপুর গ্রামের সশস্ত্র লোকজন এপারে এসে বার বার জেগে উঠা জায়গা দখলের চেষ্টা চালান।

এদিকে এই নারকীয় তাণ্ডবের খবর পেয়ে কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান, উপজেলা ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মো. সাইফুল হাছান, হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম, এসআই অপু বড়ূয়া, বরইতলীর চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার ও কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

চকরিয়া থানার (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থল থেকে ফিরে জানান, যারা এই তাণ্ডবে জড়িত তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। ঘটনার সময় এক নারী আগুনে পুড়ে মারা যাওয়াসহ অসংখ্য নারী-পুরুষ আহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ওসি বলেন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আগুনে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে এ নারকীয় ঘটনাটি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করে জমা দিতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যাতে এসব পরিবারকে সরকারিভাবে সার্বিক সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন করা যায়।

এছাড়াও প্রাথমিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তিও নিশ্চিত করা হবে।

কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ২৬ পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে এক বস্তা করে চাল, দুই বান্ডিল ঢেউটিন ও সরকারিভাবে আরো দুই বান্ডিল করে ঢেউটিন প্রদান করা হয়েছে। যাতে তাদের খাদ্য ও বাসস্থান নিশ্চিত হয়।

তাছাড়া সরকারিভাবেও তাদের সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে। আর যারা এই নারকীয় তাণ্ডবে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে আইনগতভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশকে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, চকরিয়া, জমি দখল
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন