মিয়ানমারের সামরিক ব্যাংকের সাথে আর কোনো লেনদেন করবে না ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন
বিশ্বের নেতৃস্থানীয় অর্থ ট্রান্সফারকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন ব্যাংকের সাথে লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সাথে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যে ‘ডার্টি লিস্ট’ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল এই ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন। দুটো অধিকার গ্রুপ – বার্মা ক্যাম্পেইন ইউকে এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন ফর দ্য রোহিঙ্গা – ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ওই তালিকা প্রকাশ করেছিল।
বার্মা ক্যাম্পেইন ইউকেকে বুধবার এক ইমেইলে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন জানিয়েছে যে, তারা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন মিয়াওয়াদ্দি ব্যাংকের সাথে চুক্তি শেষ করেছে, যেটা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। অধিকার গ্রুপটি এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
মন্তব্যের জন্য চেষ্টা করেও ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। কিন্তু মিয়াওয়াদ্দি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা আনাদোলু এজেন্সিকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা আনাদোলু এজেন্সিকে জানান যে, “আমাদের ব্যাংক থেকে আর ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের সেবা পাওয়া যাবে না। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নই এই চুক্তি বাতিল করেছে”।
অধিকার গ্রুপটি জানিয়েছে, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নকে এখন ডার্টি লিস্ট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
বার্মা ক্যাম্পেইন ইউকের পরিচালক মার্ক ফার্মেনার বলেন যে, সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানির সাথে ব্যবসায় বন্ধকারী এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হলো ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন।
তিনি ইমেইলে আনাদোলু এজেন্সিকে জানান, “এই পদক্ষেপ অন্যান্য কোম্পানিগুলোর উপর চাপ বাড়াবে যাতে তারাও সামরিক বাহিনীর সাথে ব্যবসায় বন্ধ করে”।
তিনি আরও বলেন, “যে সব কোম্পানি সামরিক বাহিনীর সাথে ব্যবসায় করছে, তারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য তাদেরকে সহায়তা করছে”।
নির্যাতিত জনগোষ্ঠি
বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠি হিসেবে পরিচিত রোহিঙ্গারা ২০১২ সালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় কয়েক ডজন মানুষ নিহতের পর থেকে সবসময় আতঙ্কের মধ্যে বাস করে আসছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর সামরিক বাহিনীর বর্বর নিধন অভিযান থেকে প্রাণ বাঁচাতে নারী শিশুসহ ৭৫০,০০০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এই নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১.২ মিলিয়নের উপরে চলে গেছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী প্রায় ২৪,০০০ রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করেছে। অন্টারিও ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট এজেন্সি (ওআইডিএ) তাদের এক রিপোর্টে এ তথ্য জানিয়েছে।