বান্দরবানে জঙ্গি আস্তানায় গোলাগুলিতে জহিরের মৃত্যু, কবর থেকে লাশ গায়েব
জঙ্গিবাদে জড়িয়ে বান্দরবানে দুর্গম পাহাড়ে নিহত হয়েছেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর জোহায়ের মোহাম্মদ আবদুর রহমান ওরফে জহির (৩৩)। তার বাবার দাবি, বাড়ি ফিরে আসতে চাওয়ায় জঙ্গিরা তার ছেলেকে হত্যা করেছে। নোয়াখালীর এই যুবক বছর দেড়েক আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন। গত বছরের জুনে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা যান বলে তাঁর সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে তাঁর কবরের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি।
জহির ও তাঁর সঙ্গীরা ছিলেন নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দিল শারক্বীয়ার সদস্য। এ সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তরুণদের উদ্বুদ্ধ করে বান্দরবানে নেওয়া হয়। তাঁরা সেখানে সংগঠনের সদস্যদের পাহাড়ের নতুন সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের আস্তানায় টাকার বিনিময়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। সেখানে জহির ও তাঁর বন্ধু নোয়াখালীর নিজামউদ্দিন ওরফে হিরণ একসঙ্গে গিয়েছিলেন। হিরণসহ পাঁচজনকে ১১ জানুয়ারি র্যাব গ্রেফতার করে।
র্যাব কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, জিজ্ঞাসাবাদে হিরণ জানিয়েছেন, তাঁরা কেএনএফের (কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) যে ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিতেন, সেখানে গত ৬ জুন পাহাড়ের অপর একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামলা চালায়। কেএনএফের সঙ্গে ওই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে নিহত হন জহির।
দুই সন্তানের জনক জহিরের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানার বিজয়নগরে। তাঁর স্ত্রী হাজেরা আক্তার বলেন, ২০২১ সালের আগস্টে তুরস্কে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে চলে যান জহির। তিন মাস পর ইমোতে কল করে জানান, তিনি তুরস্কে আছেন। পরে কয়েক মাস নিয়মিত ফোনে কথা হতো। হঠাৎ যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। কয়েক দিন আগে র্যাব থেকে জানানো হলো, জহির বান্দরবানে মারা গেছেন।
র্যাব জানায়, জঙ্গি দলে জহিরের ছদ্মনাম ছিল ডা. আহমেদ। তাঁর বাবা রফিক উল্লাহ বলেন, ‘কয়েক মাস আগে র্যাব যখন জানাল জহির তুরস্কে নয়, বান্দরবানে আছেন; আমরা অবাক হই। কয়েক দিন আগে র্যাব থেকে মারা যাওয়ার তথ্য জানানোর পর আমরা বান্দরবানে গিয়ে ছবি দেখে ছেলেকে শনাক্ত করি। তবে এখনো ছেলের লাশ পাইনি।’
জহিরের মতোই উগ্রবাদে জড়িয়ে গত বছরের ২৩ আগস্ট একযোগে নিখোঁজ হয়েছিলেন কুমিল্লার সাত তরুণ। পরে তাঁদের কয়েকজন বাড়ি ফিরে আসেন বা গ্রেফতার হন। তাঁদের বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানতে পারে, তাঁরাসহ বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক তরুণ নতুন জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে হিজরতের নামে ঘর ছেড়েছেন। এ সংগঠনই জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দিল শারক্বীয়া। তাঁরা সদস্যদের বান্দরবানে যে আস্তানায় টাকার বিনিময়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন, সেখানে অন্তত ৫৫ জঙ্গি রয়েছেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত অক্টোবরে অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, যা অব্যাহত রয়েছে।
এই জঙ্গি আস্তানায় জহির ছাড়াও কুমিল্লার ওই সাত তরুণের একজন আল আমিনের মৃত্যু হয়েছে। সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব সূত্র জানিয়েছে, আল আমিন অভুক্ত থেকে অসুস্থ হয়ে গত ২৫ নভেম্বর মারা যান। এরপর তাঁকে কম্বল পেঁচিয়ে কবর খুঁড়ে দাফন করা হয়। তাঁর তথ্যের ভিত্তিতে গত রোববার বান্দরবানের রুমা উপজেলার লুয়াংমুয়ালপাড়ায় অভিযান চালানো হয়। সঙ্গে আল আমিনের বাবা মো. নুরুল ইসলামকেও নেওয়া হয়।
নুরুল ইসলাম জানান, রোববার বান্দরবান থেকে হেলিকপ্টারে করে তাঁকে রুমা উপজেলায় নেওয়া হয়। সেখান থেকে হেঁটে গহিন অরণ্যে যেখানে আল আমিনের কবর সেখানে যান। এ সময় ইউএনও, র্যাব, পুলিশ সদস্যরা ছিলেন। এ দলে গ্রেফতার জঙ্গি ইমরান বিন রহমান ওরফে শিথিল ছিলেন। তিনি আল আমিনের কবর দেখিয়ে দেন।
‘কিন্তু কবর খুঁড়ে লাশ পাওয়া যায়নি, কেবল একটি কম্বল পাওয়া গেছে,’ বলেন আল আমিনের বাবা।
এ বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, কবর থেকে কেউ লাশ সরিয়ে ফেলেছে।’