ভূমি কমিশন আইন: পার্বত্যাঞ্চল থেকে বাঙালী উচ্ছেদের হাতিয়ার

ইবনে-রহমত

সৈয়দ ইবনে রহমত

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিরা নতুন করে তাদের ভূমির অধিকার নিশ্চিত করার আন্দোলনে নেমেছে। নানা বিষয়ে ভিন্ন মত থাকলেও বাঙালিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে একত্রিত হয়ে আন্দোলনের যৌথ কর্মসূচিও দিয়েছে। ফলে যেকোন সময় পার্বত্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর এসব কিছু হচ্ছে মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তথা সন্তু লারমার চাহিদা মতো ‘পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১’ সংশোধনের উদ্যোগের কারণে।

গত ১ আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনের যে ১৪টি সংশোধনী অনুমোদন করা হয়েছে তা কার্যকর হলে ভূমি কমিশনের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের হাতে। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদের উচ্ছেদ করার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পেয়ে যাবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা। আর কমিশনকে ব্যবহার করে সন্তু লারমা কোনো বাঙালি পরিবারকে পার্বত্য চট্টগ্রামে তার ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করলেও কোনো আইন-আদালত কিংবা রাষ্ট্রের প্রতিকার করার ক্ষমতা থাকবে না।

ভূমি কমিশন আইনের ১৬ নং অনুচ্ছেদেই বলা আছে যে, ‘ধারা ৬(১)-এ বর্ণিত কোন বিষয়ে দাখিলকৃত আবেদনের উপর কমিশন প্রদত্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ানী আদালতের ডিক্রী বলিয়া গণ্য হইবে, তবে উক্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোন আদালত বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষের নিকট আপীল বা রিভিশন দায়ের বা উহার বৈধতা বা যথার্থতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।’ এ অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত লক্ষ লক্ষ বাঙালি পরিবার তাদের ভিটেমাটি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে।

গত ১ আগস্ট ২০১৬ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০১৬’ চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সংবাদ ব্রিফিং এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাত দিয়ে পরদিন ২ আগস্ট দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের ১৪টি সংশোধনীর অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। আর সংসদ যেহেতু দুই মাস পরে বসবে, তাই জরুরি বিবেচনায় এটাকে অধ্যাদেশ আকারে জারির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ঘোষণা প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই আন্দোলনে উত্তাল হতে শুরু করে পার্বত্য চট্টগ্রাম।

ভূমি কমিশন আইন সংশোধনের ফলে পার্বত্য বাঙালিদের উদ্বেগের মূল কারণটি স্পষ্ট হয়েছে গত ৪ আগস্ট এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে দেওয়া মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীকের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘১৯৮৭ সালে পার্বত্যাঞ্চলের এসব দেশদ্রোহীরা সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছিলো পুরো বাংলাদেশ দু’টি ভাগে ভাগ করার। এক ভাগের নাম বাংলাদেশ যার রাজধানী ঢাকা। আর এক ভাগের নাম হবে জুম্মল্যান্ড যার রাজধানী রাঙাগামাটি। এই দু’টি অংশ মিলে একটি ফেডারেল সরকার হবে। তখন আমরা রাজি হইনি। কিন্তু বর্তমান এই ভূমি আইন বাস্তবায়নের ফলে দেশদ্রোহীদের সেই সপ্ন বাস্তবায়ন হবে।’

ব্যাপারটি আরও ভালোভাবে উপলব্ধির জন্য পার্বত্য ভূমি কমিশন, কমিশন আইন এবং কমিশন আইনের সংশোধনী নিয়ে আলোকপাত করা দরকার। ভূমি কমিশন : পার্বত্যাঞ্চলে ভূমি সমস্যাটি নতুন কোনো বিষয় নয়। এটিই এখানকার সব চেয়ে জটিল সমস্যা। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ভূমিবিরোধ সমস্যা নিষ্পত্তির জন্য একটি ল্যান্ড কমিশন গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ‘ঘ’ খণ্ডের ৪, ৫ ও ৬ ধারা মতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আনোয়ারুল হক চৌধুরীকে ৩ জুন ১৯৯৯ চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ল্যান্ড কমিশন গঠন করে। এরপর তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পূর্বে ২০০১ সালের ৫৩ নং আইন তথা ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১’ পাস করে।

এই আইনটিতেই পার্বত্য বাঙালিদের ভূমির অধিকার খর্ব করার যাবতীয় ব্যবস্থা করা আছে। কিন্তু এতে সন্তু লারমার একক কর্তৃত্ব করার সুযোগ কিছুটা কম থাকায় তিনি নাখোশ হন। তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি আঞ্চলিক পরিষদের মাধ্যমে ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১-এর ব্যাপারে আপত্তি তোলে সংশোধনের দাবি জানায়। তারা তাদের দাবির পক্ষে সরকারের পাসকৃত আইনের ২০টি ধারার বিপরীতে আঞ্চলিক পরিষদের মাধ্যমে প্রথমে ১৯ দফা সুপারিশ প্রেরণ করে। পরবর্তী সময়ে সুপারিশ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩-এ। আঞ্চলিক পরিষদের সুপারিশ সমূহকে উদ্দেশ্য অনুসারে আমরা দুই ভাগে বিভক্ত করতে পারি।

প্রথমত, এমন কিছু সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে এগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভূমির উপর পার্বত্য বাঙালিদের অধিকারকে খর্ব করে উপজাতীয়দের স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ সৃষ্টি করা যায়।

দ্বিতীয়ত, অবশিষ্ট সুপারিশগুলো করা হয়েছে, যাতে ভূমি কমিশনের ওপর থেকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ শিথিল করে আঞ্চলিক পরিষদ তথা জেএসএসের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যায়। বাংলাদেশ সরকারের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ে যেসব সংশোধনী গৃহীত হয়েছে তাতে জেএসএসের উভয়বিধ সিদ্ধান্তই হাসিল হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সভায় বারবার ভূমি কমিশন আইনের সংশোধনী : ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১’ পাসের পর থেকে গত দেড়যুগ ধরে সরকারের নানা পর্যায়ে এ আইন সংশোধন নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। একাধিকবার মন্ত্রিপরিষদ সভাতেও আইনটির সংশোধনী উত্থাপিত হয়েছে, এমনকি উত্থাপিত সংশোধনী পাসের অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।

গত ৩০ জুলাই ২০১২ মন্ত্রিপরিষদ সভা ভূমি কমিশন আইনের ১৩টি সংশোধনী পাসের জন্য অনুমোদন দিয়েছিল, কিন্তু তা কার্যকর করা যায়নি। এরপর ২০১৩ সালের ২৭ মে মন্ত্রিপরিষদ সভা ভূমি কমিশন আইনে আগের গৃহীত ১৩টি থেকে কমিয়ে ৬টি সংশোধনী গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। যা সংসদের মাধ্যমে পাস করার কথা ছিল। কিন্তু সেটিও শেষ পর্যন্ত কার্যকর করা যায়নি। এরপর বেশকিছু দিন নীরব থেকে হঠাৎ করেই ১৪টি সংশোধনী অনুমোদন করেছে মন্ত্রিপরিষদ। আর সংসদ বসতে দুই মাস বিলম্ব থাকায় তড়িগড়ি করে তা অধ্যাদেশ আকারে জারির সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস এবং সংবিধান ও সার্বভৌমত্বের বিবেচনা 

গত ৮ মে ২০১৬ রাজধানীর বেইলী রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণের ভিত্তিফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১’ সংশোধনের আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘২০০১ সালে আমরা যে আইনটা করেছিলাম, সেখানে তারা (পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তথা সন্তু লারমা) কিছু সংশোধন চেয়েছেন। সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে যতটুকু করা সম্ভব, সেটা আমরা করে দেব।’

প্রধানমন্ত্রীর সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে আইন সংশোধনের সেই আশ্বাস এবার মন্ত্রিপরিষদ সভায় কতটা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়া অমূলক হবে না। কারণ এর আগে মন্ত্রিপরিষদ সভায় প্রথম দফায় ১৩টি এবং পরে ৬টি সংশোধনী গৃহীত হওয়ার পরেও সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নেই তা কার্যকর করা যায়নি। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে যে, আগে যেসব সংশোধনী দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে কার্যকর করা যায়নি, কোন বিবেচনায় এবার সেসব সংশোধনী সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে মান উতীর্ণ হয়ে গেল?

তারপরেও কথা থাকে, সংসদ বসতে দুই মাসের বিলম্ব দেখিয়ে তড়িগড়ি করে এটিকে অধ্যাদেশ আকারে জারির সিদ্ধান্তটিও প্রশ্নসাপেক্ষ। ধারণা করা যায়, কোনো একটি পক্ষ দ্রুততার সাথে সংসদকে পাশ কাটিয়ে সব কিছু করে ফেলার ব্যাপারে অতিউৎসাহী মনোভাব দেখাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্যও খতিয়ে দেখা দরকার।

তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলেও যার বা যাদের পরামর্শে তিনি ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১’ সংশোধন করছেন তারা এদেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্বের প্রতি কতটা অনুগত তা নিয়ে ভাবনার অবকাশ আছে।

১৯৯৮ সালের ৬ ডিসেম্বর পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ গঠনের পর ১৯৯৯ সালের ১২ মে সন্তু লারমা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ গ্রহণ করেন। সেই থেকে অদ্যাবধি একই পদে তিনি বহাল আছেন। গাড়িতে পতাকাসহ রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করছেন। অথচ আজ পর্যন্ত তিনি কোনো দিন এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনারে গিয়েছেন বলে শোনা যায় না। তাছাড়া, সন্তু লারমার দল পার্বত্য জনসংহতি সমিতি সংসদ নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিয়মিতই অংশ নেয় এবং তাতে জয় লাভও করে। অথচ দলটির প্রধান সন্তু লারমা আজ পর্যন্ত এদেশের নাগরিকত্বের প্রতীক জাতীয় পরিচয়পত্রটি পর্যন্ত গ্রহণ করতে সম্মত হননি। রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেও এতটা ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ যিনি করতে পারেন, সেই তারই পরামর্শে ‘পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১’ সংশোধন করার পরিণতি কী হতে পারে তা অনুমান করে দেশবাসীর মনে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়াটা কি অমূলক?

ভূমিকমিশন আইনের কিছু সংশোধনী প্রস্তাবের পর্যালোচনা

পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ২০১২ সালে গৃহীত ১৩টি (এবার এর সাথে আরও একটি সংশোধনী যোগ করা হয়েছে) সংশোধনীর মধ্যে ২নং প্রস্তাবে আছে- আইনের (২০০১ সালের ৫৩ নম্বর আইন) তৃতীয় অনুচ্ছেদে ‘পার্বত্য জেলাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য জনসংহতি সমিতির’-এর স্থলে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’ প্রতিস্থাপিত হবে। জেএসএস সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেছিল স্বাধীন জুম্মল্যান্ড প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে। তাদের সেই আকাক্সক্ষা তারা কখনই পরিত্যাগ করেনি। যা বিভিন্ন সময় তাদের বক্তব্য, আচার-আচরণ থেকে প্রমাণিত। সরকারের সাথে চুক্তি করার সময় যেহেতু স্বাধীন দেশের দাবি তোলা অপ্রাসঙ্গিক ছিল, তাই তারা প্রথমে ফেডারেল রাষ্ট্র এবং পরে স্বায়ত্তশাসন দাবি করেছিল।

কিন্তু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় সরকার এ দাবি মেনে না নেয়ায় তারা সংবিধানের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেই চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে। তাই বলে তাদের মনের সুপ্ত আকাঙ্ক্ষার কথা ভুলে যায়নি। সে কারণে পার্বত্য চুক্তির শুরুতেই পার্বত্যাঞ্চলের পরিচয়কে তারা ‘উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল’ হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করে নেয়। আর এর পিছনে উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামো থেকে পার্বত্যাঞ্চলকে পৃথক করে ফেলা। যাতে ধীরে ধীরে এই স্বতন্ত্র পরিচয়টাকেই বড় করে তাদের পুরনো উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে।

পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ই এই বিষয়টির ভবিষ্যৎ পরিণতি সম্পর্কে অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলোকপাত করেছিলেন। কিন্তু সরকার তখন এর প্রতি দৃষ্টিপাত করেনি। বোঝা যায় সরকার এর ভয়াবহতা সম্পর্কে উদাসীন ছিল এবং এখনো উদাসীন আছে। যা ভূমি কমিশন আইনের সংশোধনীর দুই নং প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমেও প্রমাণিত। সরকার উদাসীন থাকলেও জেএসএস তাদের লক্ষ্যে যে অবিচল এখানে সেটাই স্পষ্ট। যার ফলে তারা ‘পার্বত্য জেলা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি’র স্থলে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক জাতীয় কমিটি’ শব্দগুলি প্রতিস্থাপনের দাবি আদায় করেছে। ‘জেলা’ বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর অংশ তাই এই শব্দটি জেএসএস মানতে পারেনি। তাদের প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাঠামোর বাইরে এই অঞ্চলের নতুন একটি পরিচয় প্রতিষ্ঠা করা, তারা সেটি করতে পেরেছে। আর আমাদের সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বুঝেই হোক কিংবা না বুঝেই হোক এই প্রস্তাব গ্রহণ করে জেএসএসের খায়েশ পূরণে সহায়তা করছে।

এই একটি সংশোধনীর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য বুঝতে পারলেই অপর প্রস্তাবগুলোর উদ্দেশ্যও বোঝা সম্ভব। কেননা প্রতিটি প্রস্তাবই এসেছে জেএসএসের কাছ থেকে। আর তারা যে এসব প্রস্তাব তাদের মূল উদ্দেশ্য সামনে রেখেই দিয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সংশোধনীর ৪ এবং ৫নং প্রস্তাব নিম্নরূপ: ৪। ৬ (১) (ক) ধারায় ‘পুনর্বাসিত শরণার্থীদের ভূমিসংক্রান্ত বিরোধ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন ও রীতি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা’-এর স্থলে ‘পুনর্বাসিত শরণার্থীদের জমিজমা বিষয়ক বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তি করা ছাড়াও অবৈধভাবে বন্দোবস্ত ও বেদখল হওয়া জায়গাজমি ও পাহাড়ের মালিকানা স্বত্ব বাতিলকরণসহ সমস্ত ভূমিসংক্রান্ত বিরোধের পাশাপাশি চুক্তির পরিপন্থী নয় এমন সকল বিষয়ে চুক্তির ধারা (ঘ) ৪ মতে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা’ প্রতিস্থাপিত হবে। ৫। ৬ (১) (খ) ধারায় ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন ও রীতি অনুযায়ী’ শব্দাবলির স্থলে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি অনুযায়ী’ হবে।

উপরের দুটি প্রস্তাবে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি অনুযায়ী’ বিরোধ মীমাংসা করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি’ বলতে আসলে কী বোঝায় তার ব্যাখ্যা কি সরকারের কাছে আছে? আমরা আসলে জানি না, তা ছাড়া সরকারের কাছে এর ব্যাখ্যা থাকার কথাও না। কারণ ৪নং প্রস্তাবেই অবৈধ বন্দোবস্ত জমির প্রসঙ্গ এসেছে। এর অর্থ হলো সরকার অবৈধভাবে কাউকে না কাউকে জমি বন্দোবস্ত দিয়েছে! বিষয়টি কি আসলে তাই? রাষ্ট্রের আইনেই বৈধ কিংবা অবৈধতা নির্ধারিত হওয়ার কথা। কিন্তু এখানে দেখছি ভিন্ন বিষয়।

সরকারের কর্মকাণ্ডকে অবৈধ বলে ঘোষণা করারও বিধান আছে! কিন্তু সেই বিধানটি আসলে কী, এর প্রয়োগকারীই বা কারা? আমরা আসলে বোঝতে পারছি না, এর মাধ্যমে সরকার পার্বত্যাঞ্চলের ভূমি বন্দোবস্ত দেয়ার সার্বভৌম ক্ষমতা অন্য কারো হাতে ছেড়ে দিচ্ছে কি না। আর যদি তাই হয় তাহলে এর পরিণতি কী হতে পারে, সংশ্লিষ্টদের তা ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ রইল।

সংশোধনীর ৬নং প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে- ৬ (১) (গ) ধারায় ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইনবহির্ভূতভাবে কোনো বন্দোবস্ত দেয়া হয়ে থাকলে তা বাতিল এবং বন্দোবস্তজনিত কারণে কোনো বৈধ মালিক ভূমি হতে বেদখল হয়ে থাকলে তার দখল পুনর্বহাল’-এর স্থলে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি বহির্ভূতভাবে ফ্রিজল্যান্ড (জলেভাসা জমি)সহ কোনো ভূমি বন্দোবস্ত প্রদান বা বেদখল করা হয়ে থাকলে তা বাতিল এবং বন্দোবস্তজনিত কারণে কোনো বৈধ মালিক ভূমি হতে বেদখল হয়ে থাকলে তার দখল পুনর্বহাল’ প্রতিস্থাপিত হবে।

ধারা ৬(১)(গ) এর শর্তাংশ ‘তবে শর্ত থাকে যে, প্রযোজ্য আইনের অধীনে অধিগ্রহণকৃত ভূমি এবং রক্ষিত বনাঞ্চল, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা, বেতবুনিয়া ভূউপগ্রহ এলাকা, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্পকারখানা ও সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডকৃত ভূমির ক্ষেত্রে এই উপধারা প্রযোজ্য হবে না’ শব্দাবলি বিলুপ্ত হবে। এই সংশোধন প্রস্তাবটির দ্বিতীয় অংশ পার্বত্য চুক্তিতে ছিল। অর্থাৎ শান্তি চুক্তিতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের উপর সরকারের কর্তৃত্ব বহাল রাখা হয়েছিল। কিন্তু এখানে তা বিলুপ্ত করে দেয়া হয়েছে। কারণটা কী? শান্তি চুক্তিতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের উপর সরকারের কর্তৃত্ব বহাল রাখা সম্ভব হলেও আজ কেন তা বহাল রাখা সম্ভব হচ্ছে না?

বর্তমানে এমনকি পরিবেশ তৈরি হলো, তার ব্যাখ্যা সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা দরকার। কেননা রাষ্ট্রীয় সম্পদের মালিক শুধু সরকার নয়, মূল মালিক এই দেশের ১৬ কোটি জনগণ। অতএব, তাদের সম্পদ অন্যকারো হাতে ছেড়ে দেয়ার ব্যাখ্যা জানার অধিকার দেশের জনগণের আছে। ৯নং প্রস্তাবে বলা হয়েছে- ৭(৫) ধারায় ‘চেয়ারম্যান উপস্থিত অন্যান্য সদস্যদের সহিত আলোচনার ভিত্তিতে ৬(১) বর্ণিত বিষয়াদিসহ এর এখতিয়ারভুক্ত অন্যান্য বিষয়ে সর্বসম্মতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, তবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব না হলে চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই কমিশনের সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হবে’-এর স্থলে ‘চেয়ারম্যান উপস্থিত অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ৬(১)-এ বর্ণিত বিষয়াদিসহ এর এখতিয়ারভুক্ত অন্যান্য বিষয়ে সর্বসম্মতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, তবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব না হলে চেয়ারম্যানসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের গৃহীত সিদ্ধান্তই কমিশনের সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হবে’-শব্দাবলি প্রতিস্থাপিত হবে।

এ প্রস্তাবে কমিশনের চেয়ারম্যানের ক্ষমতাকে খর্ব করে উপজাতীয় নেতৃবৃন্দের স্বেচ্ছাচারিতার নিকট ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কারণ চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনকে নিয়ে কমিশন। ১. সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসর প্রাপ্ত বিচারপতি (চেয়ারম্যান), যিনি বর্তমানে একজন বাঙালি হলেও ভবিষ্যতে উপজাতীয় বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সদস্য হওয়া সম্ভব। ২. আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান বা তার প্রতিনিধি (অবশ্যই উপজাতীয় তথা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির হবেন)। ৩. সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান (অবশ্যই উপজাতীয় তথা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির হবেন)। ৪. সংশ্লিষ্ট সার্কেল চিফ (অবশ্যই উপজাতীয় তথা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির হবেন)। এবং ৫. চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বা তার মনোনীত একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (যিনি উপজাতীয় তথা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির হওয়া খুব সম্ভব)। এই যখন কমিশনের অবস্থা তখন অধিকাংশের মতামত কোন দিকে যাবে- এটা কি সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ভেবে দেখেছেন?

১১নং প্রস্তাবে বলা হয়েছে- ধারা ১০(৩)-এর পরে নতুন উপধারা ১০(৪) নিম্নবর্ণিতভাবে সন্নিবেশিত হবে: ‘(৪) কমিশন কর্তৃক আবেদন নিষ্পত্তির পূর্বে যে কোনো সময় ন্যায়বিচারের স্বার্থে আবেদনকারী তার আবেদন সংশোধন করতে পারবেন’ এ সংশোধনীর মর্মার্থ হলো, ইতিপূর্বে দেখা গেছে ভূমি কমিশনে উপজাতীয়রা যেসব আবেদন করেছে তার অধিকাংশই ভিত্তিহীন এবং অযৌক্তিক। তাই সেসব বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু ন্যায় বিচারের স্বার্থে বলা হলেও উপজাতীয় নেতৃবৃন্দের মূল উদ্দেশ্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি নয়, বরং কলেকৌশলে বাঙালিদের ভূমি হস্তগত করা। তাই কোনো ভূমিকে নিজের বলে দাবি করার পর তা আইনগত কারণে বাতিল হয়ে গেলে সেই জমি নিয়ে নতুন করে তালবাহানা করে বাঙালিদের হেনস্থা করার সুযোগ থাকে না। সেকারণেই উপরের সংশোধনীটি নেওয়া হয়েছে যাতে, যখনই কোনো আবেদন বাতিল হয়ে যাবে বলে মনে হবে, তখনই যেন তা আবার নতুন আবেদন করে বিষয়টি জিইয়ে রাখা যায় এবং শেষ পর্যন্ত কমিশনকে ব্যবহার করে জমিটি হস্তগত করা যায়।

১২নং প্রস্তাবে বলা হয়েছে- ধারা ১৩(২)-এর পরে নতুন উপধারা ১৩(৩) নিম্নবর্ণিতভাবে সন্নিবেশিত হবে: ‘১৩(৩) এই ধারার অধীন কমিশনের সচিব এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে পার্বত্য জেলায় উপজাতীয়দের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা হবে’। ভূমিকমিশনের অধিকাংশ সদস্য উপজাতীয়, অন্যদিকে পার্বত্য বাঙালিদের পক্ষ থেকে কোনো সদস্য সেখানে নেই। তার উপর কমিশনের সকল পর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা, কর্মচারীও যদি উপজাতীয় হন তাহলে সেই কমিশন থেকে পার্বত্য বাঙালিরা সুবিচার আশা করতে পারে-এটা কি ভাবা যায়? যারা বিশ্বাস করেন পার্বত্যাঞ্চলে বাংলাদেশ সরকারের কর্তৃত্ব বা সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার নেই এবং সেখানে বসবাসের অধিকার বাঙালিদের নেই, সেই উপজাতীয় নেতৃবৃন্দের কর্তৃত্বাধীন ভূমিকমিশন বাঙালিদের উপর সুবিচার করবে এটা কি সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বিশ্বাস করেন?

বাঙালিদের ভূমি এবং ভোটাধিকার হরণ

পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ৪নং ধারার ২নং উপধারায় বলা হয়েছে, ‘চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যগণ জনসাধারণ কর্তৃক প্রত্যক্ষভাবে এই আইন ও বিধি অনুযায়ী নির্বাচিত হইবেন।’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ভোটার তালিকা প্রয়োজন। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু ভোটার তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে যাতে জটিলতা সৃষ্টি করা যায়, সম্ভবত সেই উদ্দেশ্যই পার্বত্য চুক্তির ‘খ’ খণ্ডের ৯নং ধারার ৪নং উপ-ধারায় কোনো ব্যক্তির ভোটার হওয়ার ব্যাপারে একটি বিতর্কিত এবং সংবিধান পরিপন্থী শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ওই উপধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি তিনি পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হন।’ যা পরে ১৯৯৮ সালে জেলা পরিষদ আইনসমূহ সংশোধন করে ১৭নং ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আবার অ-উপজাতীয়দের ক্ষেত্রে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার শর্ত জুড়ে দিয়ে পার্বত্য চুক্তির ‘খ’ খণ্ডের ৩নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘অ-উপজাতীয় স্থায়ী বাসিন্দা বলিতে- যিনি উপজাতীয় নহেন এবং যাহার পার্বত্য জেলায় বৈধ জায়গা জমি আছে এবং যিনি পার্বত্য জেলায় সুনির্দিষ্ট ঠিকানায় সাধারণত বসবাস করেন তাহাকে বুঝাইবে।’ অর্থাৎ পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত বাঙালিদের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে ভোটার হতে হলে বৈধ জমির মালিক হতে হবে।

কিন্তু বাঙালিরা যাতে বৈধ জায়গা সম্পত্তির মালিক হতে না পারে সে জন্যও সকল পদক্ষেপ নিয়ে রাখা হয়েছে। যেমন- খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিক্রয় বা অন্যান্যভাবে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে জেলা পরিষদকে অবহিত করে বা জেলা পরিষদের অনুমতি নেয়াকে শর্ত করে দেয়ায় বাঙালিদের ভূমির মালিক হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে।

অন্যদিকে ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তিকল্পে গঠিত ল্যান্ড কমিশনকে অকার্যকর করে রাখার জন্য আঞ্চলিক পরিষদ বিভিন্ন অযৌক্তিক দাবি দিয়ে রেখেছে। আসলে ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের উদ্দেশ্য সরকারে নিকট যাই থাকুক উপজাতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে এর উদ্দেশ্য পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত বাঙালিদের ভূমিহীন করা। কেননা পার্বত্য বাঙালিদের ভূমিহীন করতে পারলে সংবিধান পরিপন্থীভাবে (পার্বত্য জেলা পষিদ আইনের ক্ষমতা বলে) তাদের ভোটাধিকার হরণ করা যাবে। আর সেটা সম্ভব হলে বাঙালিরা পার্বত্যাঞ্চলে ভূমির অধিকার, ভোটাধিকার হারিয়ে এক সময় হতাশ হতে বাধ্য হবে। আর মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এসব মানুষ হয়তো পার্বত্যাঞ্চল ছেড়ে যেতে শুরু করবে। ক্রমান্বয়ে বাঙালির সংখ্যা কমতে থাকলে তারা পার্বত্যাঞ্চলে জাতিসংঘের উপস্থিতিতে পূর্বতিমূরের মতো স্বাধীনতার দাবিতে গণভোটের আয়োজন করবেন। সে ভোটের ফলাফল কোন দিকে যাবে তা-তো আগেই থেকেই নির্ধারণ করা থাকছে। অতএব, পরিণতিটা সহজেই অনুমেয়।

সরকারি কর্তাব্যক্তিরা চাকরি রক্ষার্থে যত গালভরা যুক্তিই দেখাক না কেন, ভূমি কমিশন আইন সংশোধন, আদিবাসী স্বীকৃতি আদায়, জেলা পরিষদের মাধ্যমে পুলিশের উপর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের প্রচেষ্টাসহ পার্বত্যাঞ্চলের উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ প্রতিটি পদেক্ষেপই নিচ্ছে সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই। ভূমিকমিশন আইন সংশোধনীর প্রতিটি প্রস্তাবই তাদের সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্যই আনা হয়েছে। এবার যেসব সংশোধনী মন্ত্রিপরষদের সভা অনুমোদন করা হয়েছে তা কার্যকর হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের হাতিয়ার তুলে দেওয়া হবে সন্তু লারমার হাতেই। এখন সরকার যদি এসব বুঝতে অপারগ হয় তাহলে এর দায় শুধু তাদের ওপর বর্তাবে তা নয়, বরং এদেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিককেই ভবিষ্যতের কাঠগড়ায় এর খেসারত দিতে হবে।

অতএব, সময় থাকতেই পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভাবতে হবে সরকারকে, ভাবতে হবে সচেতন দেশবাসীকেও।

লেখক : সাংবাদিক ও গবেষক

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন