৫নং টংকাবতী ইউনিয়ন পরিষদ

ভবন থাকলেও নেই কোনো কার্যক্রম

fec-image

বান্দরবান সদর উপজেলায় ৫নং টংকাবতী ইউনিয়ন পরিষদের ভবন থাকলেও নেই কোনো কার্যক্রম। পরিষদটি ২০০৬ সালে কোটি টাকার ব্যয়ের ভবনটি নির্মাণ করলেও এখন তা জরাজীর্ণ ও অরক্ষিত। ভবনের চারপাশে তৈরি হয়েছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। শৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করছেন পশু-প্রাণী। ভবনের মাদকাসক্তদের আনাগোনা দেখা গেছে এ ভবনটিকে ঘিরে। জনপ্রতিনিধিদের অবহেলার ফলে পরিষদে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত কয়েক হাজার মানুষ। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই ভবনটি সাধারণ জনগণদের সেবা গ্রহণ সচল করে নাগরিকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করা দাবি জানান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদের ভবন থাকার শর্তেও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সেসব অফিসের কার্যক্রম বান্দরবান শহরে বসে চালাচ্ছেন টংকাবতী ইউপি চেয়ারম্যান মাংয়ং ম্রো প্রদীপ। জন্ম নিবন্ধন থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান সনদপত্রসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা পেতে দুর্গম পথ পাড়ি জমাতে হয় শহরের দিকে। হাতের নাগালে পরিষদ ভবন থাকলেও জনপ্রতিনিধিরা অকেজো ভাবে ফেলে রাখার ফলে সেবা নিতে শহরের আসা-যাওয়া খরচ গুনতে হয় দ্বিগুণ টাকা। এতে যেমন ব্যয়বহুল তেমনি ভোগান্তি মুখে পড়তে হয় দুর্গম বাসিন্দাদের। তাছাড়া অধিকাংশ সময় সনদপত্রে স্বাক্ষর কিংবা বিভিন্ন নাগরিক সেবা পেতে নানা সমস্যা মুখে পড়েন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, টংকাবতী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি বান্দরবান-লামা সড়কের পাশে অবস্থিত। ভবনটি এখন পরিত্যক্ত। নেই কোনো পরিষদের কার্যক্রম।আশপাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ও ভাঙ্গনে মুখে ভবন। ভবনের বিভিন্ন অংশে গজিয়েছে আগাছা। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ঘরের দরজা-জানালা ও ভবনের প্লাস্টার। পাশের ড্রেন ও স্তূপ থেকে জন্ম নিচ্ছে মশা-মাছি। অকেজো ভাবে পড়েছে বাইরে রাখা সোলার প্যানেলও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫নং টংকাবতী ইউনিয়নের ৫২টি গ্রামে প্রায় ছয় হাজার মানুষের বসবাস। সেসব দুর্গম বসবাসকারী নাগরিকদের জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু ও চেয়ারম্যান সনদসহ একমাত্র ভরসা সড়কের পাশের থাকা পরিষদের ভবনটি। কিন্তু হাতের নাগালে ভবন থাকলেও নাগরিক সেবা ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা। জরুরি প্রয়োজনে সেবা নিতে দ্বিগুণ টাকা খরচ করে দুর্গম-পথ পাড়ি দিয়ে শহরে সেবা নিতে আসতে হয় তাদের।

আরও জানা গেছে, পরিষদ ভবনটি সাত থেকে আট বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। মাঝে মধ্যে কোন প্রোগ্রাম থাকলে পরিষদ ভবনটি তালা খোলেন জনপ্রতিনিধিরা। তাছাড়া পশু-প্রাণী ছাড়া চেয়ারম্যান, মেম্বার, মহিলা মেম্বারসহ গ্রাম পুলিশ সদস্যরাও আসেন না পরিষদ ভবনটিতে। নানা অজুহাত দেখিয়ে অকেজো ভাবে ফেলে রেখে বান্দরবান শহরে সার্কিট হাউসের বিপরীতে আবছার ভবনের নীচতলাতে অস্থায়ী ভবন হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যক্রম শুরু করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। সে ভবনে বসে পরিষদের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন ৫নং টংকাবতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাং য়াং ম্রো (প্রদীপ) ও সচিব জাহাঙ্গীরসহ অন্যান্য সদস্যরাও। এতে নানা সমস্যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সেসব ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক টংকাবতী হেডম্যান পাড়া ও রমজু পাড়া বাসিন্দা বলেন, চেয়ারম্যান বলেছে এখনে ইন্টারনেট টাওয়ার আসবে, বিদ্যুৎ আসবে এসব অজুহাত দেখিয়ে বান্দরবানে অফিস করছে। এখানে ভবন থাকলেও মাসের ৩০ দিনই বন্ধ থাকে। আর চেয়ারম্যান নির্বাচন আগে বলেছিল আমি সব কিছু করব, বিদ্যুৎ আসবে সব কিছু আসবে। আর এখন বাড়ির কাছে পরিষদ ভবন থাকলেও যেকোনো সনদ পত্র নিতে দ্বিগুণ টাকা খরচ করে শহরে যেতে হয়। তাহলে ভবন তৈরি করার কি প্রয়োজন ছিল?

এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় ৫নং টংকাবতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাংয়াং ম্রো (প্রদীপ) সাথে। তিনি বলেন, ইন্টারনেট এবং বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় পরিষদের বসে কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে শহরে রুম ভাড়া নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। কিন্তু সব সময় পরিষদ বন্ধ থাকে না বলে অস্বীকার করেন তিনি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন,, পরিষদ ভবন থেকেও কার্যক্রম বন্ধ রাখা বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। সরকার থেকে নির্দেশনা আছে পরিষদের বসে জনপ্রতিনিধিদের কার্যক্রম চালাতে হবে। আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কাছে চিঠি দিয়েছি এবং দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস না হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইউনিয়ন পরিষদ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন