রাত পোহালেই পাকিস্তানে নির্বাচন

fec-image

১৬ তম পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরুর জন্য ২৪ ঘণ্টারও কম সময় রয়েছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) হাতে। আজ বুধবার রাত পেরিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পাকিস্তানের ৪ প্রদেশ ও ৩ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে একযোগে শুরু হবে ভোটগ্রহণ।

৮ লাখ ৮১ হাজার ৯১৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশ পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যা ২৪ কোটি ১০ লাখ। ইসিপির নথি অনুযায়ী, মোট এই জনসংখ্যার মধ্যে ভোটারের সংখ্যা অর্ধেকের কিছু বেশি— ১২ কোটি ৮০ লাখ। তাদের একটি বিশাল অংশ আগামীকাল ভোট দেবেন।

দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী পাকিস্তান গত কয়েক বছর ধরে ভয়াবহ অর্থসংকটে ভুগছে। ডলারের বিপরীতে রুপির টানা অবনমন, বিদ্যুৎ সংকট, বেকারত্ব, জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যের অসহনীয় ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ জনগণের।

বিগত কয়েক দশকজুড়ে জঙ্গি তৎপরতা ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করছে পাকিস্তান। প্রায় দু’দশক আগে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধও ঘোষণা করেছে দেশটি। কিন্তু তারপরও করোনা মহামারির পর থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার হিড়িক পড়েছে। পাকিস্তানের সামরিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, শুধু ২০২৩ সালে সন্ত্রাসীদের বোমা ও বন্দুক হামলায় যত সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তা গত এক দশকের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।

চারটি দেশের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে পাকিস্তানের—ভারত, আফগানিস্তান, ইরান এবং চীন। কিন্তু গত কয়েক বছরে এক চীন ব্যতীত অন্য তিনটি দেশের সঙ্গে তিক্ততা বেড়েছে পাকিস্তানের। শিগগির সেই তিক্ততা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।

ইত্যাদি নানা কারণে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পাকিস্তানে উত্তেজনা-উৎসবমুখর পরিবেশ থাকার কথা ছিল, স্বাভাবিকভাবেই তা অনেকটা ফিকে। দেশটির শীর্ষ জাতীয় দৈনিক ডন বুধবার তাদের সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ‘অর্ধনৈতিক অস্থিতিশীলথা ইস্যুতে প্রধান ৩টি দলের কোনোটিই এখন পর্যন্ত কোনো দিশা দেখাতে পারেনি। সবাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সমস্যার কথা বলছে, কিন্তু কোনো দলের নির্বাচনী ইশতেহারে এটি পরিলক্ষিত হয়নি যে কীভাবে এসব সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।’

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক সংস্থা ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিসের জ্যেষ্ঠ গবেষক আসফানদিয়ার মির রয়টার্সকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ইরান ও আফগানিস্তান সীমান্ত এলাকাগুলোতে ঘন ঘন অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে, সহিংসতা হচ্ছে। এই সংকট কাটানোর জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তানীতি; কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে এ ইস্যুতে কিছু দেখা যায়নি।’

কিন্তু এই দিশাহীন পরিস্থিতির মধ্যেও একটি চাপা উত্তেজনা কাজ করছে পাকিস্তানজুড়ে। আর সেই উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছেন দেশটির দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী— নওয়াজ শরিফ এবং ইমরান খান।

এক সময় দুর্নীতির দায়ে রাজনীতিতে আজীবন নিষেধাজ্ঞার দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত নওয়াজ শরিফ লন্ডন ও দুবাইয়ে চার বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে গত ২০২৩ সালের শেষের দিকে দেশে ফিরেছেন। নির্বাচনী নিষেধজ্ঞা কাটাতে সক্ষম হয়েছেন এবং এবারের নির্বাচনে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের একটি আসন থেকে নির্বাচনে প্রার্থিতাও করছেন।

আর তিনি দেশে ফেরার কয়েক মাস আগে কারাগারে গেছেন ইমরান খান। রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁস (সাইফার) এবং তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে যথাক্রমে ১০ ও ১৪ বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। এই নির্বাচনে প্রার্থিতা করতে পারছেন না তিনি। তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) যেসব প্রার্থী এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাদেরকে দলের নির্বাচনী প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন ও আদালত। ফলে নিজেদের বড় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রার্থীদের তুলনায় বেশ বেকায়দায় আছেন পিটিআই প্রার্থীরা।

কিন্তু তারপরও নির্বাচন নিয়ে পাকিস্তানে যতখানি উত্তেজনা রয়েছে— তার মূল অবদান এই দু’টি দলের। এবং অসম হলেও প্রকৃত লড়াই হচ্ছে পিএমএলএন এবং পিটিআইয়ের প্রার্থীদের মধ্যে। একদিকে পিএমএলএন পাকিস্তানের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল এবং অন্যদিকে পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইমরান খান পাকিস্তানের শীর্ষ জনপ্রিয় নেতা।

পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং বর্তমানে ওয়াশিংটনের হাডসন ইনস্টিটিউটের গবেষক হুসাইন হাক্কানি বলেন, ‘এই নির্বাচন থেকে আসলে ভবিষ্যতের কোনো দিশা পাওয়ার আশা খুবই ক্ষীণ। কারণ নামে নির্বাচন হলেও এটি াআসলে দুই রাজনৈতিক নেতার মধ্যকার লড়াই।

সূত্র : রয়টার্স

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইমরান খান, নির্বাচন, পাকিস্তান
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন